জাতীয়

তরুণদের শিক্ষা-কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতে টিআইবির ৯ সুপারিশ

মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন সশরীরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা, কর্মসংস্থানের অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যত কর্মসংস্থানের চ্যালেঞ্জে দেশের তরুণ সমাজ মানসিক ও আর্থ-সামাজিক গভীর সঙ্কটপূর্ণ সময় পার করছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

Advertisement

এ পরিস্থিতি বিবেচনায় যুব জনগোষ্ঠীর শিক্ষা ও ভবিষ্যত কর্মসংস্থান নিশ্চিতে দ্রুত ও কার্যকর মনোযোগ ও বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি। একইসঙ্গে করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নয়টি সুপারিশ করে টিআইবি।

বুধবার (১২ আগস্ট) ‘আন্তর্জাতিক যুব দিবস’ উপলক্ষে গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এসব সুপারিশ করেন।

তিনি বলেন, ‘দেশে করোনা অতিমারির কারণে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার ১৬ মাস পার হলেও সেগুলো খোলার ব্যাপারে এখনো পর্যন্ত সমন্বিত ও কার্যকর কোনো কর্মপরিকল্পনা নেয়া যায়নি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনলাইনে ক্লাসের চেষ্টা করা হলেও কারিগরি দক্ষতা, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগের অভাবে তা অনেকাংশেই সফল হয়নি। বরং এটি শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন এক বৈষম্যের মুখোমুখি করেছে।’

Advertisement

ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ‘বেশ কিছু গবেষণা বলছে- গ্রামাঞ্চলের ৬৩ শতাংশ পরিবারের ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই এবং ব্যবহারের দক্ষতা নেই ৮৭ শতাংশ পরিবারের। ফলে গ্রামীণ ও আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে। এতে ধনী-গরিব ও শহর-গ্রামের মধ্যে শিক্ষা পাওয়ার সুযোগের ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রকট হয়েছে; যা মোকাবিলায় কার্যকর কোনো সরকারি উদ্যোগ এখনো দৃশ্যমান নয়। এটি সত্যিই হতাশার।’

দীর্ঘসময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এবং অতিমারির প্রভাবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত পরিবারগুলোর আয় কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে উল্লেখ করে ড. জামান বলেন, ‘সাম্প্রতিক কয়েকটি গবেষণার তথ্যানুযায়ী অতিমারির থাবায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে যথাক্রমে ১৯ ও ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে চলে গেছে।’

‘অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কায় বাল্যবিবাহ বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। বিপুল সংখ্যক এ শিক্ষার্থীদের কীভাবে আবারো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনা হবে? আদৌ ফিরিয়ে আনা যাবে কি-না? সেটি নিয়েও কারো মাথাব্যাথা আছে বলে মনে হচ্ছে না। শিক্ষাখাতের নতুন এসব চ্যালঞ্জে মোকাবিলায় নতুন করে যে বাড়তি বিনিয়োগ বা সহায়তা প্রয়োজন তার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আলাদাভাবে কোনো বরাদ্দ এখনো দৃশ্যমান নয়, যাকে অপরিণামদর্শী বলাটা মোটেও বাহুল্য হবে না’ যোগ করেন টিআইবি পরিচালক।

টিআইবির ৯ সুপারিশ—

Advertisement

১. শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বল্প সময়ের মধ্যে কোভিড-১৯ এর টিকা প্রদান করে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিদ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ খুলে দিতে হবে।

২. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে সব পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ণ কার্যক্রম নিশ্চিত করে পরবর্তী স্তরে উত্তরণের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৩. ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনতে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। বিশেষ করে- নারী, প্রতিবন্ধী, আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল, আদিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে নিরবচ্ছিন্ন শিক্ষাগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

৪. স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মাধ্যমে তরুণদের যথাযথ কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।

৫. তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য প্রণোদনার পাশাপাশি করোনায় যেসব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাত থেকে তরুণরা কর্মহীন হয়েছে, বিশেষ প্রণোদনার মাধ্যমে সেগুলো চালুর উদ্যোগ নিতে হবে।

৬. কারিগরি ও বিশেষ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিকল্প পেশার (যেমন- আউটসোর্সিং, ফ্রিল্যান্সিং) জন্য কর্মহীন তরুণ বা নতুন গ্র্যাজুয়েটদের প্রস্তুত করতে হবে।

৭. সরকারি-বেসরকারি যেসকল চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে, অবিলম্বে সেগুলোর প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং নতুন বিজ্ঞপ্তির ক্ষেত্রে কোভিড অতিমারির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে।

৮. সব চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া দুর্নীতিমুক্ত রেখে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে সমান প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. তরুণ সমাজসহ সব নাগরিকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীন মত প্রকাশের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য আইনি ও নীতিকাঠামোর প্রয়োজনীয় আমূল সংস্কার করতে হবে।

এইচএস/এএএইচ/এএসএম