ধর্ম

জুমআর দিন তেলাওয়াত-দরূদসহ বিশেষ সময়ের আমল

জুমআর দিন বিশেষ ইবাদত ও দোয়া কবুলের দিন। এ দিন কুরআন তেলাওয়াত, দরূদ পাঠ এবং দোয়া কবুলে অল্প কিছুক্ষণ সময়ের বিশেষ একটি মুহূর্ত আছে। এ সময়টিতে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা বান্দার কোনো বৈধ আবেদনই ফিরিয়ে দেন না। জুমআর দিন ফজিলত ও মর্যাদা লাভে হাদিসের নির্দেশনা মোতাবেক আমলগুলো করা জরুরি।

Advertisement

হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমআ এবং রমজানের মধ্যবর্তী সময় যে সব গোনাহ হয়ে থাকে তা পরবর্তী নামাজ, জুমআ এবং রমজান (পালনে) সে সব মধ্যবর্তী গোনাহসমূহের কাফফারা হয়ে থাকে। যদি (সে) কবিরা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে।’ (মুসলিম, তিরিমজি)

উল্লেখিত হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, কোনো ব্যক্তি যদি ফজরের নামাজ পড়ার পর পরদিন ফজরের নামাজ আদায় করে তবে এ সময়ে মধ্যে করা সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন।

এভাবে এক জুমআ আদায় করার পর পরবর্তী  জুমআ আসা পর্যন্ত, এক রমজানের রোজা আদায়ের পর পরবর্তী রমজান পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ে ঘটে যাওয়া গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।

Advertisement

বিশেষ ৩ আমলে কাটুক জুমআর দিন

মুসলিম উম্মাহর জন্য জুমআ আদায় করা ছাড়াও নামাজের আগের পরের বিশেষ ৩টি আমল রয়েছে। যার ফজিলত এবং মর্যাদাও অনেক বেশি। তাহলো-

১, কুরআন তেলাওয়াত

জুমআর দিন তথা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমআর দিন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কুরআন তেলাওয়াত বিশেষ একটি আমল। এ আমল বলতে সুরা কাহফের তেলাওয়াতকে বুঝায়। এ সুরার তেলাওয়াত বিশেষ ফজিলতপূর্ণ  ইবাদত। এটি কুরআনুল কারিমের ১৫তম পারার ১৮নং সুরা। সম্পূর্ণ সুরাটি তেলাওয়াত করতে না পারলেও প্রথম ও শেষ ১০ আয়াত হলেও তেলাওয়াত করা উত্তম। আর তাতে মিলবে গুরুত্বপূর্ণ  সব ফজিলত।

Advertisement

> যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে অপর (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।

> যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, সে আটদিন পর্যন্ত সর্ব ধরনের ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।

> এক জুমআ থেকে অপর জুমআ পর্যন্ত তার সব (কবিরা গোনাহ ব্যতিত) গোনাহ মাফ হয়ে যাবে।

২. বেশি বেশি দরূদ পড়া

জুমআর দিন তথা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে জুমআর দিন সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত বেশি দরূদ পাঠ করা উত্তম। যদি কোনো ব্যক্তি একবার দরূদ পড়ে তবে তার প্রতি ১০টি রহমত নাজিল হয়। তবে জুমআর দিন আসরের নামাজের পর দরূদ পড়ার বিশেষ ফজিলত আছে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

হজরত আউস ইবনে আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের সর্বোত্তম দিনগুলোর একটি হলো জুমআর দিন; এ দিন হজরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে। এ দিন তাঁর মৃত্যু হয়েছে। এ দিন শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়া হবে। আর এ দিনই (শিঙ্গায় ফুঁ দেওয়ার ফলে) সবাই অচেতন হয়ে পড়বে।

সুতরাং এ দিন তোমরা বেশি করে আমার জন্য দরূদ পাঠ কর। কারণ, তোমাদের দরূদ আমার কাছে পেশ করা হবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করন, (মৃত্যুর পর) আপনার দেহ শেষ হয়ে যাবে? তখন কীভাবে আমাদের দরূদ পাঠ আপনার কাছে পেশ করা হবে?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘নবিদের দেহ ভক্ষণ করা আল্লাহ তাআলা মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন।’ (আবু দাউদ)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দরুদ শরিফ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন।’ (মুসলিম, তিরমিজি)

৩. আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত অল্প কিছুক্ষণ সময়ের আমল

জুমআর দিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময় নামাজে অতিবাহিত করা উত্তম। কিন্তু এ নামাজের অতিবাহিত করার অর্থ  হলো- আসর নামাজ আদায় করে মাগরিব পড়ার নিয়তে বাকি সময় মসজিদে অবস্থান করে তাসবিহ-তাহলিলে অতিবাহিত করা। দরূদ পড়া। বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আর তাতেই নামাজে অতিবাহিত করার সাওয়াব মিলবে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় এসেছে-

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমআর দিনের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘এতে (এ দিনে) কিছু সময় আছে এমন, যখন কোনো মুসলিম বান্দা দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। তিনি হাতের ইশারায় দেখিয়ে দেন যে, ওই সময়টি (খুবই) অল্প।’ (বুখারি)

> হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন,নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জুমআর দিন একটি সময় আছে যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কোনো কল্যাণ চাইলে, তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। আর সেটি হলো আসরের পর।’ (বুখারি, মুসনাদে আহমাদ)

> হজরত জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জুমআর দিন ১২ ঘণ্টা সময়; এর মধ্যে একটি সময় আছে এমন, যখন কোনো মুসলিম বান্দা আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে, তিনি তাকে তা অবশ্যই দেবেন। সুতরাং তোমরা আসরের পর শেষ সময়টুকুতে তা অনুসন্ধান কর।’ (আবু দাউদ)

> হজরত আবু মুসা আশআরি রাদিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে হজরত আবু বুরদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাকে বলেন, তুমি কি তোমার পিতাকে জুমআর দিনের (বিশেষ) সময়ের মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো হাদিস বর্ণনা করতে শুনেছ?

আমি বলি, ‘হ্যাঁ’, আমি তাকে বলতে শুনেছি, আমি (আবু ‍মুসা আশআরি)  আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি- সেটি হলো ইমামের (বৈঠকে) বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত মাঝখানের সময়টুকু।’ (মুসলিম)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম ও অন্যান্য ইসলামিক স্কলারগণ যে মতটি দিয়েছেন, তাহলো- জুমআর দিন দোয়া কবুলের সেই সময়টি হলো আসরের পর। (যাদুল মাআদ)

আল্লামা ইবনুল কায়্যিম বলেন, আমার মতে নামাজের সময়টি মূলত এমন এক সময়, যখন দোয়া কবুলের আশা করা যায়। (সাধারণত নামাজের সময় ও আসরের পর-) উভয়টি হলো দোয়া কবুলের সময়; যদিও বিশেষ এ সময়টি হলো আসরের পর। এটি নির্দিষ্ট। আগে পরে হওয়ারও কোনো সুযোগ নেই। তবে ‘নামাজের সময়’ কথাটি নামাজের আগের ও পরের উভয় সময়কেই বোঝায়।

জুমআর দিন এক জায়গায় মুসলিমদের সমবেত হওয়া; তাদের নামাজ আদায় করা এবং বিনয়ের সঙ্গে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া- এ সবগুলোরই দোয়া কবুলের পেছনে প্রভাব রয়েছে। তাই তাদের সমবেত হওয়ার সময়টিতে দোয়া কবুর হওয়ার ব্যাপারে আশা করা যায়। আর এভাবেই জুমআর দিনের মর্যাদা ও আমল সম্পর্কে  রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ও সাল্লামের সব হাদিসের মধ্যে সমন্বয় হয়ে যায়।

সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, জুমআর দিন নামাজ ও ইবাদতে অতিবাহিত করা। সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা। বেশি বেশি দরূদ পড়া। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ইবাদত-বন্দেগি ও দরূদ-ইসতেগফারে অতিবাহিত করা। যাতে জুমআর দিনের রহমত বরকত ও মাগফেরাত লাভ করে ধন্য হওয়া যায়।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমআর নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমআর দিনের আমল ও করণীয়গুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। জুমআর দিনে মর্যাদা ও ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে গোনাহমুক্ত জীবন লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/জিকেএস