শরীর সুস্থ রাখতে সব ধরনের ভিটামিন, মিনারেল ও খনিজ পদার্থের সমান প্রয়োজনীয়তা আছে। তবে জীবনযাত্রার অনিয়ম কিংবা পুষ্টিগুণ না জেনে খাবার খাওয়ার কারণে প্রত্যেকের শরীরেই কিছু না কিছু ভিটামিনের ঘাটতি পড়ে যায়।
Advertisement
এ কারণে শরীরে দেখা দেয় মারাত্মক সব স্বাস্থ্য সমস্যা। ভিটামিন সি যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধ বাড়ায়; ঠিক তেমনই ভিটামিন কে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজের ঝুঁকি কমায়। তাই খাদ্যতালিকায় ভিটামিন কে রাখার বিকল্প নেই।
জানলে অবাক হবেন, শরীর সুস্থ রাখতে ১৩টি অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন গ্রহণ জরুরি। এই ভিটামিনগুলো আবার দুই ভাগে বিভক্ত- জলে দ্রাব্য ভিটামিন এবং ফ্যাটে দ্রাব্য ভিটামিন। জার্নাল অব দ্য আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনে প্রকাশিত হয় ‘ভিটামিন কে ইনটেক অ্যান্ড অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ ইন দ্য ড্যানিশ ডায়েট ক্যান্সার অ্যান্ড হেল্থ স্টাডি’ শীর্ষক একটি অধ্যয়ন।
সেখানে বলা হয়েছে, তালিকায় ভিটামিন কে’র উপস্থিতি অ্যাথেরোস্ক্লেরোটিক কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের ঝুঁকি কম করে। অন্যান্য ভিটামিনের মতোই ভিটামিন কে এর উপকারিতা অনেক। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় ভিটামিন কে পর্যাপ্ত গ্রহণের বিকল্প নেই।
Advertisement
ভিটামিন কে এর ঘাটতি কেন হয়?
আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব ক্লিনিকাল কেমিস্ট্রি অনুসারে, ভিটামিন কে এর ঘাটতি সাধারণত তখনই ঘটে থাকে; যখন আপনি আপনার ডায়েট থেকে এই ভিটামিন পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্রহণ করেন না। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের উত্পাদন কমলে বা লিভারের রোগের কারণে ভিটামিন কে শরীরে জমা থাকতে পারে না।
যেহেতু ভিটামিন কে হজম ব্যাকটেরিয়াগুলোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া উত্পাদন করে। এ কারণে অন্ত্রের যেকোনো সমস্যা হলে শরীরের যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন কে শোষণ বা উত্পাদন করার ক্ষমতা হ্রাস পায়। সেইসঙ্গে অত্যাধিক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সহ পেটের বিভিন্ন রোগ শরীরকে ভিটামিন কে গ্রহণে বাঁধা দিতে পারে।
ভিটামিন কে জাতীয় খাবার না খাওয়ার ফলে শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের অভাব দেখা দিতে পারে। এ ছাড়াও পিত্তথলির রোগ, যকৃতের রোগ, সিস্টিক ফাইব্রোসিস, সিলিয়াক রোগ থাকার কারণেও ভিটামিন কে এর ঘাটতি দেখা দেয়। আবার কিছু ওষুধের ব্যবহার যেমন- রক্ত পাতলা, দীর্ঘমেয়াদে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার এবং কোলেস্টেরল হ্রাসের ওষুধগুলোর কারণেই ভিটামিন কে এর ঘাটতি হতে পারে।
Advertisement
ভিটামিন কে এর ঘাটতি হলে যেসব লক্ষণ প্রকাশ পায়
ভিটামিন কে স্বাস্থ্য এবং রোগ প্রতিরোধের বিভিন্ন দিকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ঘাটতি হলে ত্বক, হার্ট, হাড়, গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং পাচনতন্ত্র প্রভাবিত হতে পারে। শরীরে ভিটামিন কে এর ঘাটতি হলে দেখা দিতে পারে হৃদরোগসহ শারীরিক নানা সমস্যা। জেনে নিন ভিটামিন কে-এর ঘাটতির লক্ষণগুলো-
> অত্যধিক রক্তপাত> সহজ কালশিরা> ভারী, বেদনাদায়ক ঋতুস্রাব> জিআই ট্র্যাক্টে রক্তক্ষরণ> প্রস্রাবে/মল থেকে রক্ত> হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস
ভিটামিন কে এর উপকারিতা কী কী
>> হাড় শক্তিশালী করতে ভিটামিন কে সাহায্য করে। এর ফলে হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় এবং হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা কমে। যদিও এ বিষয় আরও গবেষণার প্রয়োজন।
>> এই ভিটামিন কগনিটিভ হেল্থকে উন্নত করতে সাহায্য করে। রক্তে ভিটামিন কে’র বৃদ্ধিপ্রাপ্ত পরিমাণকে বয়স্কদের মধ্যে উন্নত এপিসোডিক মেমোরির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
>> হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। মিনারেলাইজেশন প্রতিরোধ করে রক্তচাপ কম করতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। মিনারেলাইজেশনে ধমনীর মধ্যে মিনারেল জমা হতে থাকে। এটি সাধারণত বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হতে দেখা যায়। যা হৃদরোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকির বিষয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে গ্রহণের ফলে স্ট্রোকের আশঙ্কাও কমানো যায়।
>> রক্ত জমাট বাঁধার প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে ভিটামিন কে।
>> রক্তে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এই ভিটামিন।
ভিটামিন কে এর ঘাটতি পূরণে কী খাবেন?
>> সবুজ শাক-সবজি, কেল, ব্রকোলি, পালক শাক, কিউয়ি, আভাকাডো, মুরগির মাংস, সবুজ বিনস, বেকন, ভেজিটেবল অয়েল, সোয়াবীন, দুগ্ধজাত উপাদান, ডিম, ফার্মেন্টেড সোয়াবীন বা জাপানিস নাট্টো ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন কে থাকে।
>> ১০টি পার্সলের স্প্রিঙ্গসে ৯০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে থাকে।
>> এক কাপ কাঁচা পালং শাকে ভিটামিন কে থাকে ১৪৫ মাইক্রোগ্রাম।
৫. ১ টবিল চামচ সয়াবিন তেলে ২৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে থাকে।
৬. আধ কাপ আঙুরে ১১ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে পাওয়া যায়।
৭. হার্ড বয়েল ডিম খেলে ৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে পাবেন।
সূত্র: হেলথলাইন/মেডিকেল নিউজ টুডে
জেএমএস/এমএস