গর্ভাবস্থায় অনেকেই আগাম বলে দেন সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে! বিশেষ করে বয়স্করা প্রচলিত কিছু ধারণার মাধমে গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে তা বিবেচনা করে থাকেন।
Advertisement
তবে এ অনুমানের কোনো রকম সত্যতা কিংবা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে কিনা তা নিয়ে আমরা কেউই মাথায় না; বরং প্রচলিত এসব ধারণা মেনে অনেকেই হতাশায় পড়ে যান।
বিজ্ঞানের মতে, যে মুহুর্তে শুক্রাণুর সঙ্গে ডিম্বাণু মিলে যায়; তখনই গর্ভের শিশু বাবা মায়ের শরীর থেকে ২৩টি করে ক্রোমোজোম পায়। লিঙ্গ, চোখের মণির রং, চুলের রঙের মতো কিছু বৈশিষ্ঠ্য তখনই নির্ধারণ হয়।
শিশুর যৌনাঙ্গ অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার ১১ সপ্তাহের মাথায় তৈরি হওয়া শুরু হয়। তখনও কিছু বলা যায় না। আরও বেশ কিছুটা সময় না গেলে আলট্রাসাউন্ড পরীক্ষার মাধ্যমেও বোঝা সম্ভব নয়, শিশুটি ছেলে না মেয়ে।
Advertisement
তবে সমাজে প্রচলিত কিছু ধারণা আছে, যা দেখে বয়স্করা বলে থাকেন গর্ভের সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এসব প্রচলিত ধারণার আদৌ কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা আছে কি না-
বমির ধরন দেখে
বলা হয়ে থাকে, যদি কোনো অন্তঃসত্ত্বা নারীর যদি ‘মর্নিং সিকনেস’ বা বমির প্রবণতা বেশি হয়; তার অর্থ গর্ভে কন্যা সন্তান বেড়ে উঠছে। কন্যা সন্তান হলে শরীরে হরমোনের ক্ষরণ বেশি হয়।
এ কারণেই গর্ভে কন্যা সন্তান থাকলে হবু-মায়েরা বেশি বমি করেন। ‘দ্য ল্যানসেট’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটিই জানা গেছে। যা বয়স্কদের ধারণার সঙ্গে কিছুটা মিলে যায়।
Advertisement
ত্বকের উজ্জ্বলতা দেখে
গর্ভে যদি কন্যাসন্তান বেড়ে উঠতে থাকে; তাহলে না কি মায়ের চেহারার সৌন্দর্য কমতে শুরু করে। তাই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় যদি কারও চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়; তাহলে তার মেয়ে হবে ধরে নেন অনেকেই।
অন্যদিকে গর্ভে ছেলে সন্তান থাকলে হবু মায়ের চেহারা আরও উজ্জ্বল হয়। অনেকেই বলে থাকেন, ছেলে হলে মায়ের চুল লম্বা হয় আর মেয়ে হলে চুল পড়ে যায়। যদিও এ ধারণার বৈজ্ঞানিক কোনো প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
মায়ের খাওয়ার প্রবণতা
বয়স্করা গর্ভবতী নারীর খাওয়ার প্রবণতা দেখেও টের পান সন্তান ছেলে না মেয়ে হবে। এ নিয়ে ধারণা আছে, ছেলে হলে না কি হবু মায়েদের নোনতা খাবার বা আচার খাওয়ার ইচ্ছে বেশি হয়।
অন্যদিকে মেয়ে হলে মিষ্টি খাওয়ার প্রবণতা বাড়ে মায়েদের। তবে মায়ের খাওয়ার পছন্দ অপছন্দের সঙ্গে শিশুর লিঙ্গের কোনো যোগ আছে কি না, তা নিয়ে এখনও কোনো গবেষণা হয়নি। তাই এ বিষয়ের কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই।
মেজাজ পরিবর্তন
হবু মায়ের মেজাজ যদি ঘন ঘন পরিবর্তন হয়; তাহলে ধারণা করা হয় গর্ভে কন্যাসন্তান আছে। যদিও এ ধারণার পেছনেও নেই কোনো বৈজ্ঞানিক সত্যতা। গর্ভাবস্থায় সব নারীর শরীরেই হরমোনাল পরিবর্তন আসে। এর ফলে কারও কারও ক্ষেত্রে খুব দ্রুত মুড সুইং হতে পারে। এটি একেবারেই সাধারণ একটি বিষয়।
গর্ভের সন্তানের হার্ট রেট
আল্ট্রাসাউন্ডের মাধ্যমেও প্রথম দিকে সন্তানের লিঙ্গ জানা যায় না। তবে জনপ্রিয় এক বিশ্বাস অনুযায়ী, ১৪০ এর মতো সন্তানের হার্ট রেট হলে ছেলে এবং তার বেশি হলে মেয়ে। তবে এ ধারণাটিও ভুল।
কারণ এ বিষয়ে ‘ফিটাল ডায়াগনোসিস অ্যান্ড থেরাপি’তে প্রকাশিত হয়েছে এক গবেষণাপত্র। সেখানে উল্লেখিত তথ্য অনুযায়ী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ছেলে বা মেয়ের হার্ট রেটে খুব একটা পার্থক্য বোঝা সম্ভব নয়।
মায়ের পেটের আকার
গর্ভাবস্থায় যদি হবু মায়ের পেট ঝুলে যায়; তাহলে না কি ছেলে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আর যদি এমন না হয় তাহলে মেয়ে। তবে বিজ্ঞান বলছে, হবু মায়েদের গর্ভের আকার নির্ভর করে তার শারীরিক গঠন এবং ভ্রুণের আকারের উপর। সন্তানের লিঙ্গের উপর মায়ের পেটের অবস্থা নির্ভর করে না। তাই এই ধারণারও বৈজ্ঞানিক সত্যতা নেই।
গর্ভের সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে, সেই কৌতূহল সবার মধ্যেই থাকে। তাই মানুষের কথা শুনে সন্তান ছেলে হবে না মেয়ে তা নিয়ে মাথা না ঘামানোই উচিত। বিশেষ করে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এ ধরনের গুজব সর্বদা উড়ে বেড়াচ্ছে।
এর ফলে অনেকেই সেগুলো দেখে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। যা হবু মায়ের স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। সবসময় চেষ্টা করুন সন্তান যেন সুস্থ অবস্থা পৃথিবীর আলো দেখতে পারে। এজন্য গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করুন এবং সচেতন থাকুন।
সূত্র: হেলথলাইন/ওয়েবএমডি
জেএমএস/জিকেএস