গেল সপ্তাহজুড়ে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের বড় দরপতন হয়েছে। এক সপ্তাহে দামি এই ধাতুটির দাম কমেছে প্রায় তিন শতাংশ। আর প্রতি আউন্সে কমেছে ৫০ ডলারের ওপরে। স্বর্ণের পাশাপাশি গত এক সপ্তাহে প্লাটিনাম ও রূপারও বড় দরপতন হয়েছে।
Advertisement
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের এমন দরপতন হলেও আপাতত বাংলাদেশের বাজারে দামি এই ধাতুটির দাম কমানো হচ্ছে না। মহামারি করোনার প্রকোপের কারণে দেশজুড়ে কঠোর বিধিনিষেধ চলায় আপাতত দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম সমন্বয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)।
এ বিষয়ে বাজুস সভাপতি এনামুল হক খান জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববাজারে স্বর্ণের বড় দরপতনের বিষয়টি আমরা দেখেছি। লকডাউনের কারণে এখন আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই আপাতত দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হচ্ছে না। লকডাউন খোলার পর আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে যদি স্বর্ণের দাম আরও কমে বা এখন যে পর্যায়ে আছে, সেই পর্যায়ে থাকে তাহলে লকডাউন খুলে দেয়া হলে দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানো হবে। তবে লকডাউন খোলার আগেই যদি বিশ্ববাজারে আবার স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়, তখন দাম সমন্বয় করা নাও হতে পারে।
Advertisement
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ব্যাপক অস্থিরতা দেখা যাচ্ছে। মাঝে কিছুটা দাম কমলেও এপ্রিল ও মে মাসের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে স্বর্ণের দাম ঊর্ধ্বমুখী ধারায় থাকে।
বিশ্ববাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে দাম বাড়ায় মে মাসে দেশের বাজারে দু’দফায় ভরিতে স্বর্ণের দাম চার হাজার ৩৭৪ টাকা বাড়ায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি। তবে জুনের শুরুতে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বড় পতন হয়। ফলে বাংলাদেশেও স্বর্ণের দাম কমানো হয়।
সর্বশেষ গত ১৯ জুন বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি ভরিতে স্বর্ণের দাম ১ হাজার ৫১৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেয়। তবে বিশ্ববাজারে যে হারে স্বর্ণের দাম কমে তাতে বাজুস চাইলে ভরিতে স্বর্ণের দাম চার হাজার টাকা পর্যন্ত কমাতে পারত।
বাজুসের ঘোষণা অনুযায়ী স্বর্ণের নতুন দাম কার্যকর হয় ২০ জুন থেকে। নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) স্বর্ণের দাম ৭১ হাজার ৯৬৭ টাকা। এছাড়া ২১ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬৮ হাজার ৮১৭ টাকা, ১৮ ক্যারেটের স্বর্ণ ৬০ হাজার ৬৮ টাকা ও সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি স্বর্ণের দাম ৪৯ হাজার ৫৪৬ টাকা। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে।
Advertisement
এদিকে বাংলাদেশে স্বর্ণের দাম কমানোর পর এক মাসের বেশি সময় ধরে বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে বেশ স্থিতিশীলতা দেখা যায়। জুলাই মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গত সপ্তাহের আগ পর্যন্ত প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ১৮০০ থেকে ১৮১৫ ডলারের মধ্যে অবস্থান করছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই গেল সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বড় দরপতনের মধ্যে পড়ে স্বর্ণ।
গেল সপ্তাহজুড়ে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম কমেছে ৫০ দশমিক ৩৭ ডলার বা ২ দশমিক ৮০ শতাংশ। এর মধ্যে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসেই কমেছে ৪১ দশমিক ১৩ ডলার বা ২ দশমিক ২৮ শতাংশ। বড় এই দরপতনের ফলে আউন্সপ্রতি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৬২ দশমিক ৮৮ ডলারে।
এদিকে স্বর্ণের পাশাপাশি বড় দরপতন হয়েছে আরও এক দামি ধাতু প্লাটিনামের। গেল সপ্তাহে এই ধাতুটির দাম ৬ দশমিক ৫৮ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৯৮০ ডলারে নেমে গেছে। আর রূপার দাম ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ২৪ দশমিক ৩২ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
এমএএস/এআরএ/এমকেএইচ