মাথাব্যথা ও জ্বর নানা কারণে হতে পারে। এগুলো মানুষের জন্য অনেক কষ্টের। আবার মাথাব্যথা যন্ত্রণাদায়ক হলেও এটি অনেক রোগের উপসর্গ। তাই জ্বর ও মাথাব্যথা থেকে বেঁচে থাকতে সচেতনতা খুব বেশি প্রয়োজন। পাশাপাশি জ্বর-মাথাব্যথা দেখা দিলে সুস্থতার জন্য অভিজ্ঞ ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়ারও বিকল্প নেই। চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি সহজে তা থেকে মুক্তি পেতে কুরআন-সুন্নাহর আমলও কার্যকরী। পড়া যেতে পারে তা থেকে বেঁচে থাকার দোয়া। মাথাব্যথা-জ্বরের কুরআনি আমল১. হজরত জাফর সাদেক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, সুরা ফাতেহা ৪০ বার পাঠ করে পানির ওপর দম করে কোনো জ্বরে আক্রন্ত লোকের মুখমণ্ডলে ছিঁটিয়ে দিলে, এর বরকতে জ্বর দূর হয়ে যাবে।
Advertisement
২. মাথাব্যথার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে এ সুরাটি ৭ বার তেলাওয়াত করে ফুঁ দিলেও আল্লাহ তাআলা মাথাব্যথা দূরে দেন।
জ্বরের সুন্নাতি আমল ও দোয়া১. জ্বরের সময় করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন স্বয়ং বিশ্বনবি। হাদিসে পাকে এসেছে-হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জ্বর হলো জাহান্নামের উত্তাপের অংশ বিশেষ। (কারো জ্বর হলে) তোমরা পানি ঢেলে এটাকে ঠান্ডা কর ‘ (বুখারি, মুসলিম)
২. হজরত সাওবান (রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জ্বর হল জাহান্নামের একটি টুকরা। তোমাদের কারো জ্বর হলে সে যেন তা (শরীরে উত্তাপ) পানি ঢেলে নিভায়। (এর নিয়ম হচ্ছে) ফজরের নামাজেরর পর সূর্যোদয়ের আগে প্রবাহমান ঝর্ণায় নেমে স্রোত প্রবাহের দিকে মুখ করে সে বলবে-بِسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ اشْفِ عَبْدَكَ وَصَدِّقْ رَسُولَكَউচ্চারণ : ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মাশফি আবদাকা ওয়া সাদ্দিক রাসুলাকা’অর্থ : ‘আল্লাহ তাআলার নামে; হে আল্লাহ! তোমার বান্দাকে রোগমুক্ত করে দাও এবং তোমার রাসুলকে সত্যবাদী প্রমাণ কর।’তারপর ঝর্ণার পানিতে তিনবার ডুব দেবে। তিন দিন এরূপ করবে। তিন দিনেও যদি জ্বর না ছাড়ে তবে পাঁচ দিন এরকম করবে। পাঁচ দিনেও ভাল না হলে সাত দিন এরকম করবে। সাত দিনেও ভাল না হলে নয় দিন করবে। আল্লাহ তাআলার হুকুমে জ্বর নয় দিনের বেশি অতিক্রম করতে পারবে না।’ (তিরমিজি)
Advertisement
৩. প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বরের আক্রমণ থেকে বাঁচতে নিজে যে আমল করেছেন; তা ওঠে এসেছে হাদিসের বর্ণনায়-হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে জ্বর ও অন্যান্য সব ধরনের ব্যথায় এই দোয়ার শিক্ষা দিতেন-بِسْمِ اللَّهِ الْكَبِيرِ أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ مِنْ شَرِّ كُلِّ عِرْقٍ نَعَّارٍ وَمِنْ شَرِّ حَرِّ النَّارِউচ্চারণ : 'বিসমিল্লাহিল কাবির, আউজুবিল্লাহিল আজিম, মিন শাররি কুল্লি ইরকিন নায়্যার, ওয়া মিন শাররি হাররিন নার।'
অর্থ : মহান আল্লাহর নামে, আমি দয়াময় আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি শিরা-উপশিরায় রক্তচাপের আক্রমণ থেকে এবং জাহান্নামের উত্তাপ্ত আগুনের মন্দ প্রভাব থেকে।' (মুজামুল কাবির, তাবারানি, তিরমিজি)
জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ১. হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জ্বরে আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে দেখতে গিয়ে বললেন, ‘তুমি সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ তাআলা বলেন- সেটা আমার অগ্নি, আমার গোনাহগার বান্দার উপর উহা চাপিয়ে দিয়ে থাকি, যাতে উহা তাঁর জাহান্নামের শাস্তির অংশ হয়ে যায়’ অর্থাৎ পরকালের পরিবর্তে দুনিয়াতেই তাঁর শাস্তি হয়ে যায়।’ (তিরমিজি)
২. হজরত হাসান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, গোনাহের কারণে তাদের মর্যাদার ঘাটতি পূরণের কাফ্ফারাস্বরূপ তারা রাতের বেলায় জ্বরের আকাঙ্খা করত।’ (যাতে জ্বরের কারণে তাদের গোনাহ ক্ষমা হয়)। (তিরমিজি)
Advertisement
মথাব্যথায় পড়ার দোয়াআবার দ্রুত মাথাব্যথা থেকে বাঁচতে সুরা ওয়াক্বিয়ার একটি আয়াত খুবই কার্যকরী। এ দোয়ার বরকতেও মাথাব্যথা দ্রুত উপশম হয়। তাহালো-لَا يُصَدَّعُونَ عَنْهَا وَلَا يُنزِفُونَউচ্চারণ : ‘লা ইউসাদ্দাউনা আনহা ওয়া লা ইউনযিফুন।'অর্থ : যা পান করলে তাদের শিরপীড়া হবে না এবং বিকারগ্রস্ত ও হবে না।' (সুরা ওয়াক্বিয়া : আয়াত ১৯)
কুরআন-সুন্নাহর উল্লেখিত আমল ও দোয়ার ওসিলায় মহান আল্লাহ তাআলা মানুষকে দ্রুত মাথাব্যাথা এবং জ্বরের প্রকোপ থেকে থেকে হেফাজত করবেন। ইন শা আল্লাহ।
সুতরাং মানুষের উচিত, জ্বর-মাথাব্যাথা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা গ্রহণ করা। কুরআন-সুন্নাহর আমল করা। আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার সর্বাচ্তক চেষ্টা করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর আমল করণীয় এবং দোয়াগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এএসএম