ঢাকাই চলচ্চিত্রের আলোচিত নায়িকা পরীমনি নির্দোষ এবং ষড়যন্ত্রের শিকার দাবি করে তাকে জামিন দেওয়া আবশ্যক বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান। পরীমনির জামিন আবেদনে তিনি এ কথা উল্লেখ করেছেন।
Advertisement
সোমবার (১৬ আগস্ট) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) রেজাউল করিম চৌধুরীর আদালতে পরীমনির জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবী মো. মজিবুর রহমান। আদালত জামিন শুনানির জন্য বুধবার (১৮ আগস্ট) দিন ধার্য করেন।
পরীমনির জামিন আবেদনে বলা হয়, আসামি একজন নারী। ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৪৭(১) (গ) মোতাবেক জামিন পেতে পারেন। জামিন পেলে অত্র আসামি জামিনের শর্ত ভঙ্গ করবেন না এবং আদালতের নির্দেশ মতে জামিনদার প্রদান করবেন। আসামি দীর্ঘ ছয়দিন রিমান্ডে থাকাসহ প্রায় ২৬ ঘণ্টা পুলিশ হেফাজতে থাকলেও মামলা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসাবাদে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বা সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসামি ‘ভারটিগো’ (vertigo) এবং ‘প্যানিক অ্যাটাক’র রােগী। দীর্ঘসময় পুলিশ কাস্টডিতে থেকে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চিকিৎসার স্বার্থে দরখাস্তকারী আসামিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক। আসামির দখল ও নিয়ন্ত্রণ থেকে মদ ও মাদক উদ্ধার হয়নি। আসামি নির্দোষ, ষড়যন্ত্রের শিকার বিধায় আসামিকে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এজাহার মোতাবেক ঘটনার অভিযান পরিচালনাকারী র্যাব টিম ‘দ্য আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অর্ডিন্যান্স ১৯৭৯’ এর ৬ এবং ৬-এর এ ধারা লঙ্ঘন করে অভিযান পরিচালনা করে। ফলে একটি ভিত্তিহীন মামলা দায়ের করার কারণে আসামি জামিন পাওয়ার হকদার। আসামি পরীমনি একজন প্রথম সারির চিত্রনায়িকা। ‘ফোর্বস ম্যাগাজিন’ ডিজিটাল তারকা হিসেবে বিশ্বের ১০০ জনের মধ্যে তার নাম অন্তর্ভুক্ত। আসামি জেলহাজতে আটক থাকলে চলচ্চিত্র অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। তাছাড়া বিভিন্ন কোম্পানি ও চলচ্চিত্র নির্মাতার সঙ্গে শিল্পী হিসেবে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘিত হবে। সম্প্রতি ‘প্রীতিলতা’ নামক সরকারি সিনেমার জন্য ফটোশুট হয়েছে। ফলে আসামিকে যে কোনো শর্তে জামিনে মুক্তি দেওয়া আবশ্যক। অন্যথায় ন্যায়বিচার পরাভূত হবে।
Advertisement
এর আগে গত ১৩ আগস্ট দ্বিতীয় দফার রিমান্ড শেষে পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক গোলাম মোস্তফা। এসময় আসামিপক্ষে তাদের আইনজীবী মজিবুর রহমান জামিন চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষ জামিনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
গত ৪ আগস্ট সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে তার বনানীর বাসা থেকে আটক করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে নতুন মাদক এলএসডি, মদ ও আইস উদ্ধার করা হয়। তার ড্রয়িংরুমের কাভার্ড, শোকেস, ডাইনিং রুম, বেডরুমের সাইড টেবিল ও টয়লেট থেকে বিপুল পরিমাণ মদের বোতল উদ্ধার করা হয়।
এরপর রাত ৮টা ১০ মিনিটে পরীমনিকে তার বাসা থেকে একটি সাদা মাইক্রোবাসে র্যাব সদরদফতরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে গাড়ি কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদফতরে পৌঁছায়। সেখানে রাত ১২টা পর্যন্ত পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে র্যাব। পরদিন ৫ আগস্ট বিকেল ৫টা ১২ মিনিটে র্যাব সদরদফতর থেকে পরীমনি, রাজ ও তাদের দুই সহযোগীকে কালো একটি মাইক্রোবাসে বনানী থানায় রওয়ানা দেয় র্যাবের একটি টিম।
এরপর র্যাব বাদী হয়ে রাজধানীর বনানী থানায় পরীমনি ও তার সহযোগী বিপুর বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলায় করে। মামলার পর রাত ৮টা ২৪ মিনিটে পরীমনি ও তার সহযোগীকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর বনানী থানার মামলায় তাদের চারদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
Advertisement
একইদিন ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদের আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন। এরপর সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় গত ১০ আগস্ট পরীমনি ও তার সহযোগী দিপুর দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পরীমনি ২০১৬ সাল থেকে মাদক সেবন করতেন। এমনকি এলএসডি ও আইসও সেবন করতেন তিনি। এজন্য বাসায় একটি মিনি বার তৈরি করেন। তিনি বাসায় নিয়মিত মদের পার্টি করতেন। চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজসহ আরও অনেকে তার বাসায় অ্যালকোহলসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকের সরবরাহ করতেন এবং পার্টিতে অংশ নিতেন।
পরীমনি ২০১৪ সালে সিনেমা জগতে আসেন। এ পর্যন্ত ৩০টি সিনেমা ও পাঁচ-সাতটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। প্রযোজক রাজ তাকে পিরোজপুর থেকে ঢাকায় সিনেমা জগতে নিয়ে আসেন।
জেএ/ইএ/জেআইএম