নাটক-সিনেমার প্রধান চরিত্রসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের সময় শিল্পীদের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধের নির্দেশনা কেন দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
একইসঙ্গে ধূমপান ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে বিবাদীদের কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
Advertisement
বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন রিটকারীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন।
আদালতে আজ রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষারকান্তি রায়।
এর আগে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নাটক-চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্রসহ বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের সময় শিল্পীদের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে এ বিষয়ে রিট আবেদন করা হয়। বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি, মাদকবিরোধী সংগঠন ‘প্রত্যাশা’ ও পপুলেশন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (পিডিও) পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিংকন এই রিটটি দায়ের করেন।
রিটে সাকিব খান অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ চলচ্চিত্রের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, এই সিনেমার একাধিক দৃশ্যে সিগারেটের ব্যবহার করা হলেও কোনো সতর্কবার্তা ব্যবহার করা হয়নি। বরং নানা রঙে-ঢঙে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার সম্পর্কিত এমন ভুরিভুরি দৃশ্য অন্যান্য নাটক-সিনেমায়ও পাওয়া যাবে। ফলে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য প্রণীত আইনটি শুধু গ্রন্থগত ‘কালো অক্ষর’ হয়েই আছে।
Advertisement
অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জমান লিংকন বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার সংক্রান্ত আইন থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা অকার্যকর। ফলে দেশে এ জাতীয় দ্রব্যের অবাধ ব্যবহার ও আইন লঙ্ঘনের মহোৎসব চলছে।
আইনজীবী মনিরুজ্জমান আরও বলেন, আইনের ১৪ (২) ধারায় বলা হয়েছে, কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার লিখিত অভিযোগ ব্যতিরেকে কোনো আদালত এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করিবে না। যা সংবিধানের ২৭ ও ৩১ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী। কর্তৃত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারে ক্ষতিগ্রস্তরাও যেন মামলা করতে পারেন এ জন্য আইনের ১৪(২) ধারা সংশোধন চেয়েছি।
রিটে বলা হয়, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর- এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না। রীতিমতো এ জাতীয় পণ্যের প্যাকেটের মোড়কেই ক্ষতির বিষয় উল্লেখ করা থাকে। যদিও ধূমপায়ীরা এসব ক্ষতি সম্পর্কিত বার্তা আমলে নেন না। এ জন্য ধূমপান ও তামাক জাতীয় পণ্যের উৎপাদন উত্তরোত্তর বেড়েই চলছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এসব পণ্যের প্রচার-প্রচারণাও।
আইনজীবী বলেন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে প্রায় প্রতিবছর বাজেটে সরকার কর বৃদ্ধি করে থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত করারোপ ও ক্রমশ দাম বৃদ্ধি পেলেও ব্যবহার সেই অর্থে কমানো যায়নি। পাশাপাশি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে করা আইনও অনেক ক্ষেত্রে অকার্যকর বলা চলে।
রিটে আরও বলা হয়, ২০০৩ সালে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার ৫৬তম সম্মেলনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করার জন্য ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’ নামের কনভেনশনে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। ওই কনভেশনের বিধানাবলি বাংলাদেশে কার্যকর করা লক্ষ্যে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন, ব্যবহার, ক্রয়-বিক্রয় ও বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করতে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ প্রণয়ন করে সরকার।
তাই ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ১৪(২) ধারা সংশোধন এবং আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, আইন সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব এবং বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের চেয়ারম্যানকে লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয়। ওই নোটিশের পেয়েও কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় এই রিট আবেদন করা হয়।
আইনে তামাকজাতদ্রব্যের বিজ্ঞাপন ও প্রচারণা নিষিদ্ধ এবং পৃষ্ঠপোষকতা নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কিত ধারা ৫ (১)(ক) তে বলা হয়েছে, ‘প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়ায়, বাংলাদেশে প্রকাশিত কোনো বই, লিফলেট, হ্যান্ডবিল, পোস্টার, ছাপানো কাগজ, বিলবোর্ড বা সাইনবোর্ডে বা অন্যকোনোভাবে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন প্রচার করিবেন না বা করাইবেন না।
একই আইনের ধারা ৫(১)(ঙ) তে বলা আছে, ‘বাংলাদেশে প্রস্তুতকৃত বা লভ্য ও প্রচারিত, বিদেশে প্রস্তুতকৃত কোনো সিনেমা, নাটক বা প্রামাণ্যচিত্রে তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহারের দৃশ্য টেলিভিশন, রেডিও, ইন্টারনেট, মঞ্চ অনুষ্ঠান বা অন্যকোনো গণমাধ্যমে প্রচার, প্রদর্শন বা বর্ণনা করিবেন না বা করাইবেন না।
এফএইচ/বিএ/এমকেএইচ