নগরে ফসলের ঘ্রাণ নেই, নেই কৃষক-কৃষাণীর বৈচিত্র্যপূর্ণ অবাধ বিচরণ। যে কারণে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালির প্রাণের উৎসব নবান্নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিত হয় উৎসব-প্রিয় নগরের মানুষেরা।চারুকলার বকুল তলায় শনিবার সকালে ঢাক-ঢোলসহ বিভিন্ন লোকজন বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা আর মুড়ি-মুড়কির গন্ধ কিছুক্ষণের জন্য হলেও নগরবাসীকে গ্রামীণ আবহ দিতে সহায়তা করে। মনে করিয়ে দেয় বাঙালির শেকড় সন্ধানী ঐতিহ্যের কথা।জাতীয় নবান্নোৎসব উদযাপন পর্ষদ আয়োজিত এ লোকজ অনুষ্ঠানের শুরু হয় মুরতজা কবীর বশীরের বাঁশি সহযোগে তবলা বাদনের মধ্য দিয়ে। এর পর আয়োজক পর্ষদের চেয়ারম্যান লায়লা হাসানকবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ’র ‘আমার সকল কথা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন।কবিতা পাঠ শেষ হতেই লায়লা হাসানের নির্দেশনায় ‘আয় রে আয়রে ছুটে/সোনালী ধানের…’ গান সহযোগে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে ‘নটরাজ’। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সঙ্গে অবিচ্ছেদ্য জ্ঞান বৃদ্ধ রবীন্দ্রনাথের আদর্শবাহী সংগঠন রবীন্দ্র সংগীত সম্মিলন পরিষদের শিল্পীরা রজনীকান্তের ‘চরণনিম্নে উৎসবময়ী’ গানটি পরিবেশন করে।এর পর একের পর এক লোকজ গান ও গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশনায় প্রাণবন্ত করে তোলে চারুকলার বকুলতলা প্রাঙ্গণ। যান্ত্রিক নগরের মানুষের কিছুক্ষণের জন্যে হলেও ফিরে যায় গ্রামীণ আবহে তথা গ্রামীণ পরিবেশে।সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাবনা, গীতিমায়া, উদীচী, নন্দন কলাকেন্দ্র, বহ্নিশিখা, স্পন্দনসহ দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চাকমা’র নৃত্য শিল্পীরা চাকমা নৃত্য পরিবেশন করে। এ ছাড়া একক পরিবেশনায় নজরুলের গান পরিবেশন করেন আবুবকর সিদ্দিক, রবীন্দ্রনাথের গান করেন স্বপ্নীল সজীব ও সীমান্ত সজল।সাংস্কৃতিক পরিবেশনা শেষে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন ভাষা সংগ্রামী ও রবীন্দ্র গবেষক আহমদ রফিক।উদ্বোধনী বক্তব্যে আহমদ রফিক নবান্ন উৎসবের গুরুত্ব তুলে ধরে ‘আমাদের অগ্রহায়ণ ফিরিয়ে দাও’ স্লোগানে আন্দোলন বেগবান করবার জন্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতি আহ্বান জানান।
Advertisement