বিধিনিষেধ শিথিল করার পর পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র খুলে দেওয়া হলেও মিরপুরের জাতীয় চিড়িখানা আপাতত বন্ধই থাকছে। প্রাণীদের নিরাপত্তায় স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে আগামী মাসের শুরুর দিকে চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
Advertisement
এ অবস্থায় আজ (বৃহস্পতিবার) অনেককেই দূরদূরান্ত থেকে পরিবারসহ জাতীয় চিড়িয়াখানায় এসে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে দেখা গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিনোদনকেন্দ্র খোলার খবরে অনেকেই পরিবার নিয়ে চিড়িয়াখানায় এসেছেন। তবে তাদের সবাইকেই হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ছোট দুই ছেলেমেয়ে ও স্ত্রীসহ চিড়িয়াখানায় এসেছিলেন আলী হাসান। চিড়িয়াখানার গেটে এসে ভাড়া পরিশোধ করার সময় বন্ধের সংবাদ শুনে হতাশ হয়ে পড়েন।
Advertisement
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘করোনার কারণে অনেক দিন ধরে বাচ্চাদের বের হওয়া হয় না। স্কুল বন্ধ, সারাদিন ওরা বাসায় থাকে। বিনোদনকেন্দ্র খোলার সংবাদ শুনে চিড়িয়াখানায় এসেছিলাম। এখানে এসে দেখি বন্ধ। এখন বাসায় ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
গুলশান থেকে ১২ বছরের উর্মিকে নিয়ে মা শাহানা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা চিড়িয়াখানায় বেড়াতে এসেছেন। এসে বন্ধ পেয়ে মন খারাপ করে সকলে চলে যাচ্ছিলেন।
এ সময় শাহানার সঙ্গে কথা হলে বলেন, ‘অনেকদিন ধরে মেয়েটা চিড়িয়াখানা দেখতে বায়না ধরেছে। এ জন্য গতকাল ভোলা থেকে ঢাকায় এসেছে। আজ সকালে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বেড়াতে এসে দেখি, বন্ধ। কবে খুলে তাও কেউ বলতে পারছে না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জাতীয় চিড়িয়াখানা অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রের চাইতে আলাদা। এখানে জীবন্ত প্রাণী রয়েছে যাদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। একটি আক্রান্ত হলে তা অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এ জন্য ঝুঁকি এড়াতে এখনো দর্শনার্থী প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।’
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রানীদের ঝুঁকি এড়াতে জাতীয় চিড়িয়াখানায় বিশেষ কিছু প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। প্রস্তুতি শেষে খোলা হলে দর্শনার্থীদের প্রবেশের গেটে তিন ফিট দূরত্বে একটি লাল বৃত্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে। সকলকে মাস্ক পরে প্রবেশ করে ভেতরে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ঘোরাফেরা করতে হবে।
তারা আরও জানান, চিড়িয়াখানার বিভিন্ন স্থানে দর্শনার্থীদের জন্য ১২টি স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও পানির ব্যবস্থা করা হবে। ভেতরে দর্শনার্থীদের জন্য একমুখী রাস্তা তৈরি করা হবে। বিধিনিষেধ মানতে সার্বক্ষণিক মাইকিং করে সর্তক করা হবে। প্রাণীদের সামনে আরও নিরাপত্তা বাড়ানো হবে। অনেক স্থানে ময়লা জমে গেছে, সেগুলো পরিচ্ছন্ন করা হবে। এছাড়া প্রাণীদের সেডগুলো সংস্কার করা হচ্ছে।
কবে নাগাদ জাতীয় চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে জানতে চাইলে পরিচালক ডা. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমাদের এখানে সাধারণ সময়ে প্রতিদিন ১০-১২ হাজার দর্শনাথী আসেন। ছুটির দিনে ১৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। প্রস্তুতি নিয়ে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমাদের প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগামী মাসের শুরু থেকে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে। সিদ্ধান্ত হলে গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে দেয়া হবে।’
এমএইচএম/এমএইচআর/এমকেএইচ