মতামত

সবাই যেন টিকা পায়

এ সময়ের সবচেয়ে ভাল খবর- সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণের আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু কিছুটা দুঃখের খবর- আমরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছি না এবং এতে সারাদেশেই গণটিকা কর্মসূচিতে বিশৃঙ্খলা হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় ধাক্কাধাক্কিতে টিকা নিতে আসা মানুষ আহতও হয়েছেন।

Advertisement

বাংলাদেশ জাতিসংঘের ভ্যাকসিন হিরো উপাধি পাওয়া দেশ। এর কারণও আছে। আমাদের টিকা কর্মসূচি অনেক আগেও থেকেই সমৃদ্ধ। বছরে প্রায় ৪০ লক্ষ শিশুদের ৮০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ক্রমাগতভাবে অর্জন করে আসা স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছে টিকা হিরোর সন্মান। সে দেশ করোনা টিকাদানে টিকাদান কর্মসূচি নিয়েতো কোন সন্দেহ থাকারই কথা নয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও বলতে হচ্ছে, এ পর্যন্ত পরিচালিত করোনা টিকাদান সর্বতোভাবে সফল হয়েছে তা বলা যাবে না।

করোনায় একদিনে মৃত্যূ ২০০ জনের উপরে বা এর কাছাকাছি আছে বহুদিন ধরে। সংক্রমণের হারও অনেক বেশি। তাই রোগ থেকে মুক্তি পেতে কেন্দ্র থেকে প্রান্ত পর্যন্ত মানুষের মাঝে টিকা নেয়ার প্রচণ্ড আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। সরকার নিবন্ধন সহজ করেছে, কেন্দ্র বাড়িয়েছে। এবং পরীক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়ায় সাধারণ মানুষ নিজেদের ব্যাপক হারে টিকাকেন্দ্রে নিজেদের উপস্থিত করছে। মানুষের ব্যাপক সাড়া মিললেও অনেকেই টিকা পাচ্ছেন না৷ কেউ কেউ দুই দিন লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি৷ লম্বা লাইন থাকতেই টিকা শেষ হয়ে যাচ্ছে৷ মারামারি হচ্ছে। সবচেয়ে অবাক লাগছে যে টিকা কেন্দ্রগুলোতো মানা হচ্ছেনা কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যবিধি৷ গাদাগাদি, ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে মানুষ টিকা নিচ্ছে।

এটা একটা ক্যাম্পেইন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছিল ৭ আগস্ট দেশের সব ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন এলাকায়, ৮ ও ৯ আগস্ট ইউনিয়ন ও পৌরসভার বাদ পড়া ওয়ার্ডে এবং ৭ থেকে ৯ আগস্ট সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিকাদান কর্মসূচি চলবে৷ দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে ৮ ও ৯ আগস্ট এবং ১০ থেকে ১২ আগস্ট রেহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫৫ বছর বয়সিদের টিকা দেয়া হবে৷ কিন্তু বাস্তবে তা রক্ষা করা হয় নি।

Advertisement

কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে অনেকে টিকা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। কোনো কোনো কেন্দ্রে টিকার ২/৩ গুণ লোক আসায়, বিপুলসংখ্যক লোক ফিরে গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে। এই হতাশাকে বাড়তে দেওয়া যাবে না। কারণ টিকা পাওয়া প্রতিটি নাগরিকে অধিকার এবং রাষ্ট্রীয় ন্যায্যতার প্রশ্ন। করোনা ভাইরাসের বিস্তার প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি, চলাচলে বিধিনিষেধ, লকডাউনে ব্যর্থ হওয়ার পর আমাদের সামনে একমাত্র উপায় এখন টিকা দান। মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়ে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন খুব সহজ কাজ নয়।

অতিমারির প্রকোপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সর্বজনীন টিকার দাবি দুর্বার হয়ে উঠেছে। সরকার সে লক্ষ্যে করোনা টিকা গ্রহীতার বয়স ২৫ এ নামিয়ে এনেছে। আমরা মনে করি স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আর বন্ধ করে রাখা যাবে না। তাই শিশুদেরও টিকার আওতায় আনতেই হবে এবং সেখানে ব্যবস্থাপনার প্রশ্নটি অনেক বড়। চাহিদার বিপরীতে টিকার জোগান অপ্রতুল, প্রয়োজনের ধারেকাছে নয়। অক্সিজেনের নাটকীয় প্রাণঘাতী অভাবের ফলে টিকা নিয়েও লোকের উদ্বেগ বেড়ে চলেছে। সরকারের চেষ্টা আছে টিকা নিয়ে আসার যেকোন উপায়ে। কিন্তু এটি কোন তৈরি পণ্য নয় যে চাইলাম আর গুদাম থেকে কেউ টিকা বের করে পাঠিয়ে দিল। আমদানি কত হচ্ছে, কত দামে হচ্ছে এবং কোথা থেকে কতটুকু আসছে তার একটা স্বচ্ছ ধারণা মানুষের কাছে প্রকাশিত থাকা দরকার।

আমরা ঠিকা উৎপাদনের কথাও শুনছি। তারও একটা রোড ম্যাপ করা প্রয়োজন। টিকা নিতে যাচ্ছে, না পেয়ে ফিরছে – এই বাস্তবতায় জনগণের ক্ষোভ ও হতাশা মোকাবিলার সুন্দর ব্যবস্থা থাকাও প্রয়োজন। তাই টিকা দেওয়ার আগেই সব লোকালয়ে খানাভিত্তিক জরিপ করে তালিকা তৈরি করে ফেলা দরকার। এতে করে তালিকাভুক্তদের বাইরে কেউ টিকা নিতে আসলে, তাদের সহজেই চিহ্নিত করা সহজ হবে। তালিকা করতে পারলে শতভাগ টিকা দান করা সম্ভব হবে। জনপদ ধরে ধরে টিকা দিতে হবে যেন কেউ বাদ না যায়। কারণ হয়তো এমন এক সময় আসবে যে টিকার সার্টিফিকেট বিদেশ গমনসহ নানা কাজে প্রয়োজনীয় দলির হিসেবে বিবেচিত হবে।

টিকাই পারে সংক্রমণের তীব্রতা কমাতে। এ কথা এখন প্রমাণিত। প্রায় সব টিকাই দিতে হচ্ছে দুই দফায়। গোটা বিশ্বে এমনই চলছে। বাংলাদেশ চার ধরনের রোল আউট করেছে। এর ব্যবস্থাপনায় সামান্য ত্রুটি বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। প্রতি নাগরিককে দু’ডোজ করে টিকা দিতে হবে। প্রথম দফার টিকাকরণ হয়ে থাকলে পরবর্তীটি নেওয়ার সময়ও চলে আসে একটা পর্যায়ে। তাই এক ডোজ টিকায় স্বস্তি নেই। ডোজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত চিন্তা থেকেই যাচ্ছে প্রত্যেক গ্রহীতার। করোনার সঙ্গে লড়াই করার ক্ষমতা ঠিক মতো তৈরি করতে প্রত্যেকের জন্য দ্বিতীয় ডোজ নিশ্চিত করা জরুরি। টিকা দান সম্পূর্ণ হলে তবেই প্রতিষেধকের কার্যকারিতা বাড়বে।

Advertisement

লেখক : প্রধান সম্পাদক, জিটিভি।

এইচআর/এমএস