দেশজুড়ে

নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রীর আত্মহনন : তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি

নারায়ণগঞ্জ শহরের গণবিদ্যা স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী উম্মে হাবিবা শ্রাবণীর আত্মহননের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হাবিবার আত্মহননের ঘটনায় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশনার পর জেলা প্রশাসন ওই কমিটি গঠন করে। কমিটির সদস্যরা হলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজা আক্তার চৌধুরী, শিক্ষা অফিসার আবদুস সামাদ ও সহকারী কমিশনার (শিক্ষা) ফারহানা আফসানা চৌধুরী।অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শাহীন আরা বেগম জাগো নিউজকে জানান, তিন সদস্যের কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের পরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।উম্মে হাবিবা শ্রাবণী গণবিদ্যা নিকেতন স্কুলের নবম শ্রেনির বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় ছাত্রী। সে শহরের নিতাইগঞ্জ ছালাপট্টি এলাকার মো. হাবিবউল্লাহর মেয়ে। তার মা সেতারা বেগম শহরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল সংলগ্ন মাতৃসদনের নার্স।এ ঘটনায় এর আগে গণবিদ্যা স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্নাকে বহিষ্ককার করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে পরিদর্শক ও স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিন বেগমকে ঘটনার কারণ লিখিত আকারের জমা দিতে তিন দিনের সময় দেয়া হয়েছে।গণবিদ্যা নিকেতনের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন মুকুল জাগো নিউজ বলেন, পরিবারের পক্ষ থেকে তেমন কোনো অভিযোগ না দেয়ায় এবং ওই ছাত্রীর লিখে যাওয়া চিঠির ওপর ভিত্তি করে কামরুল হাসান মুন্নাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষিকা নাসির বেগমকে ওইদিনের ঘটনা লিখিতভাবে জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার শহরের গণবিদ্যা নিকেতন বার্ষিক পরীক্ষার অংশ হিসাবে পদার্থবিজ্ঞান পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উম্মে হাবিবা শ্রাবণী। পরীক্ষা চলাকালীন অসদুপায় (নকল) অবলম্বনের অভিযোগে পরিদর্শক নাসরিন বেগম নিজে শ্রাবণীকে আটক করে স্কুলের প্রধান শিক্ষক এম এ কাইয়ুমের কাছে নিয়ে যায়।এসময় ওই কক্ষে থাকা স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্না শিক্ষার্থী শ্রাবণীকে উপুর্যপরি চড়থাপ্পর মারেন এবং গালমন্দ করে পরিবারের কাছে অভিযোগ করবে বলেন। পরে ওইদিনের পরীক্ষা থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়। এর অপমান সইতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে বলে অভিযোগ করে শ্রাবণীর পরিবারের সদস্যরা। এছাড়াও হাবিবা আত্মহত্যার কারণ হিসেবে স্কুলের শিক্ষিকা নাসরিন বেগম ও খণ্ডকালীন শিক্ষক কামরুল হাসান মুন্নার নাম উল্লেখ করে চিরকুট লিখে যায়।গত শুক্রবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে আত্মহননকারী উম্মে হাবিবা শ্রাবনীর ময়নাতদন্ত শেষে তার গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। হাবিবউল্লাহ জানান, তারা নারায়ণগঞ্জ এসে এ ব্যাপারে আইনহত ব্যবস্থা নেবেন।আত্মহত্যার আগে রেখে যাওয়া চিরকুটে শ্রাবণী লিখে রাখে। দুই পাতার ওই চিরকুটে লেখা ছিল, ‘প্রিয় মা, আমার এই অবস্থার জন্য দায়ী আমাদের স্কুলের নাসরিন মিস। সে বিনা কারণে আমার পরীক্ষা দেয়াটা বাতিল করে দিয়েছে। মা আমি তাদেরকে অনেক বলছি। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনে নাই, মা মুন্না স্যার বিনা কারণে আমারে মারছে, সবাই আমারে বিনা কারণে মারছে, সাজা দিছে। পুরো স্কুল আমার নিয়ে হাসাহাসি করতাছে। মা আমি এইডা সহ্য করতে পারি নাই। তাই আমি আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলাম। মা যদি পারেন আমারে মাফ করে দিয়েন। জুয়েল ভাইরে বইলেন আমারে মাফ করে দিতে। ইতি হাবিবা। মা আমারে কাটাছিরা করতে না কইরেন।’মো. শাহাদাত হোসেন/বিএ

Advertisement