অর্থনীতি

অর্থবছরের শুরুতে চট্টগ্রাম বন্দরের সব সূচকই নিম্নমুখী

দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের ৯২ শতাংশের নিয়ন্ত্রক চট্টগ্রাম বন্দর। এ বন্দরে দেশের ৯৮ শতাংশ কনটেইনারজাত পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়ে থাকে। আর প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাত হাজার কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়। এছাড়া রাজস্ব আদায় হয় দৈনিক হাজার কোটি টাকা।

Advertisement

তবে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে দেশব্যাপী চলমান বিধিনিষেধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। আগের মাস জুনের তুলনায় জুলাইয়ে এ বন্দরের সব সূচকই নিম্নমুখী ছিল।

মাস শেষে হিসাব করে দেখা গেছে, জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে বন্দরে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ কার্গো ও ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। পাশাপাশি জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে ১৪টি জাহাজ কম হ্যান্ডলিং হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জুলাইয়ের শেষদিকে ঈদুল আজহার পর সর্বশেষ ঘোষিত বিধিনিষেধে নির্দিষ্ট কয়েকটি পণ্য ছাড়া দেশের সব ধরনের শিল্প কারখানা বন্ধ রাখা হয়। অবশ্য আগস্টের শুরুতে আবার রফতানিমুখী সব ধরনের শিল্প-কারখানা খুলে দেয়া হয়।

Advertisement

তাছাড়া বৈশ্বিক সঙ্কটে রফতানি বাণিজ্যে গতি কমে যাওয়া এবং ঈদুল আজহার বন্ধের প্রভাবে জুলাই মাসে জুনের তুলনায় চট্টগ্রাম বন্দরের সব ধরনের সূচকই নিম্নমুখী ছিল।

বন্দর সূত্রে জানা গেছে, জুলাই মাসে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৭৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫২৯ মেট্রিক টন। এর আগের মাসে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছিল ৮২ লাখ ছয় হাজার ৩৯৩ মেট্রিক টন। সে হিসেবে জুনের তুলনায় জুলাই মাসে বন্দরে ১০ দশমিক ৩৭ শতাংশ কম কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে।

আবার জুলাই মাসে আমদানি-রফতানি মিলিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে দুই লাখ ৪৩ হাজার ৩৮০ টিইউইউস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের)। এর আগের মাসে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল দুই লাখ ৬৩ হাজার ৩৩৯ টিইউইউস। সে হিসেবে আগের মাসের তুলনায় জুলাইয়ে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ কম কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।

এছাড়াও জুলাই মাসে বন্দরের জেটি ও বহির্নোঙর মিলে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ২৯১টি। এর আগের মাসে হয়েছিল ৩০৫ টি। সে হিসাবে আগের মাসের তুলনায় জুলাইয়ে বন্দরে ১৪টি জাহাজ কম হ্যান্ডলিং হয়েছে।

Advertisement

জানা গেছে, গত বছর দেশে মহামারির শুরুতে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। যার কারণে বন্দরের কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল। এছাড়া করোনার প্রস্তুতি কম থাকায় গত বছরের কয়েকমাস পরিবহন ও অপারেশনাল কাজ কিছুটা ব্যহত হয়েছিল।

একপর্যায়ে এ ধাক্কা কাটিয়ে গতি আসে বন্দরে। লকডাউনের মধ্যে দেশের শিল্প-কারখানা খোলা রাখা ও প্রথম পর্যায়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে গতি ধরে রাখে চট্টগ্রাম বন্দর।

কিন্তু ঈদুল আজহার পর সর্বশেষ গত ২৪ জুলাই ঘোষিত বিধিনিষেধে শিল্প-কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দেয়া হয়। এতে করে আমদানিকারকরা কনটেইনার খালাস অনেকাংশে কমিয়ে দেন। ফলে বন্দর ইয়ার্ডে কনটেইনার জট সৃষ্টি হতে থাকে।

জট নিরসনে গত ২৫ জুলাই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক অফিস আদেশে দু’টি শর্তে বন্দরের সব ধরনের আমদানি পণ্যের কনটেইনার বেসরকারি অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপোতে (আইসিডি) স্থানান্তর করতে আদেশ দেন। এরপর প্রায় তিন হাজার আমদানি কনটেইনার আইসিডিতে স্থানান্তর হয়। তারপরও বর্তমানে বন্দর ইয়ার্ডে প্রায় ৪২ হাজারেরও অধিক কনটেইনার জমা রয়েছে।

এছাড়াও কয়েকদিন আগে থেকে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরগুলোর অচলাবস্থার প্রভাবে দেশের রফতানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। বর্তমানে ১৯টি আইসিডিতে ১১ হাজারেরও অধিক কনটেইনার জাহাজিকরণের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। সব মিলিয়ে জুলাই মাসে এসে বন্দরের সব ধরনের সূচকে নিম্নমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ‘লকডাউনে জুলাইয়ের শেষদিকে শিল্প-কারখানা বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে কার্গো-কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে। আমদানিকারকরা পণ্য খালাস অনেকাংশে কমিয়ে দেন। তাছাড়াও ঈদুল আজহার বন্ধের কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। তবে শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ায় বন্দরে আবার গতি আসবে বলে আশা করছি।’

মিজানুর রহমান/এএএইচ/এমকেএইচ