সরকারের তুলনায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওগুলো কম তথ্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা অনুযায়ী ১৫৩টি সরকারি ও ৩৯টি এনজির ওয়েবসাইটের ওপর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই) ‘তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ চর্চার মূল্যায়ন’ বিষয়ক গবেষণাপত্রে এ তথ্য জানানো হয়। অনলাইন প্লাটফর্মে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান, বিশেষজ্ঞ উপদেষ্টা অধ্যাপক মোহাম্মদ শোয়ায়েব, গবেষণা তত্ত্বাবধায়ক শাহজাদা এম আকরাম, সিনিয়র ফেলো রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি গবেষক জুলিয়েট রোজেটি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এই গবেষণায় নমুনায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ৭৬ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ২৪ শতাংশ এনজিও। সরকারি ও আইনের আওতাভুক্ত স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ (৩১ শতাংশ), মন্ত্রণালয়ের অধিভুক্ত বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান (৩১ শতাংশ), সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান (১৮.৪ শতাংশ) এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠান (সংস্থা, ট্রাস্ট, ফাউন্ডেশন, পাবলিক কোম্পানি ইত্যাদি) (১৯.৬শতাংশ)।
Advertisement
অন্যদিকে এনজিওর মধ্যে ৪৪ শতাংশ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের এবং ৬৬ শতাংশ জাতীয় পর্যায়ের এনজিও। এনজিওদের কাজের ধরন অনুযায়ী, নমুনায়িত এনজিওর মধ্যে ২২.২ শতাংশ এনজিও শুধু সেবা কার্যক্রম, ১৫.৬ শতাংশ এনজিও শুধু অধিপরামর্শ কার্যক্রম এবং ৬২.২ শতাংশ এনজিও এই উভয় ধরনের কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
সার্বিকভাবে নমুনায়িত প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে ৯২.৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট রয়েছে, ৭.২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের কোনো ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি। সরকারি প্রতিষ্ঠানের ৩.২ শতাংশ এবং এনজিওদের ২০ শতাংশের কোনো ওয়েবসাইট পাওয়া যায়নি।
টিআইবির গবেষণা অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি তথ্য দেয়- খাদ্য মন্ত্রণালয়, পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এই তিনটি মন্ত্রণালয়ের স্কোর সবচেয়ে বেশি। আর সবচেয়ে কম তথ্য দেয়- আন্তঃবাহিনী নির্বাচন পর্ষদ, ক্ষুদ্র, মাইক্রো ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী বোর্ড, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল ও ম্যানেজমেন্ট সায়েন্স ফর হেলথ।
আর এনজিওগুলো মধ্যে সবচেয়ে কম তথ্য দেয়- কাতার চ্যারিটি, হেলভেটাস ইন্টারন্যাশনাল, সলিডারিটিস ইন্টারন্যাশনাল, প্রিপ ট্রাস্ট, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র ও রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল। আর সবচেয়ে বেশি তথ্য দেয়- কোস্টাল অ্যাসোসিয়েশন ফর স্যোশাল ট্রান্সফরমেশন। এ তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারি ১২৮টি মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের পরই এনজিওটির স্থান। এর আগে কোনো এনজিও নেই। অথচ গ্রামীণ ব্যাংক ও ব্র্যাকের মতো এনজিওর কোনো তথ্য নেই গবেষণাপত্রে।
Advertisement
এক্ষেত্রে তথ্যের ব্যাপ্তি বৃদ্ধি সংক্রান্ত ১১টি সুপারিশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সেগুলো হলো- কর্তৃপক্ষকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার নির্দেশিকা প্রণয়ন করতে হবে এবং ওয়েবসাইটে তা প্রকাশ করতে হবে। নির্দেশিকার কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে তদারকি বৃদ্ধি করতে হবে। বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া, সেবা ও সেবা প্রদানকারীর তথ্য, কর্মকর্তা কর্মচারীর ক্ষমতা ও দায়িত্ব, সভার সিদ্ধান্ত, বার্ষিক বাজেট, নিরীক্ষা প্রতিবেদন, তথ্য প্রাপ্তির আবেদনের মাধ্যমে কতজন, কী ধরনের তথ্য চেয়েছে তার হালনাগাদ তথ্য।
এছাড়া তথ্য অধিকার আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত আবেদনকৃত তথ্যের ধরন বিশ্লেষণের ভিত্তিতে তথ্যের ঘাটতি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংরক্ষণের ও তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের প্রকাশিত তথ্য ও কার্যক্রম সম্পর্কিত অভিযোগ দায়েরের জন্য ওয়েবপেইজে সুনির্দিষ্ট স্থান রাখতে হবে এবং অনলাইনের মাধ্যমে কার্যকর নিষ্পত্তি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য ইংরেজির পাশাপাশি বাংলায় ও নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রচলিত ফন্টে (ইউনিকোড) প্রকাশ করতে হবে। ওয়েবসাইট ব্যবস্থাপনা বিভাগের জনবলের কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। এনজিও পর্যায়ে ওয়েবসাইটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীসহ প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত কর্মকর্তাদের স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচার সম্পর্কে জ্ঞান ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সুনির্দিষ্ট প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে।
ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে এবং হালনাগাদকরণের তারিখ উল্লেখ করতে হবে। প্রতিবন্ধীদের সংশ্লিষ্ট সেবা সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করতে হবে; ওয়েবসাইটকে প্রতিবন্ধীবান্ধব করার উদ্দেশ্যে ভয়েস অ্যাক্টিভেটেড ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক স্বপ্রণোদিত তথ্য প্রকাশ ও প্রচারের কার্যকরতা বৃদ্ধিতে তথ্য কমিশনসহ তথ্য অধিকার অ্যাক্টিভিস্ট ও গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে সমন্বিত প্রচারণার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে। তথ্য প্রকাশ ও প্রচারে প্রযুক্তির কার্যকর ব্যবহার, প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা ও সঙ্গতি পর্যবেক্ষণের জন্য তথ্য কমিশনের ক্ষমতা ও তদারকি বাড়াতে হবে। তদারকি কার্যক্রমে নাগরিক সমাজ ও জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
এইচএস/এমআরআর/এমকেএইচ