গতকাল রোববার (১৫ আগস্ট) অনেকটা নাটকীয়ভাবেই আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে নেয় তালেবান। ফলে পুরো আফগানিস্তান তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এরপর থেকেই সেখানকার সাধারণ মানুষের মনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। কী হতে যাচ্ছে তা নিয়েই যেন আতঙ্ক কাটছে না। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই কাবুলের নারীদের মধ্যে বোরকা কেনার হিড়িক পড়েছে বলে গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
Advertisement
কাবুলের ব্যবসায়ী আরেফ। প্রথম নজরেই তার দোকানে সারি সারি নীল বোরকা সাজিয়ে রাখতে দেখা গেল। বোরকা বিক্রি এতটা বেড়ে গেছে যে ঝুলিয়ে রাখা বোরকাগুলো দেখে যে কারও মনে হবে সেখানে ভারী পর্দা ঝুলছে। তালেবান কাবুলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়তেই কাবুলের ভেতরে থাকা নারীরা বোরকা কিনতে মার্কেট গুলোতে ভিড় করতে শুরু করেন। আরেফ বলেন, আগে বিভিন্ন প্রদেশ থেকে নারীরা এখানে বোরকা কিনতে আসতেন। কিন্তু এখন শহরের নারীরাও বোরকা কিনতে শুরু করেছেন।
নারীদের মধ্যে বোরকা কেনার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই দামও কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। বোরকা কিনতে আসা এক নারী বলেন, গত বছরই এ বোরকার দাম ছিল ২০০ আফগান মুদ্রা। কিন্তু একই বোরকা তারা এখন আমাদের কাছে দুই হাজার থেকে তিন হাজার আফগান মুদ্রায় বিক্রি করার চেষ্টা করছে।
কয়েক দশক ধরে আফগান নারীরা নীল রঙের বোরকা দিয়েই বিশ্বে পরিচিত। কিছুটা ভারী কাপড়ে তৈরি এ বোরকা মাথা থেকে পা পর্যন্ত সম্পূর্ণ ঢেকে রাখে। এ ধরনের বোরকার চোখের সামনে থাকে নেটের কাপড়। এতে যে নারী বোরকা পরেন তিনি বাইরের সবকিছু দেখতে পেলেও কেউ তাকে দেখতে পায় না।
Advertisement
মূলত তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই নারীরা সতর্ক হয়ে গেছেন। এর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। সে সময় নারীদের বোরকা পরা ছিল বাধ্যতামূলক। কোনো নারী এ নিয়মের বাইরে গেলে তাকে শাস্তি পেতে হতো। ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানে তালেবানের পতনের পর আর বোরকা পরা বাধ্যতামূলক ছিল না। এই সময়ের মধ্যে নারীরা বোরকা ছাড়া অন্য পোশাকও পরার সুযোগ পেয়েছেন। এমনকি গত কয়েক বছরে বহু আফগান নারীকে বিভিন্ন আধুনিক পোশাকেও দেখা গেছে।
মিরিয়াম নামের এক তরুণী জানান, তার স্বামী তাকে জোর করে বোরকা কেনার জন্য মার্কেটে যেতে বলেছেন।তিনি বলেন, আমি যে ধরনের কাপড় পরি আমার স্বামী আমাকে সেগুলো বদলে ফেলতে বলেছেন। সে আমাকে বোরকা পরতে বলছেন যেন বাইরে গেলে আমার ওপর তালেবানের নজর কম পড়ে। কিন্তু দেশটির অনেক কম বয়সী নারীই বোরকা পরতে চান না। তারা পোশাকের ব্যাপারে নিজেদের পছন্দকে প্রাধান্য দিতে চান।
এদিকে তালেবানের পক্ষ থেকে নারীদের আশ্বস্ত করে বলা হয়েছে, তাদের বিষয়ে রক্ষণশীল অবস্থা থেকে সরে আসা হবে। তারা বলছে, আফগান নারীরা চাইলে বাড়ির বাইরে বের হতে পারবেন, তবে অবশ্যই হিজাব পরতে হবে। এর মধ্যেই জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় তালেবানের উপ-প্রধান নেতা মোল্লা বারাদার আখুন্দ বলেছেন, এখন সময় হয়েছে আফগানিস্তানের মানুষের সেবা আর তাদের জীবনমান উন্নয়ন করার।
কাবুল দখল ও বিজয় ঘোষণার একদিন পরে তালেবানের পক্ষ থেকে নতুন এই ভিডিও বার্তা প্রচার করা হলো। সেখানে তালেবানের উপ-প্রধান বলেন, আমাদের জাতিকে আমরা সবচেয়ে ভালো সেবা দেবো, পুরো জাতির জন্য প্রশান্তি নিয়ে আসব, তাদের জীবনমানের উন্নয়নের জন্য যতদূর যা করা দরকার, আমরা তাই করব। তিনি আরও বলেন, যেভাবে আমাদের এখানে আসতে হয়েছে, তা কাঙ্ক্ষিত ছিল না। সেই সঙ্গে আজ আমরা যে অবস্থানে পৌঁছেছি, তাও কেউ ভাবেনি।
Advertisement
টিটিএন/জিকেএস