গত ৭ আগস্ট থেকে সারা দেশে শুরু হয়েছে করোনা প্রতিরোধে গণটিকাদান কর্মসূচি। সারা দেশের মতো রাজধানী ঢাকাতেও টিকা নিতে মানুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। ফলে অধিকাংশ জায়গাতেই টিকা নিতে আসা অধিকাংশ মানুষকে টিকা না পেয়ে ফিরে যেতে হয়েছে।
Advertisement
সব কেন্দ্রে সকাল ৯টার পর টিকাদান শুরু হলেও গত চার দিনে কোনো কোনো কেন্দ্রে খুব সকাল থেকে মানুষকে টিকার জন্য লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে। তবে এরপরও টিকা না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় বুধবার টিকা নেয়ার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই টিকার জন্য সাধারণ মানুষকে লাইনে দাঁড়াতে দেখা গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি কেন্দ্রে ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে কেন্দ্রগুলোর সামনে ভিড় করতে থাকেন সাধারণ মানুষ। কেউ কেউ সারা রাত লাইনে থাকার জন্য নিয়ে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বিছানা, মাদুর। কেউ এসেছেন চেয়ার বা টুল হাতে। অনেকেই খাবার নিয়েও এসেছেন। কেউ কেউ একসঙ্গে মিলে মোবাইলে লুডু খেলে বা গল্প করে সময় কাটানোর চেষ্টা করছেন।
প্রতিটি কেন্দ্রে দুইশ থেকে তিনশ মানুষের লাইন দেখা গেছে।
Advertisement
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে রাজধানীর রায়ের বাজার কমিউনিটি সেন্টার, হাতিরপুল মোতালেব প্লাজা সংলগ্ন ও মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, টিকার জন্য লাইনে সাধারণ মানুষর ভিড়।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা গত তিনদিন ধরে অপেক্ষা করেছেন। লাইনেও দাঁড়িয়েছিলেন, কিন্তু এখন পর্যন্ত টিকা পাননি। তাই মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর রাতের খাবার খেয়েই রাস্তায় লাইন ধরা শুরু করেছেন।
১৬ নম্বর ওয়ার্ডে রায়ের বাজার কমিউনিটি সেন্টারে টিকা নিতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মুরাদ হোসেন জানান, একদিকে ডেঙ্গু, অন্যদিকে মহামারি করোনাভাইরাস। এ নিয়ে আমরা জীবন সন্ধিক্ষণে রয়েছি। গণটিকা কর্মসূচিতে সাড়া দিয়ে সাধারণ মানুষ টিকা নেয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছে রাত থেকেই। আজকের মতো গত দুইদিনে এমন দীর্ঘ লাইন দেখা যায়নি।
এই কেন্দ্রে দেখা যায়, পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও রাত থেকেই লাইন দিয়ে বসে রয়েছেন।
Advertisement
টিকা নিতে আসা জামিরন নেসা নামের একজন গৃহকর্মী জানান, বাসা-বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে আমাদের। যাদের বাসায় কাজ করি তাদের সবাই টিকা নিয়েছেন এবং আমাকে বলে দিয়েছে, আমি যদি টিকা না নিই তাহলে বাসায় কাজ করা বন্ধ। এজন্য গত ৩ দিন এসে টিকা না পেয়ে ফিরে গেছি। আজ রাত ১১টা থেকে এখানে প্রতিবেশী কয়েকজনসহ লাইন দিয়েছি।
টিকা নিতে আসা মো. শমশের আলী জানান, বাইরে বাইরে কাজ করি। টিকা না নিয়ে করোনা হয়ে মারা গেলে আমার সংসার দেখবে কে? গত রোববার বিকেল ৩টায় এসে দেখি টিকা দেয়া শেষ। এরপর সোমবার সকালে এসে লাইন দিলেও টিকা নিতে পারিনি। আজ রাত সাড়ে ১০টা থেকে এখানে লাইনে।
মঙ্গলবার রাত ৯টা থেকে লাইন ধরে বসে আছেন নিজাম উদ্দিন। তিনি জানান, গতকাল ভোর ৫টা থেকে লাইনে ছিলাম। এরপরে দুপুর ১টায় বলা হয় টিকা শেষ। তাই আজ রাত ৯টা থেকে লাইন ধরে বসে আছি। একা না এসে চার বন্ধুকে নিয়ে এসেছি।
ষাটোর্ধ্ব সেবেকা বানু নামের একজন নারী জানান, ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে একটা ব্যাগে খাবার, পানি হাতে তিনি মাগরিবের নামাজ পড়েই এসে বসে পড়েছেন। কয়েক ঘণ্টা পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে যখন তার সঙ্গে কথা হয়, তখন তিনি অন্ধকার ফুটপাথের একপাশে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন। এ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিও শুরু হয়।
রাত পৌনে ১২টার দিকে আব্দুল্লাহ আবির নামে এক তরুণ জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে লাইনে দাঁড়ান। টিকার জন্য অপেক্ষমাণদের তালিকায় নাম তোলার জন্য একজনকে অনুরোধ জানান।
পরে তিনি বলেন, গত কয়েকদিন অপেক্ষা করেও টিকা নিতে পারিনি। বাসায় মা-বাবাসহ অনেকেই টিকা নিয়েছেন কিন্তু শুধু আমিই বাদ রয়েছি। আমার জন্য বাসার কেউ যাতে আক্রান্ত না হন তাই আজ রাত থেকেই লাইন ধরে বসে আছি।
গত ১৩ জুলাই থেকে দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় মডার্নার প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া শুরু হয়। আর ১২ আগস্ট থেকে মডার্না টিকার প্রথম ডোজ দেয়া বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সেদিন থেকে মডার্নার দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান শুরু হবে।
এদিকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে আরও ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১৬১ জনে।
এই সময়ে করোনায় আক্রান্ত হিসেবে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ১১ হাজার ১৬৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭৬ হাজার ৩২২ জনে।
বাংলাদেশে করোনা প্রথম শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এর ১০ দিন পর ভাইরাসটিতে একজনের মৃত্যুর তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদফতর।
টিটি/এমএইচআর