কৃষি ও প্রকৃতি

মাল্টা চাষ করে চমকে দিলেন স্কুল শিক্ষক

ভোলায় শিক্ষকতার পাশাপাশি মাল্টা চাষ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন মো. মনিরুল ইসলাম। তার বাগানের ফরমালিনমুক্ত মাল্টার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রি করলেও এ বছর ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মাল্টা বিক্রির আশা করছেন তিনি। আর শ্রমিকদের সাথে তিনি নিজে বাগানে কাজ করায় দ্রুত এ সফলতার মুখ দেখছেন বলে দাবি করেন।

Advertisement

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদর উপজেলার ভেদুরিয়া ইউনিয়নের উত্তর চর ভেদুরিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনিরুল ইসলাম ওই গ্রামের ২১০ শতাংশ জমির উপর বিশাল গ্রিন মাল্টা বাগান গড়ে তুলেন। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তার বাগানের চাষ মাল্টা চাষ হচ্ছে। প্রতিদিনই শ্রমিকদের সাথে মিলে শিক্ষকতার পাশাপাশি নিজেও বাগানে কাজ করেন।

মো. মনিরুল ইসলাম জানান, এক সময় তিনি তার সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের জন্য স্থানীয় বাজার থেকে মাল্টা কিনে খাওয়াতেন। কিন্তু বাজারের মাল্টায় ফরমালিন থাকায় বাজার থেকে আর মাল্টা না কেনার প্রতিজ্ঞা করেন। এরপর জেলার মানুষের কাছে ফরমালিনমুক্ত মাল্টা বিক্রি করার জন্য নিজেই গ্রিন মাল্টা চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। পরে ২০১৭ সালের দিকে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ করে ২১০ শংতাশ জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে তোলেন।

এরপর মাসিক বেতনে ২ থেকে ৩ জন শ্রমিক নিয়ে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি বাগানে কাজ শুরু করেন। ২০১৯ সালের দিকে তার বাগানে মাল্টা প্রথম বিক্রির উপযুক্ত হয়। ওই বছর তিনি তার পরিবার, আত্মীয় স্বজন, শ্রমিকদের বিনামূল্যে দিয়েও ১ লাখ টাকার মাল্টা বাজারে বিক্রি করেন।

Advertisement

পরের বছর ২০২০ সালেও একইভাবে বিনামূল্যে তাদের দিয়েও বাজারে আড়াই লাখ টাকা মাল্টা বিক্রি করেন। এ বছরও তার মাল্টার বাগানে ব্যাপক মাল্টা হয়েছে। তিনি আশা করছেন প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার মাল্টা বাজারে বিক্রি করতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, আমার মূল উদ্দেশ্যে হলো ভোলা জেলার মানুষকে ফরমালিনমুক্ত মাল্টা খাওয়ানোর। সে লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছি। আমি নিজে শিক্ষকতার পাশাপাশি শ্রমিকদের সাথে মিলে মাল্টার বাগানে কাজ করে যাচ্ছি। আর বাগানে প্রাকৃতিক উপায়ে বিষমুক্ত মাল্টা চাষ হচ্ছে।

এ ছাড়াও কোনো প্রকার ফরমালিন ব্যবহার না করে সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার শর্তে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে মাল্টা বিক্রি করে থাকি। যদি কোন ব্যবসায়ী আমার শর্ত ভঙ্গ করেন মাল্টায় ফরমালিন ব্যবহার করে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে তাদের কাছে আর মাল্টা বিক্রি করি না। এছাড়াও তিনি মনে করেন কৃষকসহ সব পেশার মানুষ যদি মাল্টা চাষে এগিয়ে আসে তাহলে ভোলা জেলায় মাল্টা চাষের বিপ্লব ঘটানো সম্ভব। এবং নিজ জেলার চাহিদা পূরণ করে অন্য জেলায়ও মাল্টা রফতানি করা যাবে।

ভোলা পৌর ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ফারুক জানান, তিনি মনিরুল ইসলামের ফরমালিনমুক্ত মাল্টা বাগানের কথা শুনে স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে বাগানে ঘুরতে এসেছেন। ঘোরা শেষে বাগান থেকে তাজা ফরমালিনমুক্ত মাল্টা কিনেছেন।

Advertisement

শিক্ষকের মাল্টা বাগানের শ্রমিক মো. সিরাজ ও আমির হোসেন জানান, আমরা এক সময় অন্যের জমিতে ধান রোপণ ও কাটাসহ বিভিন্ন ধরনের দিন মজুরের কাজ করতাম। তখন ১২ মাস কাজ থাকতো। আর সংসার পরিচালনা করতে অনেক কষ্ট হত। ২০১৭ সালের দিকে আমরা মনিরুল ইসলাম স্যারের মাল্টা বাগান ও মাছের গেরে মাসিক বেতনে কাজ শুরু করি। এখনে মাসিক বেতনে কাজ শুরু করার পর থেকে সংসারের অভাব দুঃখ দূর হয়েছে। আর আমাদেরও ১২ মাসই কাজের সুযোগ হয়েছে।

তারা আরো জানান, মনিরুল ইসলাম স্যারের মত যদি ভোলা জেলায় এমন বড় বড় অনেকগুলো মাল্টা বাগান হতো তাহলে অনেক বেকার শ্রমিকের কর্ম সংস্থান সৃষ্টি হত।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবু মো. এনায়েত উল্লাহ জানান, মাল্টা চাষের জন্য কৃষক ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন ধরনের সহযোগীতা ও উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। কৃষকদের বিনামূল্যে মাল্টার চারা ও সার দিয়ে যাচ্ছি।

মাল্টা বাগান করে শিক্ষক মনিরুল ইসলামের মত অনেকেই সফল হয়েছে। আবার তাদের সফলতা দেখে নতুন নতুন অনেকেই মাল্টার বাগান করতে আগ্রহী হচ্ছে। আর দিন দিনই ভোলা জেলায় মাল্টার চাষ ও চাষিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তিনি আরও জানান, ভোলা জেলার সাত উপজেলায় এ বছর ৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ভোলা সদর উপজেলায় হয়েছে ১০ হেক্টর জমিতে।

জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমএফ/জেআইএম