জাতীয়

‘সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কোনোটিই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি’

করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশনায় গত ২৩ জুলাই থেকে ১০ আগস্টের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে পালিত না হলেও জনসমাবেশ হওয়ার মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান বন্ধ থাকায় সংক্রমণ হার কমার ক্ষেত্রে উন্নতি হয়। তবে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কোনোটিই স্বস্তিদায়ক অবস্থায় আসেনি।

Advertisement

বিধিনিষেধ শিথিলতার ক্ষেত্রে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করছে। এর ফলে সংক্রমণ আবার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তাতে অর্থনীতি আরও বেশি হুমকির মুখে পড়বে। বিধিনিষেধ আরও ১-২ সপ্তাহ চলমান রাখতে পারলে এর পুরোপুরি সুফল পাওয়া যেত।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির ৪৪তম অনলাইন সভায় সদস্যরা এই অভিমত ব্যক্ত করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ।

শুক্রবার (১৩ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।

Advertisement

কমিটির সদস্যদের উপস্থিতিতে বিস্তারিত আলোচনা শেষে সভায় নিম্নলিখিত সুপারিশসমূহ গৃহীত হয়:

১. সারাদেশে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি ও এর নিয়ন্ত্রণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনায় সাম্প্রতিককালে সরকারের দ্রুত বিধিনিষেধ শিথিল করার/তুলে নেয়ার সিদ্ধান্তে সভা উদ্বেগ প্রকাশ করে।

২. জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি জীবিকা ও দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার সরকারের দায়িত্ব উপলব্ধি করে সরকারের গৃহীত সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করে।

৩. ন্যূনতম সভা/সমাবেশ, সামাজিক অনুষ্ঠান, পর্যটন/বিনোদন কেন্দ্র, কমিউনিটি সেন্টার ইত্যাদি আরও কিছুদিন বন্ধ রাখা।

Advertisement

৪. রেস্টুরেন্ট-ক্যাফেটেরিয়াতে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা না রেখে কেবলমাত্র বিক্রি করার অনুমতি দেয়া।

৫. সক্ষমতার অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহন চলাচল।

৬. যে ক্ষেত্রে সম্ভব বাড়িতে বসে কাজ করা ও অনলাইন সভা/কর্মশালা/প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখে অফিস খোলা রাখা।

৭. শতভাগ সঠিকভাবে তিন লেয়ার বিশিষ্ট মাস্ক পরার নিশ্চয়তায় ও অন্যথায় পুনরায় বন্ধ করার বিধান রেখে অফিস, আদালত, ব্যাংক, দোকানপাট, বাজার খোলা রাখা।

সব ক্ষেত্রে শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কোভিড -১৯ এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয় জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

সভায় সরকারের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কার্যক্রম বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সদ্য সমাপ্ত ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে এক সপ্তাহে ৫০ লক্ষাধিক মানুষকে ভ্যাকসিন দেয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অভিনন্দন জানানো হয়।

বিভিন্ন মহল থেকে ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন বিষয়ে বিভিন্ন মতামত দেয়ায় জনমনে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। কমিটি মনে করে ভ্যাকসিন কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে সরাসরি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বললে এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না।

সভায় গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের কোভিড-১৯ টিকা দেয়ার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়। গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের টিকা দেয়ার ব্যবস্থা আরও সহজ ও নিরাপদ করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়। প্রয়োজনে এজন্য টিকাকেন্দ্র নির্দিষ্ট করা যেতে পারে।

জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সভাপতি স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ নিকটবর্তী যেকোনো তারিখ থেকে এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সে দ্বিতীয় বর্ষ ও পঞ্চম বর্ষের ক্লাস চালুকরণের বিষয়ে ২১ জুলাই জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির মতামত চেয়ে চিঠি দেয়। কমিটির সব সদস্যরা এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। ইতোমধ্যে এ সব ছাত্র/ছাত্রীদের দুই ডোজ টিকা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সাপেক্ষে প্রাথমিকভাবে এই দুই বর্ষের ক্লাস শুরু করার পক্ষে কমিটি মত দেন। তবে সেক্ষত্রে তাদের পরামর্শ হলো-

ক) ক্লাস শুরুর আগে সব ছাত্র/ছাত্রীদের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের ওপর প্রশিক্ষণ দিতে হবে। খ) শতভাগ সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। গ) হাসপাতালের ওয়ার্ডে ও ক্লাসে ছাত্র/ছাত্রীদের সঠিকভাবে সুরক্ষা সামগ্রী ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। ঘ) ছাত্র/ছাত্রীদের সংক্রমণের ওপর নজরদারি রাখতে হবে। ঙ) সংক্রমিত ছাত্র/ছাত্রীদের চিকিৎসা/ আইসোলেশন এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ছাত্র/ছাত্রীদের ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করতে হবে।

এমইউ/এমআরআর