বরেন্দ্র অঞ্চলে কবুতরের বাসা হিসেবে মাটির হাঁড়ি এখনো টিকে আছে। এক সময় মাটির ঘরের কার্নিশে হাঁড়িতে ঝাঁক বেঁধে কবুতর বসে বাকবাকুম ডাক শোনাত। কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সেই ডাক এখন খুব বেশি শোনা যায় না। তবে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে।
Advertisement
জানা যায়, নাচোলের কয়েকটি গ্রামে কিছু শৌখিন মানুষ তাদের শখ ও বাড়তি উপার্জনের আশায় এখনও কবুতর পালন করছেন। তাদের কল্যাণেই আজও টিকে আছে মাটির হাঁড়ি। এলাকার দোতলা ঘরের কার্নিশে ঝুলছে মাটির হাঁড়ি। নিচে পালন করছেন গরু, উপরে কবুতর।
নাচোল উপজেলার হাটবাকল গ্রামের আজিম আলী বলেন, ‘১৫-২০ বছর আগে আমার মা ১৫ টাকায় একজোড়া কবুতর এনেছিলেন। তখন থেকেই আমাদের বাড়িতে কবুতর আছে। এখন প্রায় ১০০ জোড়া কবুতর। প্রতি মাসে ২৫-৩০ জোড়া বাচ্চা বিক্রি করি। এক জোড়া বিক্রি হয় ২০০-২৫০ টাকা।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের মাটির ঘরের দোতলার কার্নিশে সারিবদ্ধভাবে বাঁধা আছে ২০০ মাটির হাঁড়ি। কবুতর ওই হাঁড়িতে যেন সহজেই প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য হাঁড়ির নিচে লম্বা বাঁশ বাঁধা আছে।’
Advertisement
আলামিন নামে একজন বলেন, ‘কবুতরকে খাবার দেওয়া লাগে না। মাঠে গিয়েই খাবার সংগ্রহ করে। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করা যায়। এভাবে পালন করলে ঘর-বাড়ির চাল নোংরা করে। আমার বাড়িতে গলা, গোবিন্দ, গিরিবাজ, শিরাজ জাতের কবুতর আছে।’
উপজেলার ইসলামপুরের আনারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাড়িতে প্রায় ৭০ জোড়া কবুতর আছে। সংসারের খরচ চলে যায় কবুতরের বাচ্চা বিক্রি করে। আমার উপার্জন জমা করি। কবুতরগুলো মাঠে সরিষা, কাউন, আখরি ও খুদ খেয়ে থাকে। তবে ফসলে কীটনাশক ও মহামারির কারণে মারা যায় অনেক কবুতর।’
টিকইল এলাকার হোসেন আলী বলেন, ‘ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কবুতর কিনেছিলেন। কিন্তু একবার বাচ্চা বিক্রি করে অনেক টাকা পাওয়ার পর কবুতর বাড়াতে থাকি। এখন কবুতর বিক্রির টাকা দিয়েই চলে সংসার। এখন বাড়ির দোতলার কার্নিশে প্রায় ১৫০টি মাটির হাঁড়ি আছে। তাতে প্রায় ৯০ জোড়া বিভিন্ন জাতের কবুতর আছে।’
সোহান মাহমুদ/এসইউ/এমএস
Advertisement