দেশজুড়ে

কক্সবাজারে ৫ দিনের বন্যায় ৪৪ কিলোমিটার সড়ক-বাঁধে ক্ষতি

গত মাসের শেষ সপ্তাহের টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট পাঁচদিনের বন্যায় কক্সবাজার জেলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ায় দৃশ্যমান হয়েছে এসব ক্ষতচিহ্ন। জেলা প্রশাসনের হিসাব মতে, কক্সবাজারের ৯ উপজেলার অর্ধশত ইউনিয়নের ৫০০টি গ্রামের প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়ক উপ-সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাশাপাশি চকরিয়ার মাতামুহুরি নদীর ৬ কিলোমিটার, ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর ৫ কিলোমিটার বাঁধ এবং রামুর বাঁকখালী নদীর প্রায় ৩ কিলোমিটার বাঁধ ও নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখনও থেমে থেমে নেমে যাচ্ছে তীরের ফসলি জমি ও বসতভিটার মাটি। বাড়িঘর নদীতে বিলীনের আশংকায় অন্যত্র সরে যাচ্ছেন অনেকে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে বলে অভিমত স্থানীয়দের।

Advertisement

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র মতে, গত ২৬ জুলাই থেকে কক্সবাজারে টানা বর্ষণ হয়। এতে পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের ৫১টি ইউনিয়নের ৫ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি ছিল লাখো পরিবার। এসব এলাকার সড়ক-উপ-সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। যদিও পরিপূর্ণ ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ এখনো চলমান। পানি নেমে যাওয়ার পর কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়নের বাংলাবাজার মুক্তারকুল, খরুলিয়া, চাঁন্দের পাড়া, মুহুরীপাড়া, এসএমপাড়া, পিএমখালী ইউনিয়নের নয়াপাড়া, ঘাটকুলিয়াপাড়া, পাতলি, মুহসিনিয়াপাড়া, ধাওনখালী, খুরুশস্কুল ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল, তেতৈয়া, ভারুয়াখালীর নিম্নাঞ্চল, ঈদগাঁও উপজেলার পোকখালী, ইসলামপুর, ঈদগাঁও, জালালাবাদ, রামুর ফতেখারকুল, রাজারকুল, মিঠাছড়ি, চাকমারকুল, জোয়ারিয়ানালা, কাউয়ারখোপ, রশিদনগর, চকরিয়া পৌরসভা, সুরাজপুর-মানিকপুর, কাকারা, হারবাং, লক্ষ্যারচর, ফাঁসিয়াখালী, বমুবিল ছড়ি, চিরিংগা, ডুলাহাজারা ও খুটাখালী, বিএম চর, পূর্ব বড় ভেওলা, পশ্চিম বড় ভেওলা, ঢেমুশিয়া, বদরখালী, কোনাখালী, সাহারবিল ও বরইতলী, পেকুয়ার একাধিক ইউনিয়ন, উখিয়ার পালংখালী, রাজাপালং, টেকনাফের হ্নীলা, শাহপরীর দ্বীপ, হোয়াইক্যংসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে সড়কের ক্ষতচিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। এবারের বন্যা শুরুর পর পাঁচদিনে ৫টি পৃথক পাহাড়ধসে ১৩ জন এবং বানের জলে ভেসে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা রয়েছেন ছয়জন।

বানের পানি নেমে যাওয়ার পর বাঁকখালীর ভাঙনের কবলে বৈদ্যুতিক খুঁটি। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজার বাংলাবাজার মুক্তারকুল এলাকা। ছবি: সায়ীদ আলমগীর

ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতান বলেন, এখনও বর্ষা শেষ হয়নি। প্রথম ঢল ও বন্যায় এলাকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন কঠিন হয়ে দেখা দিয়েছে নদীর তীর ভাঙন। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অনেকের ভিটা, বাগান, ফসলি জমি নদীর বুকে তলিয়ে যাচ্ছে। সামনে আবারো টানাবৃষ্টি ও প্লাবন হলে পরে কি অবস্থা দাঁড়াবে তা অকল্পনীয়। নদীর তীর ভাঙনে দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে চরম মূল্য দিতে হবে এখানকার অধিবাসীদের।

Advertisement

কক্সবাজার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান বলেন, বানের পানি নামার পর বিভিন্ন এলাকায় সড়কের ক্ষয়ক্ষতি দৃশ্যমান হলে আমরা মাঠপর্যায়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের চেষ্টা করব। এরই মধ্যে প্রায় ৩০ কিলোমিটারের মতো সড়ক, উপ-সড়কের ক্ষতি হয়েছে বলে পরিসংখ্যান মিলেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কক্সবাজারের নতুন উপজেলা ঈদগাঁওয়ে। জেলাব্যাপী ক্ষতি আরও বাড়তে পারে। যেসব সড়ক বেশি চলাচল অনুপযোগী হয়েছে সেসব অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, সাম্প্রতিক বন্যায় মাতামুহুরী নদীর একাধিক পয়েন্টে প্রায় ৬ কিলোমিটার, ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর জালালাবাদ ফরাজীপাড়া, বাঁশঘাটা, পোকখালীসহ একাধিক পয়েন্টে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার বাঁধ এবং রামুর বাঁকখালীর কচ্ছপিয়া ইউনিয়ন থেকে ঝিলংজা-পিএমখালীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ ও নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়েছে। এখনো মাঝে মাঝে তলিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। এছাড়া টেকনাফ এবং মহেশখালীর কিছু অংশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ভাঙনের কথা উল্লেখ করে বাজেট প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। যেসব এলাকা অতি গুরুত্বপূর্ণ তা আগে সংস্কারে হাত দেয়া হচ্ছে। তীর ও বসতভিটা ভাঙন রোধে কাজ করছে পাউবো।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, সাম্প্রতিক বন্যায় পাহাড়ধস ও বানে ভেসে ২২ জন মারা যাওয়ার তথ্য মিলেছে। পাহাড়ধসে মারা যাওয়াদের জনপ্রতি ২৫ হাজার টাকা করে সরকারি সহযোগিতা দেয়া হয়েছে। বন্যাদুর্গতদের ৩০০ মেট্রিক টন চাল, আড়াই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং নগদ ১৫ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের সমন্বয়ে আইএনজিও এবং এনজিওগুলো বন্যাদুর্গতদের সহযোগিতা দিয়েছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ বলেন, প্লাবন ও পাহাড়ি ঢলে জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় ক্ষতি হয়েছে। আর্থিক ক্ষতির সঠিক পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছে উপজেলা প্রশাসন। আশা করছি শিগগিরই ক্ষতির পরিমাণ জানা যাবে। সে মতে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

Advertisement

এসএইচএস/এমকেএইচ