দেশজুড়ে

খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট, নিরসনে একাধিক প্রকল্প

বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী খুলনার তিন উপজেলাসহ জেলার সবকটি উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। সংকট নিরসনে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা নানা প্রকল্প নিলেও লবণাক্ততার কাছে হার মেনেছে।

Advertisement

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে খুলনার কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটাসহ প্রায় সব উপজেলার নদ-নদীর সংযোগ রয়েছে। ফলে সাগরের নোনাপানি সরাসরি উপজেলাগুলোতে পৌঁছে যাচ্ছে। এতে কোনো প্রকল্পই সফলতার মুখ দেখেনি এখনো।

খুলনা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকমল হোসেন জানান, খুলনার ৯ উপজেলার ৬৭ ইউনিয়নে এক হাজার ৭৪২টি ওয়াটার পয়েন্ট ও ১৬২ রিজার্ভার তৈরির প্রকল্প চলমান রয়েছে। ধাপে ধাপে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে। এছাড়া কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপে ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতরের তথ্যানুযায়ী, লবণাক্ততা কাটাতে উপকূলীয় উপজেলাগুলোতে ৩০০-১২০০ ফুটের মধ্যে গভীর নলকূপ স্থাপন করতে হয়। কিন্তু দেশের উত্তরাঞ্চলে ৩০০-৪০০ ফুটের মধ্যে গভীর নলকূপ বসালেই সুপেয় পানি পাওয়া যায়। কিন্তু দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় ৭০০-১২০০ ফুটের নলকূপ স্থাপন করেও অনেক সময় কোনো উপকারই হয় না। অনেক এলাকায় গভীর নলকূপ স্থাপনও করা যায় না।

ফলে খুলনার কয়রা পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, ডুমুরিয়ার বিভিন্ন গ্রামে বছরের বেশির ভাগ সময় সুপেয় পানির সঙ্কট লেগেই থাকে। মহিলা ও শিশুরা মাইলের পর মাইল পথ পাড়ি দেন শুধু এক কলস পানির জন্য। তারা সেই সুপেয় পানি সংগ্রহ করেন গ্রামের বিভিন্ন পুকুর থেকে।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য সুপেয় পানি সরবরাহের দুইটি প্রকল্প চলমান। ধাপে ধাপে চলমান প্রকল্পের প্রথম ধাপে ‘ওয়াটার পয়েন্ট’ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে পাইপলাইন স্থাপন ও রিজার্ভার স্থাপনের কাজ চলমান। এজন্য উপজেলা পর্যায় থেকে তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি ৫০ পরিবারের জন্য একটি পানির উৎস স্থাপন, ভূ-উপরিভাগের পানি যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রকল্প গ্রহণ করেছে।

জনস্বাস্থ্যের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আকমল হোসেন বলেন, প্রকল্পের আওতায় ৬৭ ইউনিয়নের প্রতিটিতে ২৬টি করে ওয়াটার পয়েন্ট ও প্রতিটি উপজেলায় ১৮টি করে ওয়াটার রিজার্ভার স্থাপন করা হবে। প্রাথমিকভাবে সার্ভের কাজ শুরু হয়েছে। ওয়াটার পয়েন্টে গভীর-অগভীর নলকূপ বা রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিংয়ের মাধ্যমে পানি সরবরাহ করা হবে। কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপে গভীর-অগভীর নলকূপেও পানি ওঠে না। সেখানে রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং প্রকল্প নেয়া হবে।

তিনি আরও বলেন, উপকূলে লবণাক্ততার জন্য উপজেলা পর্যায়ে সাবমারসিবল পাম্প বসানোর আগে সার্ভে করা হচ্ছে। সেখানে প্রাপ্ত পানি পানের উপযোগী হলেই ট্যাংকি স্থাপন করা হবে। অথবা পানি পরীক্ষা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপকূলীয় উপজেলা কয়রা-পাইকগাছার (খুলনা-৬ আসন) সংসদ সদস্য আলহাজ মো. আকতারুজ্জামান বাবু বলেন, কয়রা-পাইকগাছায় কোনো গভীর নলকূপ কাজে আসে না, অগভীর নলকূপের পানি পান করা যায় না। ফলে এই অঞ্চলের মানুষের সুপেয় পানির কষ্ট দশকের পর দশক ধরে, যা নিরসনের চেষ্টা করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।

Advertisement

তিনি বলেন, এলাকার মানুষের সুপেয় পানির চাহিদা পূরণের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি প্রকল্প দাখিল করা হয়। সাড়ে ৩৯ কোটি টাকার এ প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায়। প্রকল্পটি অনুমোদ পেলে কয়রা-পাইকগাছা এলাকায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের মাধ্যমে এলাকায় সুপেয় পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

আলমগীর হান্নান/আরএইচ/এমএস