জাগো জবস

সাজিদের স্বপ্নের নাম ‘ইকারিগরি’

সাজিদ কবীর সাজি। চট্টগ্রামে জন্ম এবং বেড়ে ওঠা এ তরুণের খোঁজ আমরা পেয়েছি তার দারুণ সব কাজের কারণেই। বর্তমানে এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে চীনের নানচাং হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে পড়াশোনা করছেন। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সার্ভিস প্রোভাইড করেন। নিজের প্রতিষ্ঠান ইকারিগরির কার্যক্রমও পরিচালনা করেন। ছোটবেলা থেকেই চাকরি না করে চাকরি দেওয়ার কথা ভাবতেন তিনি। স্বাধীন পেশাজীবী হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করলেও স্কুল জীবন থেকেই উদ্যোক্তা হওয়ার কথা ভাবতেন। সেই স্বপ্ন এখন সফল।

Advertisement

সম্প্রতি তার সফলতার সেসব গল্প শুনিয়েছেন জাগো নিউজকে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফিচার লেখক বেনজির আবরার—

জাগো নিউজ: শুরুতেই আপনার ছোটবেলার গল্প বলুন— সাজিদ কবীর সাজি: দুরন্ত শৈশব ছিল আমার। ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রথম আয় ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে। বড় ভাইদের সঙ্গে বিভিন্ন ব্যবসায় সম্পৃক্ত ছিলাম স্কুল জীবন থেকেই। পরিবারের সাপোর্ট ছিল। জীবনের সব পরিস্থিতিতে পরিবার পাশে ছিল। বিশেষ করে মায়ের সাপোর্ট সব সময় পেয়েছি।

জাগো নিউজ: ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের গল্প শুনতে চাই—সাজিদ কবীর সাজি: কলেজ জীবনের শুরুর দিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে ক্যারিয়ার শুরু। পাশাপাশি উদ্যোক্তা হিসেবে অনলাইনে প্রিন্ট অন ডিমান্ড, ড্রপশিপিং ইত্যাদি নিয়ে কাজ করি। এ সময়ে ডিজিটাল মার্কেটিং ও প্রেস রিলিজ নিয়ে বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সার্ভিস দিয়ে ছিলাম। ব্র্যান্ডিং নিয়ে প্রচুর কাজ ও পড়াশোনা করা হয় ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করতে গিয়ে। পরে এ বিষয়ে স্পেশালাইজেশন তৈরি করি। বর্তমানে ইকারিগরির মাধ্যমে এবং মার্কেটপ্লেসে ব্র্যান্ডিং সম্পর্কিত সব ধরনের সার্ভিস দিচ্ছি।

Advertisement

জাগো নিউজ: ইকারিগরির আইডিয়া কবে মাথায় এলো? সাজিদ কবীর সাজি: ২০১৯ সালে ইকারিগরি প্রতিষ্ঠার কথা ভাবি। বাংলাদেশে এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠিত ভালো প্রতিষ্ঠানের অভাব আছে। অনেকে পাবলিক রিলেশন, ডিজিটাল প্রেজেন্স, ব্র্যান্ডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে অবগত নন। কারণ এগুলো আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হয় না। তরুণ এবং ক্ষুদে উদ্যোক্তা, তারকা, শিল্পী কিংবা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সঠিক গাইডলাইন পায় এবং আমাদের দেশ থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের তুলে ধরতে পারে—সে লক্ষ্যেই ইকারিগরির যাত্রা শুরু। এ ব্র্যান্ডিংয়ের কাজ বিদেশি অনেক ক্লায়েন্টের জন্য আমরা করি। নিজ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এবং বিশেষ করে আমার মতো তরুণ উদ্যেক্তারা যাতে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হারিয়ে না যায়, এ ভাবনাও কাজ করেছে। আমরা এফরডেবল খরচে বিভিন্ন প্যাকেজ দিচ্ছি। যাতে আন্তর্জাতিক ও বিশ্বমানের ব্র্যান্ডিং, কনটেন্ট ক্রিয়েশন ও মার্কেটিং করে থাকি। এতে একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডও তৈরি হবে। সব সময় চাকরি করার চেয়ে চাকরির ক্ষেত্র তৈরির ব্যাপারে ভাবতাম। ইকারিগরির মাধ্যমে নতুন একটি সেক্টরে বাংলাদেশ থেকেও দক্ষ প্রফেশনাল তৈরির ব্যাপারটিও মাথায় ছিল। এমন ভাবনা থেকেই যাত্রা শুরু।

জাগো নিউজ: আপনাদের সফলতার ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে যদি বলতেন— সাজিদ কবীর সাজি: আমাদের সফলতার জায়গা হলো, বাংলাদেশে আমরাই প্রথম এমন সার্ভিস নিয়ে এসেছি। আমরা দুইশ’রও বেশি আন্তর্জাতিক ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করেছি। মার্কেটপ্লেসগুলোয় প্রত্যেকেই টপ রেটেড সেলার। সবচেয়ে বড় ব্যাপার, আমাদের আছে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সঙ্গে এফিলিয়েশন। পাশাপাশি ডিজিটাল মার্কেটিং, কনটেন্ট তৈরি, ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, এফ-কমার্স ম্যানেজমেন্ট, প্রফেশনাল ব্র্যান্ডিং ও রেপুটেশন ম্যানেজমেন্টসহ সফল অনলাইন ক্যারিয়ার বা প্রেজেন্স গড়তে যা কিছু দরকার; তার সবই আমরা এক ছাতার নিচে দিচ্ছি। যা সম্পূর্ণ নতুন একটি কনসেপ্ট।

এছাড়া প্রতিটি ক্লায়েন্টের প্রয়োজন এবং চাহিদা অনুযায়ী সার্ভিস প্রোভাইড করি। যাতে আমাদের ক্লায়েন্টরা অর্থের বিপরীতে সবচেয়ে বেশি ভ্যালু খুঁজে পান। আমরা বাছাই করা টপ রেটেড প্রফেশনালদের নিয়ে কাজ করি। আমরা প্রথম বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান যা আন্তর্জাতিক পাবলিক রিলেশন, ব্র্যান্ড ও রেপুটেশন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কাজ করছি। আমাদের সব সার্ভিস কনফিডেনশিয়াল। আমরা হলাম সেই শুভাকাঙ্ক্ষীর মতো, যে গোপনে আপনার সব গুছিয়ে দেয়, খেয়াল করে রেখে দেয়; যাতে আপনি মূল বিষয়ে ফোকাস করতে পারেন। অর্থাৎ আপনার কাজে কিংবা প্রোডাক্টে বাকিসব আমাদের দ্বায়িত্ব। আমাদের মাধ্যমে তরুণ এবং নতুন উদ্যেক্তারা কোনো কম্প্রোমাইজ ছাড়াই আন্তর্জাতিক মানের ব্র্যান্ডিং সার্ভিস নিয়ে সফল হতে পারছেন। আমাদের মতে, ক্লায়েন্টের সাফল্যই আমাদের সবচেয়ে বড় সফলতার জায়গা।

জাগো নিউজ: দেশের মার্কেটপ্লেসের প্রমোশনে কী কী ডিজিটাল মাধ্যমে কাজের সুযোগ বাড়ছে?সাজিদ কবীর সাজি: আমরা কিন্তু ডিজিটাল সময়ে বসবাস করছি। বর্তমানে প্রায় সবকিছুই অনলাইনে করা যাচ্ছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদি প্লাটফর্মেও কাজের সুযোগ বাড়ছে। উদ্যেক্তা হওয়ার সুযোগ যেমন আছে; তেমনই স্কিল অর্জন করে সার্ভিসও প্রোভাইড করা যাচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে, প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানেরই অনলাইনে নিজেদের অস্তিত্ব তৈরির প্রয়োজন পড়ছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মগুলোই এখন একেকটি মার্কেটপ্লেস। কাজের চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই সুযোগও বাড়ছে।

Advertisement

জাগো নিউজ: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কে বলুন— সাজিদ কবীর সাজি: আমাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো—বর্তমান কার্যক্রমগুলো আরও বড় পরিসরে পরিচালনা করা। এছাড়া একটি এডুকেশন হাব তৈরি করা। যেখানে আমাদের সব ক্লায়েন্ট স্পেশাল অ্যাক্সেস ও সাপোর্ট পাবেন। পাশাপাশি নিজের ইনফ্লুয়েন্স, ব্যবসা বা ব্র্যান্ড মেইন্টেইন করতে প্রয়োজনীয় বেসিক এডুকেশনও পাবেন। এ লক্ষ্যে আমরা উন্নত মানের এডুকেশনাল কনটেন্ট তৈরির কাজ করছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও বেশি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তাদের সফলতার অংশীদার হতে চাই।

এসইউ/এমকেএইচ