দেশের বিভিন্ন জেলায় মুক্ত দিবস পালিত হলেও দিনাজপুরে এর ব্যতিক্রম। বেশ কয়েক বছর ১৪ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসলেও গত ৩ বছর ধরে ১৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়। দিনাজপুর মুক্ত দিবসের সঠিক দিন-তারিখ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকায় এবারে পালিত হচ্ছে না জেলা মুক্ত দিবস। দিনাজপুরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অনুসারে, ডিসেম্বরের শুরুতেই মুক্তিযোদ্ধাদের হামলার মুখে পাকসেনারা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। ৮ ডিসেম্বর চিরিরবন্দরে মুক্তিযোদ্ধারা ৫১ জন রাজাকারকে বন্দি করে। ১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা বিরলে পাক সেনাদের ঘাঁটির উপর হামলা চালায় এবং ১১ ডিসেম্বর বিরলে পাকসেনারা হামলা চালিয়ে বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে চলে যায়। ১৩ ডিসেম্বর পাকসেনারা বিরলের ৪৩ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে সৈয়দপুরের দিকে রওনা হয়। ১৪ ডিসেম্বর বিরল উপজেলার মঙ্গলপুরে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে মিত্রবাহিনী যোগ দেয়। ওইদিনই পাকসেনারা কাঞ্চন নদীর রেলওয়ের লোহার ব্রিজ, ভুষিরবন্দর ব্রিজ, মোহনপুর ব্রিজ, দিনাজপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জ ভেঙে দেয়াসহ অনেক ক্ষতি করে। তবে সঠিক কোন তারিখে দিনাজপুর থেকে পাকসেনারা চলে যায় তা নিয়ে রয়েছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে মতবিরোধ। কারো মতে, ১৫ ডিসেম্বরে মিত্রবাহিনীর আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে ওই দিনই জেলের বন্দিদের তালা খুলে চলে যায় পাকসেনারা। সেই হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস। আবার কারও মতে, ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকসেনারা দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল। ফলে তাদের মধ্যে দিনাজপুর মুক্ত হয়েছিল ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিনই স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলিত হয়। বেশ কয়েক বছর ধরে ১৪ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস পালিত হয়ে আসলেও গত ৩ বছর ধরে ১৫ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস পালিত হয়। তবে সঠিক দিন-তারিখ নিরুপণের অভাবে এবারে কোনো তারিখেই দিনাজপুর মুক্ত দিবস পালিত হচ্ছে না। দিনাজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার সিদ্দিক গজনবী বলেন, যুদ্ধকালীন তারা ১৬ ডিসেম্বর দিনাজপুরে এসেছেন। পাশাপাশি ১৬ ডিসেম্বর জেলা কারাগারে আটক বাঙালিরা মুক্তি পেয়েছেন। এই হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস সঠিক তারিখ। মুক্ত দিবস নিয়ে জটিলতা থাকায় দিনাজপুর মুক্ত দিবস পালন করা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি। পাশাপাশি দিনাজপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বলেন, ১৬ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস হিসেবে তারা পালন করেছেন এবং আলোচনাতেও সকলের সম্মতিক্রমে ১৬ ডিসেম্বর মুক্ত দিবস হিসেবে গৃহীত হয়েছে। তবে জেলা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ জানান, বিতর্ক থাকলেও তার মতে ১৬ ডিসেম্বর এবং ১৭ ডিসেম্বরেও তারা গঙ্গারামপুর থেকে দিনাজপুরে প্রবেশ করতে পারেননি। দিনাজপুরের একাংশে পাকসেনা ছিল। ১৮ তারিখে দিনাজপুর থেকে পাকসেনারা চলে যাওয়ার পর তারা প্রবেশ করেছেন। পাশাপাশি আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন হয়েছিল ও প্রশাসন চালু হয়েছিল। তাই ১৮ ডিসেম্বর দিনাজপুর মুক্ত দিবস। সঠিক যে তারিখই হোক না কেন আগামী প্রজন্মের জন্য দিনাজপুর প্রকৃতপক্ষে কবে মুক্ত হয়েছিল সেটা জানা অত্যন্ত জরুরি। এর জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে আলোচনার মাধ্যমে একটি সঠিক দিন নির্ধারণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এলাকার সচেতন মহল।এমদাদুল হক মিলন/এসএস/এমএস
Advertisement