আফগানিস্তানে তালেবানদের হাতে পশ্চিমা সমর্থিত আশরাফ গানি সরকারের পতন ঘটেছে। প্রেসিডেন্ট গানি দেশ ছেড়ে ভিনদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে তালেবানরা ‘সবার জন্য সাধারণ ক্ষমা’ ঘোষণা করে কাবুলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। তালেবানের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছাতে তাদের কাতারের কার্যালয়ে গেছে আফগান সরকারের উচ্চপর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল।
Advertisement
পরিস্থিতি এখন তালেবানদেরই নিয়ন্ত্রণে। তাদের এই কাবুল দখল মধ্য এশিয়াকেন্দ্রিক রাজনীতির হিসাব-নিকাশই পাল্টে দিতে চলেছে। সামনে আর কী অপেক্ষা করছে? এ প্রসঙ্গে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্র ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ।
তিনি মনে করেন, তালেবানরা দেশের বাইরের রাজনীতি নিয়ে কোনো মাথা ঘামায়নি। ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করতে পারে।
হেরাতের রাস্তায় অস্ত্র হাতে তালেবান যোদ্ধা
Advertisement
১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তান তালেবানের শাসনে ছিল। এর মধ্যে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল-কায়েদা নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগে ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা জোট দেশটিতে যৌথ অভিযান চালায়, যার মাধ্যমে তালেবান শাসনের অবসান ঘটে।
অভিযানে আল-কায়েদার শীর্ষ নেতাদের দমনের পরও কথিত ‘শান্তিরক্ষার স্বার্থে’ আফগানিস্তানে প্রায় দুই দশক অবস্থান করে পশ্চিমা সেনারা। সম্প্রতি সেখান থেকে ধাপে ধাপে এসব সেনা প্রত্যাহার শুরু হয়েছে।
বিদেশি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পরপরই কাবুলের মসনদে উঠতে জোর লড়াইয়ে নামে তালেবান। যদিও এর মধ্যে তালেবানের সঙ্গে আফগান শাসকগোষ্ঠীর সংঘাত অবসানে কাতারসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যস্থতায় বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। সেসব আলোচনায় দৃশ্যমান কোনো ফল মেলেনি। এবার সশস্ত্র অভিযানের মাধ্যমেই আফগানিস্তানে ফের ক্ষমতায় বসতে চলছে তালেবান।
জালালাবাদের সড়কে তালেবান যোদ্ধাদের সঙ্গে সমর্থকদের উল্লাস
Advertisement
সাক্ষাৎকারের একাংশে ড. রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বাহিনীর উপস্থিতির মধ্য দিয়েই তালেবানরা শক্তির সঞ্চয় করেছে। আমি মনে করি, ২০০৩ সালের পরই আফগানিস্তান থেকে যুদ্ধ গুটিয়ে নেয়া উচিত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের। কিন্তু তা না করে বড় ভুল করেছিল দেশটি। এতে যুক্তরাষ্ট্রের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে আঞ্চলিক রাজনীতিরও। আঞ্চলিক রাজনীতির প্রভাব বিস্তারে ভারত-পাকিস্তান বিপরীতভাবে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে সেখানে। ভারত সরকার কাবুল সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখেছে। অন্যদিকে তালেবানদের শক্তি জুগিয়েছে পাকিস্তান।
এই কূটনীতি বিশ্লেষক বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি অবশ্যই ভারতের অনুকূলে নয়। (তালেবানের উত্থানে) পাকিস্তানের প্রভাব বাড়বে কাবুলে। যদিও স্থিতিশীলতা আফগানিস্তানে অতিজরুরি এখন। চীন অন্তত তাই চাইবে। ভূ-রাজনীতি, বৈশ্বিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে চীন অন্য পক্ষগুলোকেও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার আহ্বান জানাবে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও তালেবানদের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন করবে বলে বিশ্বাস করি।
আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট প্যালেস, এখন তালেবানের দখলে
আফগানিস্তান প্রশ্নে বাংলাদেশের অবস্থান প্রসঙ্গে এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আফগানিস্তানে বাংলাদেশের মূলত কোনো স্বার্থ নেই। বিশেষ করে ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কথা যদি বলি। কাবুল সরকারের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক রাখাই উত্তম হবে এবং সেখানে যে সরকারই থাকুক না কেন। আগ বাড়িয়ে তালেবান ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ গরম করার মানে হয় না। তালেবান ইস্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্ব পেলে ফল কারও জন্যই ভালো হবে না। কারণ আমরা দেখেছি, তালেবানরা দেশের বাইরের রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায়নি। তবে জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন এলে সেটা ভিন্ন কথা।
(ক্ষমতার মসনদে) কী রূপে ফিরছে তালেবানরা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তালেবানরা কী রূপে ফিরছে তার বিশ্লেষণ করতে হলে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আফগানিস্তান আপাতত বড় বড় শক্তির খেলার মাঠ হবে। আমরা চাই আফগানিস্তানের জনগণ তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করার মতো শক্তি অর্জন করুক। দশকের পর দশক ধরে যেখানে আগুন জ্বলছে, সেখানে একটু শান্তি ফিরে আসুক। আফগানিস্তানের জনগণ যেন কোনো শক্তির পুতুল না হয়, সেজন্য সবাই আন্তরিক হোক।
এএসএস/এইচএ/জেআইএম