ওসমান আলীর বয়স ৭০ বছর। মুখভর্তি সাদা দাড়ি। মাথায় টুপি, সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মাতুয়াইল কবরস্থান রোডে ভূইয়া টাওয়ারের নিচতলায় ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের করোনার টিকা কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি।
Advertisement
এই বৃদ্ধ বলেন, ‘টিকা এখনো নেইনি, নেব।’ কেন টিকা নিচ্ছেন- জানতে চাইলে ওসমান আলী প্রথমে কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলেন, ‘এত কথা তো বলতে পারব না।’ খানিক পর আবার নিজ থেকেই বলেন, ‘করোনা থেকে বাঁচতে টিকা নেব। রোগের প্রতিষেধক নিতে কোনো বাধা নেই, রোগের লক্ষণ দেখা দিলে ওষুধ খেতে হবে। টিকা নিচ্ছি, কিন্তু রক্ষা করবেন আল্লাহ।’
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গণটিকা কার্যক্রমের চতুর্থ দিনেও কেন্দ্রগুলোতে মানুষে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনা দেখা গেছে। সকাল থেকেই টিকা প্রত্যাশী মানুষ কেন্দ্রগুলোতে ভিড় জমিয়েছেন। নিয়ম না জেনে আসায় অনেককে টিকা না নিয়েই ফিরে যেতে হয়েছে। যারা টিকা নেবেন তারা দাঁড়িয়ে ছিলেন দীর্ঘ লাইনে।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্র ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। এই কেন্দ্রে টিকা দেয়া শুরু হয় সকাল সোয়া ৯টার দিকে। এর আগেই বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষে ভরে যায় টিকা কেন্দ্রের চত্বর।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের টিকা কেন্দ্রে প্রতিদিন ৩৫০ জনকে টিকা দেয়া হয়। প্রথম দিকে ২৫০ জনকে টিকা দেয়া হতো।
তরুণ হাবিবুর রহমান এসেছেন উত্তর রায়েরবাগ থেকে। তিনি পুরুষের লাইনের প্রায় শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন। হাবিবুর বলেন, টিকা না দিয়ে তো উপায় নেই। মানুষ যে হারে আক্রান্ত হচ্ছে ও মারা যাচ্ছে- তাতে খুবই ভয়ে আছি। তবে এত সহজে টিকা পাওয়া যাবে এটা আগে ভাবিনি। সরকারের উদ্যোগটি খুবই ভালো।
৬৫ নম্বর ওয়ার্ডের কেরাণীপাড়া থেকে এসেছেন বৃদ্ধা হাফিজা বেগম। আগে তিনি কার্ড সংগ্রহ করেননি। প্রতিদিন রাতে কাউন্সিলর অফিস থেকে কাউন্সিলর মো. সামসুদ্দিন ভূঁইয়া নিজে টিকা কার্ড বিতরণ করেন। টিকাদানের দায়িত্বে থাকা লোকজন হাফিজাকে টিকা কার্ড সংগ্রহের করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘হুনছি কঠিন রোগ আইছে, করোনা। হেই টিকা নিতে আইছি। হ্যারা কয় নাকি কার্ড লাগব। আমি তো জানি না বাপু।’
টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন শেফালী আক্তার। তিনি কেন্দ্র দিয়েছেন মাতুয়াইল শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট। সেই নিবন্ধনের কাগজ নিয়ে এখানে এসেছেন টিকা নিতে। তবে যে হাসপাতালে টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন তাকে সেখান থেকেই টিকা নিতে হবে বলে জানান টিকা কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
Advertisement
আনোয়ার হোসাইনের বাড়ি হাশেম রোড এলাকায়। তিনি আগের রাতে টিকা কার্ড নিয়ে গেছেন। টিকা নেয়ার আগে রেজিস্ট্রেশনের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কার্ড নেয়াটা একটু ঝামেলা। কারণ চাহিদা বেশি, টিকা কম। টিকা আরও বেশি করে দেয়া উচিত। সবাই বুঝছে টিকা না নিয়া উপায় নাই। অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে।’
৬৫ নম্বর ওয়ার্ড টিকা কেন্দ্রের সুপারভাইজার আরিফুল ইসলাম সাগর জাগো নিউজকে বলেন, এই কেন্দ্রে আমরা প্রতিদিন ৩৬০ জনকে টিকা দিচ্ছি। এই টিকা কার্যক্রম ১২ আগস্ট পর্যন্ত চলবে। টিকা কার্ড আমরা কাউন্সিলর অফিসকে দিয়ে দিই, তারাই এগুলো বিতরণ করে।
টিকার চাহিদা অনেক জানিয়ে তিনি বলেন, সবাইকে টিকা দেয়া যাচ্ছে না। অনেকে কার্ড ছাড়াই চলে আসছেন। তাদের টিকা দিতে পারছি না। টিকাদান সকাল ৯টার দিকে শুরু হলেও সকাল ৭/৮টা থেকেই লোকজন এসে বসে থাকছেন।
বিকেল ৩টা পর্যন্ত টিকা কার্যক্রম চলে বলেও জানান সুপারভাইজার আরিফুল।
আরএমএম/এমআরআর/জিকেএস