ভ্রমণ

একদিনে সিলেট ভ্রমণে যা যা দেখবেন

দীর্ঘ লকডাউন শেষে এরই মধ্যে দেশে স্বাভাবিক হয়েছে যানবাহন চলাচল ব্যবস্থা। আগামী ১৯ আগস্ট থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রগুলো। অনেকে এরই মধ্যে বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তবে হাতে সময় না থাকায় অনেকেই মনমতো বিভিন্ন টুরিস্ট স্পটগুলো ঘুরতে পারেন না।

Advertisement

কেউ কেউ আবার ছুটির দিনে ঘুরতে যান। তাদের লক্ষ্য থাকে একদিনেই দুই-তিনটি স্পট ঘুরে বেড়ানোর। বর্তমানে অনেকেই বিভিন্ন টুরিস্ট গ্রুপের সঙ্গে একদিনের ভ্রমণে যান দেশের বিভিন্ন স্থানে। আপনি যদি একদিনে কোথাও ভ্রমণে যেতে চান; তাহলে সিলেট ভ্রমণে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন তিনটি স্থানে।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় ভ্রমণ এরিয়ার মধ্যে সিলেট অন্যতম। বিশেষ করে বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ও রাতারগুল দেখতে বর্ষার সময় ভিড় জমান পর্যটকরা। তবে যেহেতু দীর্ঘদিন লকডাউন ছিল বর্ষার মৌসুমে, তাই এখন অনেকেই সিলেট ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন। উদ্দেশ্য বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ও রাতারগুল ভ্রমণ।

চাইলে একদিনেই ঘুরে আসতে পারেন বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ও রাতারগুল। তাও আবার খুব অল্প খরচেই। এজন্য অবশ্য আপনাকে সিলেট শহর থেকে খুব ভোরে রওনা হতে হবে। এই তিনটি স্থান ভ্রমণের সবচেয়ে ভালো সময় হলো বর্ষাকাল ও তার পরবর্তী সময় অর্থাৎ জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস।

Advertisement

বিছনাকান্দি

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তমপুর ইউনিয়নে অবস্থিত বিছানাকান্দি। সিলেট ভ্রমণের মূল আকর্ষণ হলো পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা স্বচ্ছ জলধারা আর পাহাড়ে পাহাড়ে শুভ্র মেঘের উড়াউড়ি। বিছানাকান্দির পাহাড়, ঝর্ণা আর পাথরের সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। বর্ষাকালে এ স্থানের সৌন্দর্য দ্বিগুণ বেড়ে যায়।

পান্তুমাই ঝর্ণা

গোয়াইনঘাট উপজেলার পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের একটি গ্রামে অবস্থিত। বিছনকান্দি থেকে সহজেই নৌকায় যাওয়া যায় এই ঝর্ণার কাছে। তবে ঝর্ণাটির মূল অবস্থান ভারতের মধ্যে। যা বড়হিল ঝর্ণা নামে পরিচিত। ভারতে অবস্থিত হলেও বাংলাদেশের খুব কাছ থেকে গিয়ে দেখা যায় এই ঝর্ণা।

Advertisement

রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট

বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট যা সিলেট জেলা শহর থেকে প্রায় ২৬ কিলোমিটার দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলার ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। ৩০ হাজার ৩২৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এলাকার ৫০৪ একর স্থানটি বন আর ছোট বড় জলাশয়ে পূর্ণ।

তবে বর্ষায় পুরো এলাকাটিকে দেখতে একই রকম মনে হয়। এই রাতারগুল জলাবন বছরে চার থেকে পাঁচ মাস পানির নিচে তলিয়ে থাকা। অনেক পর্যটক রাতারগুলকে বাংলাদেশের আমাজন বলেও ডাকেন।

একদিনেই বিছনাকান্দি, পান্থুমাই ও রাতারগুল ভ্রমণের পরিকল্পনা

কীভাবে যাবেন?

দেশের যেকোনো স্থান থেকে সিলেট পৌঁছাতে হবে খুব ভোরে। এজন্য আগের দিন রাতে রওনা দিন। যাতে ভোর হতেই সিলেট শহরে পৌঁছাতে পারেন। সিলেট পৌঁছানোর পর যেকোনো হোটেলে ফ্রেশ হয়ে অল্প সময়ের মধ্যেই নাস্তা সেরে নিন। এই ৩ স্থান ভ্রমণে সারাদিনের সিএনজি বা লেগুনা রিসার্ভ করে নিতে হবে। সাধারণত এই সিএনজি গুলোতে ৫ জন বসা যায়।

সারাদিনের জন্য রিজার্ভ নিলে ভাড়া পড়বে ১২০০-১৫০০ টাকা। আর লেগুনাতে ১০-১২ জন বসা যায় এবং সারাদিনের জন্যে ভাড়া ২৫০০-৩০০০ টাকা। আপনাকে অবশ্যই দরদাম করে নিতে হবে। পিক সিজনে পর্যটকের চাপ বেশি থাকলে ভাড়া বেশি চাইতে পারে। তাই দামদর করে নিবেন। হাদারাপাড় ও রাতারগুল যাবেন বলে ঠিক করে নিন।

সিলেট থেকে রাতারগুলের তুলনায় বিছনাকান্দি ও পান্থুমাই দূরে। তাই ভালো হবে প্রথমে বিছন্দাকান্দি ও পান্থুমাই থেকে ঘুরে এসে তারপর রাতারগুল ঘুরে সিলেট শহরে ফিরে আসা। আপনি চাইলে রাতারগুল ঘুরে তারপর বিছনাকান্দি যেতে পারেন। তবে আগে বিছনাকান্দি ঘুরে আসাটাই আপনার জন্য ভালো হবে।

প্রথমে বিছনাকান্দি দেখার জন্যে রওনা হয়ে যান। এজন্য যেতে হবে হাদারপাড়। সিলেট থেকে হাদারপাড়ের দুরত্ব দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মতো। হাদারপাড় বাজারে গিয়ে নৌকা রিসার্ভ করে বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই ঝর্ণা যেতে হবে। বিছনাকান্দি ও পান্তুমাই একসাথে ঘুরে দেখার জন্যে নৌকা ভাড়া লাগবে ১৫০০-২০০০ টাকা। আর শুধু বিছনাকান্দি হলে ১০০০-১৫০০ টাকায় পেয়ে যাবেন।

হাদারপার থেকে নৌকা নিয়ে প্রথমে বিছনাকান্দি ঘুরতে যান। বিছনাকান্দি যেতে ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগবে। এরপর বিছনাকান্দি পৌঁছে ৪০-৫০ মিনিট সেখানে কাটাতে পারবেন। এরপর নৌকা নিয়ে পান্তুমাই ঝর্ণা দেখতে চলে যান। যেতে সময় লাগবে প্রায় ঘণ্টাখানেক। পান্থুমাই ঝর্ণা ভারতে থাকার কারণে আপনাকে দূর থেকেই দেখতে হবে। পান্তুমাই ঝর্ণা দেখার জন্য অন্তত আধা ঘণ্টা সময় নিন। ঝর্ণা দেখা শেষে আবার ফিরতে হবে হাদারপাড় বাজারে।

হাদারপাড় বাজারে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। দুপুর ২টার মধ্যে রওনা হলে হাদারপাড় থেকে রাতারগুল যেতে প্রায় ঘণ্টাখানে সময় লাগবে। এরপর রাতারগুলের চৌরঙ্গী ঘাটে নেমে ২ ঘণ্টার জন্য নৌকা ভাড়া নিন। ভাড়া পড়বে ৮৫০-৯০০ টাকা। সন্ধার আগ পর্যন্ত রাতারগুলে সময় কাটাতে পারেন। তারপর সেখান থেকে সিলেট শহরে ফিরে রাতের খাবার শেষে গাড়িতে চড়ে নিজ গন্তব্যে রওনা দিন।

সিলেট ভ্রমণে খরচ কমাবেন যেভাবে-

>> চেষ্টা করুন ৫-১৫ জন একসঙ্গে দলগতভাবে ভ্রমণ করতে।>> দুপুরের খাবার কিংবা সকালের নাস্তা যেকোনো খাবার খেতে শেয়ার করে খান।>> পর্যটকের চাপ কম এমন সময় ঘুরতে যান। যেমন শুক্র-শনিবার ছাড়া অন্য দিন।>> সিএনজি ও নৌকা ভাড়ার ক্ষেত্রে দরদাম ভালো করে করতে হবে।>> সিলেট যাওয়ার ক্ষেত্রে লোকাল বাস অথবা নন এসি বাস আর ট্রেনের ক্ষেত্রে শোভন এ গেলে খরচ কম হবে।>> একদিনে ৩টি জায়গা ভ্রমণের জন্যে সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে।>> যদি কোনো কারণে বিছনাকান্দি যেতে সময় বেশি লাগে; তাহলে পান্তুমাই ভ্রমণতালিকা থেকে বাদ দিন।>> গাড়ি এবং নৌকা ভাড়া করার সময় কিছুটা বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগানা। যাতে তারা বুঝতে না পারে আপনি ভাড়া সম্পর্কে অবগত নন।

জেএমএস/এমকেএইচ