এক সময় গ্রামীণ জনপদের মানুষ গৃহস্থালি, কৃষি ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বেত ও বাঁশের তৈরি সরঞ্জামাদি ব্যবহার করলেও এখন সেখানে জায়গা করে নিয়েছে প্লাস্টিক। আধুনিক জীবনযাত্রায় যেন অস্তিত্ব নেই বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি জিনিসের। বরগুনার বেতাগীতেও এই শিল্পের কদর আর চাহিদা দুটোই কমেছে। ক্ষুদ্র বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িত অনেকেই পূর্ব পুরুষের রেখে যাওয়া আদি পেশা বদল করে হয়েছেন ভ্যান চালক। কেউবা আবার জড়িয়েছেন কৃষি কাজে।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক যুগ আগেও উপজেলার চার শতাধিক পরিবার বাঁশ-বেত দিয়ে গৃহস্থালি ও শৌখিন নানা পণ্য তৈরির কাজ করতেন। বাড়ির আশপাশের ঝাড় থেকে তরতাজা বাঁশ-বেত কেটে গৃহিণীরা তৈরি করতেন হরেক রকম পণ্য। এসব বিক্রি করেই চলতো সংসার। তবে বর্তমানে মাত্র ৪০টি পরিবার এই শিল্পটি ধরে রেখেছেন।
সাপ্তাহিক হাটের দিন পৌরবাজারে বাঁশ-বেত দিয়ে তৈরি জিনিসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেন প্রদীপ চন্দ্র। তিনি বলেন, এই দুর্দিনে উপজেলায় হাতে গোনা কিছু সংখ্যক পরিবার বেতশিল্পকে আঁকড়ে ধরে আছেন। অনেকে এ পেশা বদলে অন্যপেশায় গেলেও পূর্বপুরুষের এই পেশাকে ছাড়তে পারেননি গুটিকয়েক মানুষ। পণ্য নিয়ে পৌরবাজারসহ গ্রাম-গঞ্জে ঘোরাফেরা করলে কিছু শৌখিন মানুষ শখ করে তাদের পণ্য কেনেন। বেলা শেষে যা বিক্রি হয় তা দিয়ে তরিতরকারি কিনে বাড়ি ফেরেন তারা।
সদর ইউনিয়নের বাসণ্ডা গ্রামের বাঁশ-বেত শিল্পের কারিগর রিপন মালি বলেন, বাঁশের তৈরি জিনিসের স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের জিনিসপত্র। দাম বেশি হলেও টেকসই হওয়ায় গ্রামের সাধারণ মানুষ অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিকের জিনিসপত্র ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
Advertisement
দেবী রানী নামে আরেক নারী কারিগর বলেন, ঐতিহ্যবাহী এই বাঁশ শিল্প টিকিয়ে রাখতে ধার-দেনা করে ও বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে কোনরকমে টিকে আছি। অল্প লাভে ঋণ দেয়া হলে এই শিল্পটি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
উপজেলার হোসনাবাদ এলাকার তপন হাওলাদার কয়েক বছর হলো পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়ে এখন দিন মজুরি করছেন। তিনি বলেন, বাঁশ-বেত শিল্পে টাকা বিনিয়োগ করে খুব একটা লাভ হতো না। এখন গায়ে খেটে কাজ করি, দিন শেষে তিন থেকে চারশ টাকা রোজগার হয়। পরিবার নিয়ে খেয়ে পড়ে চলছি। যেদিন কাজ না থাকে সেদিন অনেক কষ্ট হলেও আগের চেয়ে ভালো আছি।
বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্প নিয়ে যারা কাজ করছেন তাদের যেন সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ দেয়া যায় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এফআরএম/জিকেএস
Advertisement