আন্তর্জাতিক

যে কৌশলে দৈনিক ১০ লাখ টিকাদানের মাইলফলকে পাকিস্তান

চলতি সপ্তাহে দারুণ এক মাইলফলকে পৌঁছেছে পাকিস্তান। দৈনিক টিকাদানের হার ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে সানন্দ্যে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তবে এই ‘সাফল্য’ এত সহজে আসেনি। যে দেশের বহু মানুষ এখনো করোনাভাইরাস বলে কিছু রয়েছে সেটাই বিশ্বাস করেন না, তাদের করোনারোধী টিকা দেয়াটা দুরূহই বটে! দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের খবর অনুসারে, বেতন আটকে দেয়া, মোবাইলসেবা বন্ধ করা, প্লেনে ওঠা নিষেধ হয়ে যাওয়ার মতো হুমকি-ধামকি দিয়ে বা কৌশল খাটিয়ে লোকজনকে টিকা নিতে বাধ্য করছে পাকিস্তান সরকার। আর সে কারণেই দৈনিক টিকাদানের হার হুট করে এতটা বেড়ে গেছে।

Advertisement

পাকিস্তানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই দেশটির সবাইকে দেয়ার মতো টিকা নিশ্চিত করেছেন তারা। টিকাগ্রহণে মানুষের দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর করতে ইতোমধ্যে জরিমানার নিয়ম চালু হয়েছে। পাকিস্তানে স্কুলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বর্তমানে টিকাগ্রহণের প্রমাণপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। চলতি মাস শেষ হওয়ার আগেই সেবা ও পরিবহনকর্মীদের পাশাপাশি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যেও এই বাধ্যবাধকতা চালু হবে।

পাকিস্তানের অন্যতম বাণিজ্যিক কেন্দ্র ও সবচেয়ে জনবহুল শহর করাচিতে এ সপ্তাহে টিকাকেন্দ্রগুলোর বাইরে লম্বা লাইন দেখা গেছে। কোথাও কোথাও মারামারির ঘটনাও ঘটেছে।

করাচির বৃহত্তম টিকাকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত শহীদ খান নামে এক গাড়িচালক বলেন, আমি টিকায় বিশ্বাস করি না, করোনাভাইরাসের অস্তিত্বও মানি না। তারপরও টিকা নিতে বাধ্য হচ্ছি, যেন আমার আগস্ট মাসের বেতনটা পাই আর মোবাইলসেবা বন্ধ না হয়ে যায়।

Advertisement

অবশ্য টিকা নেয়ায় অনাগ্রহ পাকিস্তানিদের জন্য নতুন নয়। দেশটি ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত অন্য টিকা, বিশেষত পোলিও নিয়ে ভুল তথ্যে জর্জরিত। ঠিকঠাক টিকাদানের মাধ্যমে অনেক দেশ পোলিও নির্মূল করতে পারলেও পাকিস্তানে আজও প্রকট গুরুতর এই রোগ।

এদিকে, কৌশল খাটিয়ে মানুষকে টিকাগ্রহণে বাধ্য করলেও এর সঙ্গে নতুন বিপত্তি হাজির হয়েছে পাকিস্তানি কর্তাদের সামনে। করাচির টিকাকেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা বেশিরভাগ মানুষের মুখেই মাস্ক থাকছে না, সামাজিক দূরত্বেরও বালাই নেই। ফলে হুড়োহুড়ি করে টিকা নেয়ার সময় উল্টো করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শহরটির একটি টিকাকেন্দ্রে ডেটা এন্ট্রি অফিসার হিসেবে কর্র্মরত শাব্বির আহমেদ বলেন, মনে হচ্ছে সরকারের হুমকির পর পুরো করাচিই টিকাকেন্দ্রে চলে এসেছে। তাদের কাছে জীবনরক্ষার চেয়ে যেন সেলফোন সেবা চালু রাখাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

পাকিস্তানে সম্প্রতি নতুন করে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে, বিশেষ করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুত। কিছুদিন ধরে সেখানে দৈনিক চার হাজারের মতো নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে, যা গত এপ্রিলের ভয়াবহ সংক্রমণের তুলনায় কম, তবে দুই সপ্তাহ আগের হিসাব তুলনা করলে সংক্রমণ বেড়েছে একলাফে ৫৬ শতাংশ।

Advertisement

জুলাইয়ের শেষদিকে করাচির ২৫ শতাংশ নমুনা পরীক্ষার ফলাফল পজিটিভ এসেছে। সরকারি হিসাবে পাকিস্তানে করোনায় এ পর্যন্ত ২৩ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি। তবে নমুনা পরীক্ষার হার পর্যাপ্ত না হওয়ায় আক্রান্ত-মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

পাকিস্তান সরকারের তথ্যমতে, প্রায় ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশটিতে ২ কোটি ৬০ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে অন্তত এক ডোজ করে করোনা টিকা পেয়েছেন। এক্ষেত্রে পাকিস্তান মূলত চীনা টিকার ওপর নির্ভর করছে। দেশটিতে সিনোফার্ম ও সিনোভ্যাকের পাশাপাশি অল্প কিছু ফাইজার ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেয়া হয়েছে।

কেএএ/জিকেএস