ধর্ম

মহররম মাসের বিশেষ আমল

রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো মহররম। আবার বছরে যে ৪টি সম্মানিত মাস রয়েছে তান্মধ্যেও মহররম একটি। যা হিজরি বছরের প্রথম মাস৷ এটি মহান আল্লাহর মাস হিসেবে পরিচিত। মর্যাদার এ মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদার কারণে বিশেষ আমল ও ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন বিশ্বনবি। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় তা প্রমাণিত। তাহলো-

Advertisement

১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের পর রোজার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস হলো আল্লাহর মাস মহররম।’ (মুসলিম)

২. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতে মুহাম্মাদিকে এই মাসে বিশেষ আমলের নির্দেশ দিয়েছেন। ১০ মহররম তিনি রোজা রাখতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় হিজরতের পর দেখেন ইয়াহুদিরা (হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুক্তির স্মরণে) এদিন রোজা পালন করছে। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমরা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের অনুসরণ করার ব্যাপারে তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। তিনি নিজে সেই (আশুরার) দিনের রোজা পালন করলেন এবং সাহাবাদেরকেও (এই আশুরার দিন রোজা) নির্দেশ দিলেন।’ (বুখারি)

৩. ইয়াহুদিদের অনুসরণ যেন না হয় সে জন্য দুইদিন রোজা পালনের কথা বলেছেন বিশ্বনবি। আশুরা উপলক্ষে ইয়াহুদিরা ১ দিন (আশুরার) রোজা রাখতো। সে কারণে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের ব্যতিক্রম করতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি যদি আগামী বছর বেঁচে থাকি তাহলে ৯ এবং ১০ মহররম দুই দিনই রোজা রাখবো।’ (মুসলিম)

Advertisement

৪. মহররম মাসের রোজা রাখার বিশেষ আমলের ভিত্তিহজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাদিনাতে এলেন; তখন মদিনার ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করত। তারা জানাল, এ দিন হজরত মুসা আলাইহিস সাল্লাম ফেরাউনের উপর বিজয় লাভ করেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবিদের বললেন, মুসা আলাইহিস সালামের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত হওয়ার ব্যাপারে তাদের চেয়ে তোমরাই অধিক হাকদার। কাজেই তোমরা রোজা রাখ।’ (বুখারি)

হাদিসের আলোকে প্রমাণিত যে, মহররম মাস একটি মহান বিজয়ের মাস। এ মাসের ১০ তারিখ মহান আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে তাঁর সঙ্গী বনী ইসরাইলকে ফেরাউনের আক্রমণের হাত থেকে উদ্ধার করেন আর ফেরাউন তার সঙ্গীরাসহ নীল নদে ডুবে মারা যান।

৫. মহররমের রোজার বিশেষ ফজিলতবছরজুড়ে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় কত শত গোনাহ-ই না করে থাকে মানুষ। মহররম তথা আশুরার রোজা এতই মর্যাদাপূর্ণ যে এটি বিগত এক বছরের সব (সগিরা) গোনাহ মাফের ওয়াসিলা হতে পারে। হাদিসে এসেছে-‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহর কাছে আশা করি তিনি বিগত এক বছরের গোনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (মুসলিম)

৬. মহররম মাসে যেসব আমল ও কাজ নিষিদ্ধমুহাররম মাস আসলে এমন সব রুসুম রেওয়াজ ও নাম সর্বস্ব উৎসব পালন করা হয়; যার সম্পর্কে কুরআন-সুন্নাহভিত্তিক প্রমাণ পাওয়া যায় না।এ দিনটিকে কেউ কেউ শুধু কারবালার মাতম ও শোকানুষ্ঠান হিসেবে উদযাপন করে থাকেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় নাতি হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর হৃদয়বিদারক শাহাদাত দিবস হিসেবে অনেকে নিজেদের শরীরে আঘাত করতে থাকে; শরীর রক্তাক্ত করতে থাকে।কেউ কেউ তাজিয়া মিছিল তথা যুদ্ধের সাজ সাজ পোশাকে ঘোড়া সাজিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। আবার অনেকে হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু কৃত্রিম মাজার তৈরি করে রাস্তায় প্রদর্শণীতে নেমে পড়ে। আশুরা উপলক্ষ্যে এসব আয়োজন ও আমল বর্জন করাও সাওয়াবের কাজ। এ সব আমলের ব্যাপারে ইসলামের কোনো অনুমোদনই নেই।

Advertisement

মুমিন মুসলমান শুধু সেসব আমলই করবে; যেসব আমলের ব্যাপারে অনুমোদন ও নির্দেশ দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।

মনে রাখা জরুরিমহররম আল্লাহ তাআলার কাছে সম্মানিত মাসসমূহের মধ্যে একটি। এই মাসে বেশি বেশি ভালো কাজে নিজেকে তথা প্রিয়জনদের উদ্বুদ্ধ করাই ঈমানের একান্ত দাবি। এ মাসজুড়ে বেশি বেশি দান সাদাকাহ করা। ফরজ আমলের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সব গোনাহ থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখার চূড়ান্ত প্রতিজ্ঞা করা জরুরি। তবেই এ সন্মানিত মাস মহররমের প্রকৃত সুফল পাবে ঈমানদার মুসলমান।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মহররম মাসের মর্যাদা রক্ষার এবং আশুরার ৯ ও ১০ তারিখ রোজা পালনসহ ইসলামের কল্যাণে আশুরার ঘটনাবহূল আলোচনা মানুষের কাছে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/এমএস