কৃষি ও প্রকৃতি

নওগাঁয় পারভীনের ছাদবাগানে ৩০ প্রজাতির গাছ

বাসার ছাদে টব ও ড্রামে লাগানো হয়েছে নানান জাতের ফুল, ফল, সবজি ও ঔষধি গাছ। প্রথমে দেখলে মনে হতে পারে যেন এক কৃষি খামার। নওগাঁ সদর উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়া (মুন্সিপাড়া) মহল্লারয় পারভীন আক্তার তার বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন মিনি কৃষি খামার।

Advertisement

তিনি একাধারে নারী উদ্যোক্তা, নওগাঁ জেলা মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সমাজসেবক। এছাড়া তিনি নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়াম্যান (ভারপ্রাপ্ত) ও ভাইস চেয়াম্যানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

ইট পাথরের এই ছোট্ট শহরে সবুজ গাছের ছোঁয়ার অভাব খুব অনুভব করছিলেন পারভীন আক্তার। পেশাগত কাজ ও রাজনীতির পাশাপাশি প্রকৃতি ও গাছের প্রতি অন্যরকম এক ভালোলাগা ও ভালোবাসা থেকে বাসার ছাদে গড়ে তুলেছেন ছাদবাগান।

২০১৮ সালের শুরুর দিকে পরিবারের সদস্যদের সহায়তায় তিনি বাজার থেকে কিছু গাছের চারা কিনে বাসার ছাদে লাগান। এরপর বিভিন্ন সময় সবজি, ফল, ফুল ও ঔষধি গাছের চারা কিনে টবে ও ড্রামে লাগিয়েছেন। বর্তমানে তার ছাদে প্রায় ৩০ প্রজাতির নানা জাতের গাছ শোভা পাচ্ছে।

Advertisement

ছাদ বাগানে ১০ জাতের ফল, ৫ জাতের ঔষধি, পাঁচ জাতের ফুল ও ১০ জাতের সবজিসহ ৩০ প্রজাতির গাছ রয়েছে। যেখানে আম, লিচু, মাল্টা, সজিনা, কামরাঙ্গা, আমড়া, পেঁপে, বড়ই, পেয়ারা, মরিচ, লাউ, হরতকি, অ্যালোভেরা, গোলাপ ফুল, গাঁধাফুল, বিদেশি ঝাউগাছ, জবা ফুলসহ নানা জাতের গাছ। এছাড়া শীতের মৌসুমে সিম, কপি ও বাঁধাকপি চাষ করে থাকেন। পরিবারের সদস্যরা পরিচর্চার পাশপাশি তিনি নিজেও পরিচর্চা করেন।

২০১৯ সালে যুব উন্নয়ন পুরস্কারে ভূষিত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেছেন। সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বাবলম্বী করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখায় একই বছরের শেষের দিকে বিভাগীয় নারী জয়ীতা হিসেবে প্রথম স্থান অর্জন করেন।

পারভীন আক্তারের প্রবিবেশী ফেরদৌসি, আঞ্জুমান বেগম ও ফরিদা বেগম বলেন, গত কয়েক বছর থেকে দেখে আসছি পারভীন আপা তার বাসার ছাদে টবে শাক-সবজিসহ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগিয়ে পরিচর্চা করছেন।

নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে প্রতিবেশীদের দিয়ে থাকেন। আমাদের অনেকেই এখন ছাদ বাগান করার আগ্রহ দেখাচ্ছেন। যেখানে নিজের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করি।

Advertisement

পারভীন আক্তারের স্বামী ব্যাংক কর্মকর্তা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, শুরুর দিকে স্ত্রী পারভীন পরিকল্পনা করেন ছাদে গাছ লাগাবেন। বাজার থেকে কিছু গাছের চারা এবং চারা লাগানো উপকরণ কিনে দেই। বিভিন্ন সময় সে নিজেই অনেক জাতের গাছের চারা বাজার থেকে সংগ্রহ করেছে। আমি যখন সময় পাই গাছগুলোর পরিচর্চা করি।

সফল নারী উদ্যোক্তা পারভীন আক্তার বলেন, ইট পাথরের এই শহরে জায়গার বড়ই অভাব। আমাদের অধিকাংশ মানুষের বাসার ছাদ ফাঁকাই পড়ে থাকে। আর ছাদকে প্রাকৃতিক পরিবেশ রূপ দিতে ২০১৮ সালে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা থেকে ছাদ বাগান করা। ১৩০ বর্গমিটারের ছাদে ফুল, ফল, ঔষধি ও সবজি মিলে প্রায় ৩০ জাতের গাছ আছে। গাছ ও গাছ লাগানোর উপকরণসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম কিনতে এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে।

তিনি বলেন, গাছ আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। গাছ থেকে আমরা বিভিন্ন ধরনের ফল ও ফুল পেয়ে থাকি। গাছের উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে গাছের পরিচর্চা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে থাকি। ছাদ বাগান থেকে উৎপাদিত ফল ও সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশীদেরও বিতরণ করি।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ সামশুল ওয়াদুদ বলেন, পারভীন আক্তারের বাসার ছাদে বিভিন্ন জাতের ফুল, ফল ও সবজি গাছের চারা দিয়ে অসাধারণ এক ছাদ বাগান করেছেন। এই ছাদ বাগান দেখে অনেকেই অনুপ্রাণীত হয়ে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।

ছাদ বাগান বা ছাদ কৃষি করে যেমন নিজেদের পুষ্টির চাহিদা মেটানো সম্ভব সেই সাথে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ভূমিকা রাখা যায়। তবে ছাদ বাগানের ক্ষেত্রে পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ছাদ বাগান বিষয়ে কেউ পরামর্শ চাইলে তাকে সার্বিকভাবে সহযোগীতা করা হবে। প্রয়োজন কৃষি অফিসের টিম বাসার ছাদে গিয়ে পরামর্শ দিয়ে আসবে।

আব্বাস আলী/এমএমএফ/জিকেএস