জাতীয়

‘স্যার, লকডাউন শেষ হলে কি খাওন পামু?’

‘স্যার, লকডাউন শেষ হলে কি খাওন পামু?’ রাজধানীর পরীবাগের বিপরীত দিকে ইস্কাটন গার্ডেন রোডে মঙ্গলবার দুপুরে খাবারের প্যাকেট হাতে রমনা জোনের শীর্ষ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে এভাবেই বলছিলেন বৃদ্ধ নুরুল ইসলাম নামের এক হতদরিদ্র।

Advertisement

লকডাউন শুরুর পর থেকে প্রতিদিন একই সময়ে তিনি লাইনে এসে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করতেন। দুপুরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) রমনা জোনের উদ্যোগে নুরুল ইসলামসহ প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৭০০ হতদরিদ্র নারী-পুরুষ ও শিশুর মাঝে খাবারের প্যাকেট বিতরণ করা হয়।

করোনা সংক্রমণরোধে সরকারঘোষিত লকডাউন শেষ হচ্ছে আজ। সেই আশংকা থেকেই নুরুল ইসলাম পুলিশ কর্মকর্তার কাছে আগামীকাল খাবার দেয়া হবে কিনা তা জানতে চান ওই বৃদ্ধ। লকডাউন শেষ হলেও আগামী কয়েক দিন আগের মতোই তাদের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হবে বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।

আজ দুপুর সাড়ে ১২টায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কয়েকশ হতদরিদ্র মানুষ কয়েকটি সারিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বসে রয়েছেন। একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানালেন কিছুক্ষণের মধ্যেই রমনা জোনের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান এসে নিজ হাতে দরিদ্রদের মাঝে খাবার বিতরণ করবেন।

Advertisement

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে সাজ্জাদুর রহমান জানান, করোনাকালে তারা হতদরিদ্রদের মাঝে প্রতিদিন দুপুরের খাবার বিতরণ করছে। শুরুর দিকে ৩০০ জনের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হলেও পরবর্তীতে আশপাশের এলাকা থেকেও হতদরিদ্ররা খাবার সংগ্রহের জন্য ছুটে আসেন। নির্দিষ্ট সময়ে এসে যেন কেউ খাবার না পেয়ে ফিরে যায় সে জন্য তারা প্রতিদিন ৬০০ থেকে ৭০০ মানুষের রান্না করা খাবার বিতরণ করেন।

তিনি জানান, করোনাকালে এ হতদরিদ্র মানুষগুলোর আয়-রোজগার বলতে কিছুই নেই। ফলে দরিদ্র মানুষগুলোর খাবার জোগাড় করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল। মানবিক দিক বিবেচনায় তিনি এ উদ্যোগ নেন। শুরুটা তিনি একা করলেও পরবর্তীতে অনেকেই মানবিক কাজের সঙ্গে জড়িত হন বলে জানান।

ডিসি সাজ্জাদুর রহমান আরও জানান, আজ ১০ আগস্ট লকডাউন শেষ হলেও তাদের কাছে বেশকিছু খাবারের মজুত রয়েছে। সেজন্য আরও কয়েকদিন তারা দুপুরে হতদরিদ্র এই মানুষগুলোর মাঝে খাবার বিতরণ করবেন।

জানা গেছে, আজকের খাবারের তালিকায় মুরগির মাংস ও সাদা ভাত রয়েছে। হায়দার আলী নামে এক প্রতিবন্ধী জানান, তারা এ এলাকার রাস্তাঘাটে দিনরাত কাটান। কেউ ভিক্ষা করে, কেউ শ্রমিকের কাজ করে। করোনাকালে তাদের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দু’বেলা খাবার জোগাড় করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তারা করোনাকালে নিয়মিত খাবার সরবরাহকারী ডিসি সাজ্জাদুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

Advertisement

এমইউ/এমআরএম/এএসএম