সন্ধ্যা ছয়টা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে বাসের অপেক্ষায় বেশ কিছু যাত্রী দাঁড়িয়ে আছেন অনেকক্ষণ ধরে। কিছুক্ষণ পরপর একটি করে বাস আসছে। একদিকে বাস কম অন্যদিকে সবগুলো বাসই গেটলক। তার ওপর আবার যাত্রীবোঝাই। বিকেল থেকে অফিস শেষ হওয়ার পরপরই রাজধানীজুড়ে তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। যানজটের কারণে যাত্রীদেরও অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
Advertisement
এর মধ্যে আসন সংখ্যার সমান যাত্রী নিয়ে আবারও সড়কে চলতে শুরু করেছে গণপরিবহন। সরকারঘোষিত বিধিনিষেধ শিথিলের পর বুধবার (১১ আগস্ট) ভোর থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে অনেক চেষ্টার পরও বাসে উঠতে না পেরে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আজিজুল ইসলাম। তিনি জানান, এতদিন লকডাউনের মধ্যে রিকশায় যাতায়াত করেছি। তবে আজ থেকে বাস চলাচল করলেও ৩০ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকার পরেও বাসে উঠতে পারিনি। এদিকে আজ থেকে মূল সড়কে রিকশাও চলাচল করতে দিচ্ছে না।
শাহবাগ মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী রুবিনা ইয়াসমিন। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাননি। অফিস ছুটি হয়েছে তাই সব বাস ভরে আসছে। কোনো বাসই খালি আসছে না। অনেক চেষ্টা করেও তিনি ভিড় ঠেলে বাসে উঠতে পারছেন না।
Advertisement
অফিস শেষে বাসায় ফিরতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয় মেয়েদের উল্লেখ করে মতিঝিল মোড়ের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নাজনিন আক্তার বলেন, যত ভোগান্তি মেয়েদের। লকডাউনের মধ্যে যাতায়াতের খরচ বেশি হলেও শান্তিতে যাতায়াত করেছি। আজ সকালে আসার জন্য ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠি আবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরতে রীতিমত যুদ্ধ করতে হচ্ছে। বেশিরভাগ বাসেই সিট খালি নেই। খালি থাকলেও তারা মেয়েদের উঠাতে চাচ্ছে না।
গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষমাণ কামাল হোসেন বলেন, অফিস শেষ করলাম। এখন গাড়ি নাই। বাসাই যাব কেমন করে? লকডাউন শেষ হলেও বাস কম। একদিকে বাস কম অন্যদিকে যানজট। কীভাবে বাসায় যাব সেই চিন্তাই করছি এখন।
অন্য এক যাত্রী রফিকুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভাই অর্ধেক বাস আজ থেকে চালু হলো। কিন্তু এতে লাভ কী হলো? বাসে ঠিকই তো ফুল যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে। অনেক বাসে আবার দাঁড়িয়েও যাত্রী নিতে দেখা গেছে। এভাবে সিদ্ধান্ত নিলে করোনা তো কমবেই না উল্টো আরও বাড়বে।
সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, অফিস শেষ করেছি বাসায় যেতে হবে। এদিকে রাস্তায় বাস কম। এখন আমরা কী করতে পারি। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে চার-পাঁচজন শেয়ার করে সিএনজিতে চলাচল করতে হচ্ছে।
Advertisement
বুধবার সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, লকডাউন শিথিলের প্রথম দিন সকালেই রাজধানী প্রায় চিরচেনা রূপে ফিরে এসেছে। বিভিন্ন রাস্তাঘাটে রিকশা, সাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ভ্যান গাড়ি, কাভার্ডভ্যান, ছোট-বড় বাস, জিপগাড়ি ও মাইক্রোবাসসহ অসংখ্য যানবাহন চলাচল করছে। লকডাউনের কারণে এতদিন অধিকাংশ এলাকার রাস্তাঘাটে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের অনেকটা নির্বিকার সময় কাটলেও আজ ভোর থেকেই বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তৎপরতা দেখা যায়। সকালের দিকে সরকারি-বেসরকারি অফিসগামীদের ভিড় থাকায় বেশ কয়েকটি রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় ট্রাফিক পুলিশকে ব্যতিব্যস্ত হয়ে যানজট সামাল দিতে দেখা যায়।
এদিকে, গণপরিবহন চালুর বিষয়ে সার্বিক নির্দেশনা দিয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)৷
নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে -
>> আসন সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। দাঁড়িয়ে নেয়া যাবে না কোনো যাত্রী। সড়কপথে গণপরিবহন চলাচলের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন (সিটি করপোরেশন এলাকায় বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক) নিজ নিজ অধিক্ষেত্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সংশ্লিষ্ট দফতর, সংস্থা, মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিদিন মোট পরিবহন সংখ্যার অর্ধেক চালু করতে পারবে।
>> আগের ভাড়ায় গণপরিবহন চলবে। ৬০ শতাংশ বর্ধিত ভাড়া আর প্রযোজ্য হবে না। কোনোভাবেই আদায় করা যাবে না অতিরিক্ত ভাড়া।
>> গণপরিবহনের যাত্রী, চালক, সুপারভাইজার, কন্ডাক্টর, হেলপার-ক্লিনার এবং টিকিট বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করতে হবে। তাদের জন্য রাখতে হবে প্রয়োজনীয় হ্যান্ড স্যানিটাইজার।
>> যাত্রা শুরু ও শেষে যানবাহন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নসহ জীবাণুনাশক দিয়ে জীবাণুমুক্ত করতে হবে। এছাড়াও যাত্রীদের হাতব্যাগ, মালপত্র জীবাণুনাশক ছিটিয়ে জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে যানবাহনের মালিকদের।
>> গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
টিটি/এআরএ/এএসএম