সাহিত্য

কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছেন তার ছেলে ইমতিয়াজ হাসান। একমাসেরও বেশি সময় তিনি অসুস্থ হয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) ইমতিয়াজ হাসান জাগো নিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘ইলেক্ট্রোলাইট ইম্ব্যালেন্স তার বাবার প্রধান সমস্যা। এছাড়া হার্টের সমস্যা আছে। পড়ে গিয়ে তিনি কোমরেও আঘাত পেয়েছিলেন। সঙ্গে আছে ডায়াবেটিস। এখন তার শারীরিক অবস্থা খারাপ। বাসায় অন্তত সাতজন চিকিৎসক তাকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখেছেন, তারা চিকিৎসা দিচ্ছেন।

এর আগে সোমবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাবার অসুস্থতার কথা জানিযে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ইমতিয়াজ।

Advertisement

ইমতিয়াজ হাসান তার ফেসবুকে লেখেন, আব্বাকে নিয়ে কখনো কিছু লেখা হয়ে ওঠে না। বাকি দুনিয়ার কাছে যে রূপেই পরিচিত হোন, বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে আমার জন্য নিরন্তর বিস্ময় সৃষ্টি করে চলেছেন আমার বাবা। মোটের ওপর গল্পকার হিসেবেই সবাই চেনেন হাসান আজিজুল হককে। ২০০৬-এ তার বহুপ্রার্থিত উপন্যাস ‘আগুনপাখি’ শেষ করে আত্মজীবনীতে হাত দিলেন। ধরে নিয়েছিলাম- আব্বার হাতে আর নতুন কোনো তাস নেই! কিন্তু আশি পার করার পরও কলম থেকে নতুন নতুন কাজ বের করে আমায় অবাক করেছেন। লিখেছেন অনুবাদগ্রন্থ (আর্নেস্টহেমিংওয়ে : কিলিমানজারোর বরফপুঞ্জ ও অন্যান্য গল্প), ভ্রমণবৃত্তান্ত (লন্ডনের ডায়েরি) আর কবিতার বই (সুগন্ধি সমুদ্র পার হয়ে)। ‘বাপ, তোর সোনার কলম হোক’- মায়ের দোয়া ফলেছে তাঁর জীবনে। মানুষের দোয়াও পেয়েছেন নিশ্চয়।’

তিনি আরও লিখেছেন, ‘মাঝে মাঝে সে প্রমাণ পাই, যখন ভাড়া মেটানোর সময় বৃদ্ধ অটোচালক হঠাৎ তার কুশল জানতে চেয়ে চমকে দেন অথবা শহরের রাস্তায় অচেনা কেউ এগিয়ে এসে তার কথা জানতে চান। আম্মা মারা যাওয়ার পর থেকেই সবার মাঝে থেকেও আব্বা বড় একা, তাকে আরও একা করে দিয়েছে কোভিড-১৯ অতিমারি। ছেলেবেলা থেকে দেখে আব্বার ভাত-তরকারির সঙ্গে সঙ্গে মানুষের সঙ্গ-হাসি-গল্প-গান দরকার হয়। সঙ্গত কারণেই এ সময় সেটা পাচ্ছেন না। কোভিডের মরণকামড় এড়িয়ে অন্যান্য বার্ধক্যজনিত সমস্যা সামাল দেয়া কতটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে, তা ভুক্তভোগীরা জানেন।’

‘আব্বা বয়সের ভারে শ্রবণশক্তি হারিয়েছেন অনেকটা, মনটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছে একটু। আড়ালেও কি চলে যাচ্ছেন ধীরে ধীরে? গত এক মাস যাবৎ তিনি ভীষণ অসুস্থ, ছোট একটি শিশুর মতোই আমাদের ওঁর পরিচর্যা করতে হয়। পরিবারের মানুষ আর গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ী ছাড়া আর কেউ সে কথা জানেন না। অনেকেই হয়তো মন চাইলেও তার খবর নিতে পারেননি বা যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে জন্যই এটুকু লেখা। আপনাদের দোয়ায়, প্রার্থনায় তাঁকে বাঁচিযে রাখবে।’

হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তার বয়স ৮২ বছর। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩১ বছর শিক্ষকতার পর ২০০৪ সালে তিনি অবসর যান। জীবনের অধিকাংশ সময় তিনি রাজশাহীতেই কাটিয়েছেন।

Advertisement

১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন। টানা ৩১ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। বর্তমানে হাসান আজিজুল হক বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপায় এলাকায় অবস্থিত ‘বিহাস’-এ নিজ বাসায় বসবাস করছেন।

ফয়সাল আহমেদ/এএএইচ