আজকের এই দিনে ঠিক সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঘটে যায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা তখনও বাজছে। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। সেদিন সকালে হিরোশিমার মানুষ তখনও হয়তো ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল।
Advertisement
হঠাৎ যেন পৃথিবী কেঁপে ওঠে। মুহূর্তেই হিরোশিমার আকাশ কালো হয়ে যায়। মানুষ প্রাণ নিয়ে বাঁচতে পারেনি সেদিন। হাজার হাজার মানুষ মারা যায় এই বিস্ফোরণে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী জাপানের হিরোশিমা শহরের ওপর সেদিন লিটল বয় নামের নিউক্লিও বোমা ফেলে দেয়। এর তিন দিন পর অর্থাৎ ৯ আগস্ট নাগাসাকি শহরের ওপর ফ্যাট ম্যান নামের আরেকটি নিউক্লিও বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
বিশ্বে কোনো যুদ্ধে পরমাণু বোমা ব্যবহারের এটাই ছিল প্রথম ঘটনা। হিরোশিমায় যে বোমাটি ফেলা হয়েছিল, মার্কিনীরাই তার নাম দিয়েছিল ‘লিটল বয়’।
Advertisement
এর শক্তি ছিল প্রায় ১২-১৫ হাজার টন টিএনটির বিস্ফোরণ ক্ষমতার সমান। ৫ বর্গমাইল এলাকা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছিল এই পরমাণু বোমা।
বোমাটি প্রায় ৫০০ মিটার উঁচুতে বিস্ফোরিত হয়। মাটির সঙ্গে মিশে যায় বড় বড় অট্টালিকা কলকারখানা হাসপাতাল স্কুল কলেজ উপাসনাগৃহ। ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয় একটি নগরী। চারদিকে শুধু হাহাকার আর্তনাদ, চিৎকার।
হাসপাতালের ডাক্তার নার্স সেবিকার দলও নিশ্চিহ্ন হয়েছে। এর কয়েক বছরের মধ্যে ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তায় পঙ্গু বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হলো, ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল অগণিত মানুষ।
এই বোমার শিকার হয়েও যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তারা ‘হিবাকুশা’ বলে পরিচিত। তাদের ভয়ংকর শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে বাকি জীবন কাটাতে হয়েছে।
Advertisement
হিরোশিমা এবং নাগাসাকিতে কত লোক মারা গিয়েছিল, তা মূলত আনুমানিক হিসেব। ধারণা করা হয় হিরোশিমা শহরের সাড়ে তিন লাখ মানুষের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ কেবল বোমার বিস্ফোরণেই মারা যায়।
আর নাগাসাকিতে মারা যায় ৭৪ হাজার মানুষ। তবে পরমাণু বোমার তেজস্ক্রিয়তার শিকার হয়ে পরবর্তী সপ্তাহ, মাস এবং বছরগুলোতে আরও বহু মানুষ মারা গিয়েছিল।
কেন ঘটেছিল নারকীয় এ ধ্বংসযজ্ঞ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিক। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্র-ম্যান এর নির্দেশে জাপান আত্মসমর্পণ না করায়; তার নির্দেশেই চালানো হলো এ হত্যা লীলা।
উদ্দেশ্য ছিল জাপানকে জব্দ করা এবং আর দ্রুত যুদ্ধ শেষ করা। এই বোমা হামলার পর এশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আকস্মিক পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৪ই আগস্ট জাপান নিঃশর্তভাবে মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।
তবে পরমাণু বোমার ভয়েই জাপান আত্মসমর্পণ করে বলে যে কথা বলা হয়, অনেক সমালোচক তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। তাদের মতে, জাপান এই বোমা হামলার আগে থেকেই আসলে আত্মসমর্পণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
আজও সেই ভয়াবহ স্মৃতি বহে বেড়াচ্ছে শুধু জাপান নয়, পুরো বিশ্ব। কয়েক দশক ধরে ৬ আগস্ট হিরোশিমা এবং নাগাসাকির ট্র্যাজেডিকে ‘হিরোশিমা দিবস’ হিসাবে স্মরণ করে চলেছেন।
সূত্র: বিবিসি
জেএমএস/জিকেএস