আইন-আদালত

করোনায় গর্ভবতীর আলাদা চিকিৎসার নির্দেশনা চেয়ে রিট : সময় চান আদালত

দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা আক্রান্ত গর্ভবতী নারীদের বিশেষ তত্ত্বাবধানে আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় মেডিকেল পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে করা রিট মুলতবি (স্ট্যান্ড ওভার) করেছেন হাইকোর্ট।

Advertisement

এ সময় আদালত বলেন, ‘আমরা বিষয়টি আরও দেখি। সরকার তো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাই তো লকডাউন মানছি না। আপনারা জানেন, ঈদের আগে এক কোটি চার লাখ মোবাইল ইউজার ঢাকা ত্যাগ করেছে (সিম এক স্থান ত্যাগ করেছে)। তাই আমরা যে কোনো আদেশ দিলে সেটির জবাব দিতে দিতেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সময় চলে যাবে, তাই আমরা কোনো আদেশ দিতে চাই না।’

মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল একক বেঞ্চ এমন মন্তব্য করে আদেশ দেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট ড. সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।

Advertisement

এর আগে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে গর্ভবতীদের জন্য আলাদা চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ ও তাদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় মেডিকেল পথ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা চেয়ে রিট আবেদন করা হয়েছিল। রিটে একই সঙ্গে করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সরকারকে দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্য শয্যার সংখ্যা বাড়াতেও বলা হয়। ওই রিটের শুনানিতে আদালত এসব কথা বলেন।

এর আগে গত ১১ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. সৈয়দা নাসরিন ও মো. শাহিনুজ্জামান এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠান।

নোটিশ পাওয়ার তিনদিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়। কিন্তু কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় উচ্চ আদালতে রিট করা হয়।

সংগঠনের আইনজীবী ড. সৈয়দা নাসরিন নোটিশ পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে ওই দিন জাগো নিউজকে বলেছিলেন, ‘সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকলেও বেসরকারি হাসপাতাল এবং বিশেষ করে বরিশাল ও কুষ্টিয়ার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা পজিটিভ বা রোগী করোনা আক্রান্ত বুঝতে পারলেই আর ভর্তি নেন না। এমনও অভিযোগ আছে, বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে মারাত্মক ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তি করোনা পজিটিভ হলেই তাদের হাসপাতাল থেকে ভর্তি বাতিল করে বের করে দিচ্ছে।’

Advertisement

তিনি জানান, গত এপ্রিল মাসে সন্তান প্রসবের পর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সহযোগী প্রযোজক রিফাত সুলতানা। তিনি আরও জানান, এক প্রকৌশলী চাঁপাইনবাবগঞ্জের অধিবাসী কিন্তু পিডিবির চাকরিসূত্রে অবস্থান চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে। ওই প্রকৌশলীর স্ত্রীর সন্তান জন্মের বাকি ছিল দুই/তিন দিন। এর মধ্যে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানোর চেষ্টা চালিয়েও ভর্তি করতে না পেরে সর্বশেষ সরকারি মা ও শিশু হাসপাতালে ভর্তি করেন।

তিনি জানান, বিশেষ করে এমন পরিস্থিতিতে দেশের সকল বেসরকারি হাসপাতাল গর্ভবতীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে নোটিশে।

গর্ভবতী নারীদের বিষয়টি গুরুত্ব দেয়ার জন্য সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতর থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর পাশাপাশি গর্ভবতীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনসহ প্রয়োজনীয় মেডিকেল পথ্য সরবরাহ করতে বলা হয়েছে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে নোটিশে বলা হয়, গত ৭ জুলাই প্রথমবারের মতো একদিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ ছাড়ায়। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়াচ্ছে। একেবারে গ্রামগঞ্জেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রায় ৫০ শতাংশ রোগী গ্রামের। এ অবস্থায় ৫টি বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।

এক. করোনা আক্রান্ত গর্ভবতীদের বিশেষ তত্ত্বাবধান এবং তাদের জন্য হাসপাতালে আলাদা স্থান নির্ধারণ করতে হবে।

দুই. সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য শয্যা বাড়াতে হবে।

তিন. যারা সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হতে পারেনি, তাদের বেসরকারি হাসপাতালে দ্রুত ভর্তি করানোর নির্দেশনা জারি করতে হবে। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।

চার. প্রত্যেক জেলায় করোনা হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনসহ হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সরবরাহ করতে হবে।

পাঁচ. করোনা রোগীদের যথাযথ তত্ত্বাবধান এবং হাইজেনিক ও ভালো খাবার সরবরাহ নিশ্চিতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

এফএইচ/ইএ/এমকেএইচ