অর্থনীতি

বাণিজ্য ঘাটতি ২২৮০ কোটি ডলার

বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে আমদানি কমায় বেশকিছু দিন পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি নিম্নমুখী ছিল। গত কয়েক মাসে আমদানি বাড়ায় এ ঘাটতি ফের ঊর্ধ্বমুখী ধারায় ফিরেছে। ফলে অর্থনীতির অন্যতম প্রধান সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ২৮০ কোটি ডলারে, যা আগের অর্থবছরের (২০১৯-২০) চেয়ে ২৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

Advertisement

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রফতানি থেকে (এফওবিভিত্তিক, ইপিজেডসহ) দেশ আয় করেছে তিন হাজার ৮৭৬ কোটি ডলার। এটি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৫ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি। তবে আমদানি নিয়ে পুরো অর্থবছরের হিসাব এখনও প্রকাশ করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসের হিসাবে বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশের ব্যয় হয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৩ কোটি ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২১-২২ অর্থবছরের মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্রে পুরো অর্থবছরের পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির তথ্য প্রকাশ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষিত মুদ্রানীতিতে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দুই হাজার ২৭৯ কোটি ৯০ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা আগের (২০১৯-২০) অর্থবছরে পণ্য বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৭৮৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল এক হাজার ৫৮৩ কোটি ৫০ লাখ ডলার। গত অর্থবছর পণ্য বাণিজ্যের পাশাপাশি সেবা খাতের (বীমা, ভ্রমণ ইত্যাদি) ঘাটতিও বেড়েছে অনেকটা। ২০২০-২১ অর্থবছরে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩০০ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ২৫৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

Advertisement

রফতানি আয়ে গতি ফেরার পাশাপাশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের জোরালো প্রবৃদ্ধি চলতি হিসাবের ঘাটতি কমাতে সহায়তা করেছে। তাছাড়া গত অর্থবছর সার্বিক লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্তের দেখা পেয়েছে দেশ, যা অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক।

এদিকে চলতি অর্থবছর (২০২১-২২) বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতিতে পুরো অর্থবছরের বাণিজ্য ঘাটতি প্রাক্কলন করা হয়েছে দুই হাজার ৬০৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এটি গত অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বেশি। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলসহ বেশির ভাগ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এ পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এ বিষয়ে মুদ্রানীতির লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, গত অর্থবছরের মুদ্রানীতি বহিঃখাতের গতি পুনরুদ্ধার ও বৈদেশিক লেনদেন ভারসাম্যের চলতি হিসাবে ঘাটতি হ্রাস, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখাসহ সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে উদ্বৃত্ত তৈরিতে সহায়ক ছিল। উচ্চভিত্তির পাশাপাশি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে তেলসহ বেশির ভাগ পণ্যের মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে আমদানি ব্যয় বাড়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লেনদেন ভারসাম্যের পূবার্ভাস অনুযায়ী এবার নিট বৈদেশিক সম্পদের প্রবৃদ্ধি গত অর্থবছরের তুলনায় অনেকটা কম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সাধারণত চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত হলে বিদেশের সঙ্গে চলতি লেনদেনের জন্য দেশকে কোনো ঋণ করতে হয় না। ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করতে ঋণ নিতে হয়। বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে চাপে পড়ে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স, রফতানি আয় এবং বৈদেশিক অনুদান ও ঋণের ওপর ভর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।

Advertisement

গত মাসেই রিজার্ভ প্রথমবার ৪৫ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করে। এ রিজার্ভ দিয়ে সাড়ে সাত মাসের আমদানি দায় মেটানো সম্ভব। গত বছরের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়তে শুরু করে এবং এর জেরে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বহির্বিশ্বের সঙ্গে দেশের আমদানি ও রফতানি বেশ কমে যায়। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ সেই ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে।

ইএআর/বিএ/জেআইএম