মানিকগঞ্জ জেলা হানাদার মুক্ত হয় আজ ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনী মানিকগঞ্জ জেলা থেকে পালিয়ে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা করে। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে প্রতি বছরের মতো এবারো ১৫ দিনব্যাপী মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা শুরু হচ্ছে আজ থেকে। বিকেলে মেলার উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকায় হানাদার বাহিনীর হত্যাকাণ্ড শুরু করার পরপরই পুলিশের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারেন মানিকগঞ্জের রাজনৈতিক নেতারা। তাৎক্ষণিকভাবে তারা সাত সদস্য বিশিষ্ট বিপ্লবী পরিষদ গঠন করেন। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার চাঁন মিয়াকে। অন্যান্যরা হলেন, মোসলেম উদ্দিন খান হাবু মিয়া, ক্যাপ্টেন (অব.) আব্দুল হালিম চৌধুরী,খন্দকার দোলোয়ার হোসেন, সৈয়দ আনোয়ার আলী চৌধুরী, মীর আবুল খায়ের ঘটু ও মফিজুল ইসলাম খান কামাল। পরবর্তীতে তাদের নেতৃত্বেই যুদ্ধ পরিচালনা হয়।২৬ মার্চ ক্যাপ্টেন হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে মানিকগঞ্জ ট্রেজারির তালা ভেঙে অস্ত্র লুট করে তা বিতরণ করা হয় ছাত্র-জনতার মাঝে। ক্যাপ্টেন আব্দুল হালিম চৌধুরীই মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেন। মানিকগঞ্জ সিঅ্যন্ডবির ডাক বাংলো ছিল পাক হানাদার বাহিনীর সদর দফতর। এখান থেকেই হানাদার এবং তাদের দোসররা নিধনযজ্ঞ পরিচালনা করতো। আর মূল ব্যারাক ছিল বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পিটিআইয়ের (প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট) মূল ভবনে।নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মানিকগঞ্জে শহীদ হয়েছেন ৫৪ জন মুক্তিযোদ্ধা। পঙ্গু হন ৯ জন বীরসেনা। যুদ্ধে অবদানের জন্য বিভিন্ন খোতাবপ্রাপ্ত হয়েছেন চারজন মুক্তিযোদ্ধা। তারা হলেন, স্কোয়াড্রন লিডার (অব.) বদরুল আলম (বীর প্রতীক), ইব্রাহীম খান (বীর প্রতীক), শহীদ মাহফুজুর রহমান (বীর প্রতীক) এবং মোহাম্মদ আতাহার আলী খান (বীর প্রতীক)। তাদের মধ্যে একমাত্র আতাহার আলীই বর্তমানে জীবিত আছেন।১৩ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জে চুড়ান্ত বিজয় হলেও, তারও আগে থেকে বিভিন্ন উপজেলা ছাড়তে থাকেন হানাদার বাহিনী। শত্রুমুক্ত হওয়ার পর ১৩ ডিসেম্বর বিজয়ী বেশে মুক্তিযোদ্ধারা সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ মাঠে সমবেত হন। আওয়ামী লীগ নেতা মাজহারুল হক চাঁন মিয়া ওই দিন আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন। পরে তার সভাপতিত্বে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।বি.এম খোরশেদ/এমজেড/পিআর
Advertisement