জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কোনো নির্দেশনা না থাকলেও বেনাপোল কাস্টম হাউজের কর্মকর্তারা দুই বছর যাবৎ ‘আমদানি মূল্য ও কাস্টমের চাপিয়ে দেয়া মূল্যের উপর জরিমানা আদায়ের নামে আমদানিকারকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করছে। একদিকে মূল্য বাড়ানো অন্যদিকে জরিমানার মারপ্যাচে আমদানিকারকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ফলে আমদানিকৃত পণ্য চালানের দামও বেড়ে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দেশীয় বাজারে। বেনাপোল কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন একাধিকবার স্থানীয় কাস্টম কমিশনারকে মৌখিক ও লিখিত ভাবে এই জরিমানা তুলে নেয়ার দাবি জানালে আশ্বাসের পরও তা তুলে নেয়া হচ্ছে না। গত ২৩ নভেম্বর জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও নীতি) ফরিদ উদ্দিন জরিমানা না করার জন্য স্থানীয় কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিলেও সে নির্দেশও কার্যকর করছে না বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দেশের সবচেয়ে বড় স্থলবন্দর বেনাপোল দিয়ে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে বড় ধরনের ধ্বস নামার পাশাপাশি স্থবির হয়ে পড়েছে। আমদানিকৃত পণ্য চালানের ওপর বেনাপোল কাস্টম কর্তৃপক্ষের মনগড়া ও চড়াও মূল্য চাপিয়ে দিয়ে শুল্কায়ন করায় মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমদানিকারকরা। ফলে অধিকাংশ আমদানিকারকরা বেনাপোল বন্দর দিয়ে মালামাল আমদানি না করে অন্য বন্দরে ঝুঁকে পড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সম্পূর্ণ বিধিবহির্ভূতভাবে শুল্কায়ন গ্রুপে রক্ষিত পণ্যমূল্যের তিন মাসের ডাটাবেজের ওপর ভিত্তি করে অযৌক্তিক শুল্কায়ন করা হচ্ছে। এতে করে একদিকে যেমন আমদানিকারকরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন, তেমনি নির্ধারিত সময়ের বাইরে বন্দরে পণ্য পড়ে থাকায় গুনতে হচ্ছে মোটা অংকের ডেমারেজ। অপরদিকে সময়মতো পণ্য ছাড় করতে না পারায় ভুক্তভোগী প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আমদানি নির্ভর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না। এদিকে এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কাস্টমসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা বেপরোয়া হয়রানিতে নেমেছেন। যশোর চেম্বার, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূল্য বিধিমালা ২০০০ এ বলা আছে, আমদানি পণ্য শুল্কায়নের ক্ষেত্রে বিগত ৩ মাসের ডাটা ভ্যালু দেখে সর্বনিম ডাটা ভ্যালু অনুযায়ী শুল্ক নির্ধারণ করার। কিন্তু বেনাপোল শুল্ক হাউজ এ আইনের ধারপাশে দিয়েও যেতে চায় না। অথচ তিন মাসের ডাটাবেজের উপর ভিত্তি করে পণ্যের মনগড়া যে শুল্কায়ন করছে তা সামন্ত যুগের মতোই। যেখানে এখন এক সেকেন্ডে বিশ্ব বাজারের চিত্র অনলাইনে পাওয়া যায় সেখানে তিন মাসের ডাটাবেজ দেখার কোন মানে হয় না।তারপরও বেনাপোল কাস্টমস হাউজ তিন মাসের ডাটাবেজ মূল্যও মানতে চায় না। পণ্যের ওপর তিন মাসের ডাটাবেজের নামে বাড়তি শুল্কের ফাঁদ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ জটিলতা ও মারপ্যাঁচে পড়ে দেখা যায় অনেক সময় আমদানিকারক তার পণ্যটি যথাসময়ে ছাড়িয়ে নিতে পারছেন না। যে কারখানার জন্য পণ্যটি আনা হয়েছে সে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে আমদানিকারককে গুনতে হয় বাড়তি শুল্ক।সূত্র জানায়, অপেক্ষাকৃত কম পণ্য আমদানি করে এমন আমদানিকারকরা অনেক সময় কাস্টমসের চাহিদামতো বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য ছাড় করে নিয়ে যায়। এরকম বাড়তি শুল্ক দেয়ার তথ্য ডাটাবেজে রক্ষিত থাকে এবং এটাকেই উদাহরণ হিসেবে দেখায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এটি করতে গিয়ে যারা বেশি পরিমাণ পণ্য আমদানি করছেন সেসব আমদানিকারকের ওপর পড়ছে বাড়তি শুল্কের এ চাপ। তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে ডাটাবেজের ভিত্তিতে অযৌক্তিক মনগড়া শুল্ক। স্থানীরা বলছেন বেনাপোল কাস্টম হাউজে ‘জীনের আছড় পড়েছে’। পণ্যের মান, পরিমাণ, রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান না দেখে নিজেদের ইচ্ছামত মূল্য চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। রফতানিকৃত দেশে পণ্যের মূল্য বেড়ে গেলে সে মূল্যে কাস্টমস শুল্কায়ন করে কিন্তু যখন নানা কারণে একই পণ্যের মূল্য কমে যায় তখন কাস্টমস সে মূল্য মানতে চায় না। এছাড়াও পূর্ণাঙ্গ মেশিনের সাথে আসা তার ফিটিং সরজ্ঞাম (পার্টস) আলাদা করে শুল্কায়ন করে বাড়তি শুল্ককর আদায় করা হচ্ছে। কাস্টম সূত্রে জানা গেছে, চলতি (২০১৫-১৬) অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন হাজার ১৪৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা। জুলাই থেকে নভেম্বর পাঁচ মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক হাজার ২৮৩ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সেখানে পাঁচ মাসে আদায় হয়েছে এক হাজার ১২৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এ পর্যন্ত শুল্ক ঘাটতি একশ‘ ৫৭ কোটি ২৯ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। এর বিপরীতে আদায় হয়েছে ১৯০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগস্টে ২৫২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ২৪৬ কোটি ৬১ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৬৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সেখানে আদায় হয়েছে ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, অক্টোবর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩২ কোটি ২১ লাখ টাকা এবং নভেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৪৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায় হয়েছে ২২৩ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। ব্যবসায়ীদের মতে যে টাকা এ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে তা প্রতিটি আমদানিকৃত পণ্যের মূল্যের উপর দফায় দফায় চড়াও দিয়ে আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়াও আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে ইনভয়েজ মূল্য ও কাস্টমসের বাড়ানো মূল্যের পাথর্ক্য মূল্যের উপর জরিমানাও আদায় করা হচ্ছে। আমদানিকৃত পণ্যের সঠিক মূল্যে শুল্কায়ন করলে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসতো। এ নিয়ে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ বার বার কাস্টম কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেও কোন সুরাহা করতে পারেনি। কাস্টম কর্তৃপক্ষ বার বার কথা দিয়েও কথা রাখেননি জানালেন একজন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা। বেনাপোল কাস্টম হাউজে প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে শতকরা ৪০ ভাগ কাজ দিনে দিনে সম্পন্ন হলেও বাকি কাজ পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। আমদানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ও বন্দর ব্যবহারকারীরা জানান, পরীক্ষণ গ্রুপে লোকবল কম থাকায় সমস্যা আরো প্রকট আকার ধারন করেছে। এছাড়া আমদানিকৃত প্রায় পণ্য চালানে স্যাগ (স্পেশাল এসাইনমেন্ট গ্রুপ) এর নাম থাকায় আমদানিকৃত এসব পণ্য ৫দিনেও পরীক্ষণ করতে পারছেন না কর্মকর্তারা। আমদানিকৃত পণ্য একজন সহকারী কমিশনারের নেতৃত্বে পরীক্ষণ করে পণ্য চালান শুল্কায়ন করা হয়ে থাকে। পরীক্ষণের জন্য সিরিয়াল দিয়ে থাকতে হচ্ছে দিনের পর দিন। শতভাগ পরীক্ষার তালিকার অন্তর্ভুক্ত হাতে গুনা ২/৪টি পণ্য চালান ২/১ দিনে পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন হলেও বাকি পণ্যচালান পড়ে থাকছে দিনের পর দিন। প্রতিটি পরীক্ষণ গ্রুপে ২/৩ জন পরীক্ষণ কর্মকর্তার পক্ষে শতভাগ পরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিকে পণ্যচালান পরীক্ষণ ও পরীক্ষণ রিপোর্ট লেখা অন্যদিকে পণ্য চালান খালাস দেয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে যাচ্ছে।ফলে আমদানিকারকদের প্রতিনিধি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের সিরিয়াল দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, কখন পণ্য চালান পরীক্ষা হবে তার অপেক্ষায়। শতকরা ১০/১৫ ভাগ পণ্য চালানের কায়িক পরীক্ষা করার নিয়ম থাকলেও কাস্টম কর্তৃপক্ষ তা মানেন না। প্রায় বিল অব এন্ট্রি উচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের টেবিলে যাওয়ায় অধিকাংশ সময় পার হয়ে যায় পণ্য চালান খালাসে। তার পর প্রতিদিনই বেনাপোল কাস্টম হাউজে কর্মকর্তাদের মিটিং এর কারণে সময়মত কোন কাজ করা যায় না। এর ফলে আমদানিকারকরা দুই দিক থেকে আর্থিক ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। শুল্ক পরিশোধসহ অন্যান্য খরচ ব্যয় করে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যের চেয়ে কম মূল্যে চীনসহ অন্যান্য দেশের পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে। এর ফলে আমদানিকারকরা আমদানিতে উৎসাহ হারাচ্ছেন। বেনাপোল কাস্টম হাউজের একজন কর্মকর্তা জানান, বেনাপোল ও ভোমরা পাশাপাশি দু’টি বন্দর অবস্থান করায় আমদানিকারকগণ কম ঝুকিপূর্ণ মালামাল আমদানিতে উৎসাহিত হয়। মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে ও অপমূল্যায়ন করে কেউ যাতে পণ্য খালাস করতে না পারে এ ব্যাপারে কর্মকর্তাদের নির্দেশনা জারি করার পর থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে এসব পণ্য আমদানি কমে গেছে। কিন্তু অন্য বন্দর দিয়ে আসছে এসব পণ্য। যেখানে কলকাতা থেকে বেনাপোলে বন্দরে এক ট্রাক পণ্য আসলে ট্রাক ভাড়া দিতে হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। সেখানে কলকাতা থেকে হিলি, সোনামসজিদ, বুড়িমারী বন্দর পর্যন্ত ট্রাক ভাড়া পড়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকা। এত টাকা ব্যয় করে বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে ব্যবসায়ীরা কেন চলে যাচ্ছে সেটা তো আর খুলে বলার কোনো অবকাশ নেই। বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও কিছু স্বার্থান্বেষী মহল দীর্ঘদিন ধরে নানা অপপ্রচার চালিয়ে এই বন্দরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। অনেক আমদানিকারক আমদানিকৃত পণ্য চালানের ওপর কাস্টম কর্তৃক অতিরিক্ত মনগড়া মূল্য চাপিয়ে দেয়ার কারণে এ পথে আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার অনেকে অন্য বন্দর ও শুল্ক স্টেশন থেকে একই পণ্য কম মূল্যে নিয়ে যাচ্ছেন। ফলে অনেক ব্যবসায়ী হাত গুটিয়ে বসে আছেন। ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এ ছাড়াও চোরাই পথে আসছে বিপুল পরিমাণ পণ্য। তার উপর রয়েছে শুল্ক পরিশোধ করার পরও বিজিবি সদস্যরা মাঝ পথ থেকে এসব পণ্য ভর্তি ট্রাক ধরে নিয়ে মালামাল আটক দেখিয়ে কাস্টমসে জমা দিচ্ছে। গত কয়েকদিনের ব্যবধানে বিজিবি সদস্যরা কয়েক কোটি টাকার পণ্য আটক করেছে। বেনাপোল বন্দরের সাথে কয়েক হাজার কর্মচারী শ্রমিক জড়িত। আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় এসব পরিবারগুলো ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক আনু জানান, একই দেশে দ্বৈত নীতিতে আমদানিকৃত পণ্য চালান শুল্কায়ন করা হয়। অন্যান্য কাস্টমস হাউজ ও শুল্ক স্টেশনে ইনভয়েজ মূল্য মানা হলেও বেনাপোল কাস্টমস হাউজে অধিকাংশ পণ্যের মূল্য মানা হয় না। আবার কাস্টমস কর্মকর্তারা মূল্য বাড়িয়ে দিয়ে ইনভয়েজ মূল্য ও তাদের নির্ধারিত মূল্যের পার্থক্য দেখিয়ে অতিরিক্ত জরিমানা আদায় করেন। যা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা সরকারের কোনো নির্দেশনা নেই। এ ছাড়াও রাসায়নিক পরীক্ষা, বাজার যাচাই করে মূল্য নির্ধারণ করা, কাস্টমসের গঠিত মূল্যায়ন কমিটিতে ফাইল পাঠিয়ে দিনের পর দিন হয়রানি করা হয়ে থাকে। এর ফলে গোডাউন ডেমারেজসহ নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমদানিকারকদের। আর এ কারণে বেনাপোল যশোরসহ দেশের অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা বেনাপোল বন্দর ছেড়ে অন্য বন্দরে মালামাল আমদানি করছে। বেনাপোলের আমদানিকারক নজরুল ইসলাম জানান, অন্যান্য কাস্টমস হাউজের তুলনায় বেনাপোল কাস্টমস হাউজে প্রায় পণ্য চালানের মূল্যের উপর অতিরিক্ত চড়াও দেয়া, অতিরিক্ত জরিমানা ও নানা ভাবে হয়রানি এবং কড়াকড়ি আরোপ করায় অবৈধ পথে মালামাল আনতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। এখন অনেক পণ্যই বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি হয় না। এমনিতেই আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের দরপতন ও তেলের মূল্য কমে যাওয়ায় পণ্যের মূল্য কমিয়ে দিচ্ছেন রফতানিকারকরা। এই মূল্যের উপর কাস্টমস কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত লোড চাপানোর কারণে আমদানিকারকদের শুল্ককর পরিশোধসহ আনুসাঙ্গিক খরচ করে মালামাল গন্তব্যে পৌঁছানোর পর তা বিক্রি মূল্য অনেক পড়ে যায়। এর থেকে কম মূল্যে এসব পণ্য ঘরে বসে পাওয়াতে, বর্তমানে চোরাই পথে বাংলাদেশে আসছে। এসবের কারণে আমদানিকারকরা পণ্য আমদানি করতে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। শুল্ক কর্তৃপক্ষের এই দ্বৈ-নীতির কারণের ফলে সরকার লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব মফিজুর রহমান সজন ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক লতা জানান, শুল্ক মূল্যায়ন বিধিমালা ৫৭/২০০০ অনুসরণ পূর্বক পণ্য চালান শুল্কায়ন করার জন্য গত ৩০ জুন কমিশনারকে পত্র দেওয়া হলেও তা কার্যকর করেননি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তারা জানান, বেনাপোল শুল্ক ভবনে এস আরও ৫৭-আইন/২০০০/১৮২১/শুল্ক অর্থাৎ শুল্কমূল্যায়ন বিধিমালা-২০০০ তারিখ: ২৩/০২/২০০০ এর অনুচ্ছেদ ৪,৫,৬ অনুসরণ না করে অনুচ্ছেদ ৯ এর ‘ছ’ অনুযায়ী মনগড়া মূল্য নির্ধারণ পূর্বক পণ্য চালানের শুল্কায়ন প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে যার কোনো আইনগত দৃষ্টিকোন নেই, উদাহরণ স্বরূপ মটর পার্টস, কসমেটিকস্, হার্ডওয়ার, ইলেক্ট্রিক ও অন্যান্য সকল পণ্য ইতোমধ্যে এভাবে শুল্কায়ন প্রস্তাব করা হয়েছে।আগে উল্লেখিত বিধিমালার ৪,৫,৬ অনুসরণ করেই পণ্য চালান শুল্কায়ন ও খালাস দেয়া হতো। বাংলাদেশের অন্যান্য শুল্ক ভবন ও শুল্ক স্টেশন গুলোতেও বর্তমানে উক্ত বিধিমালার ৪,৫,৬ অনুসরণ করে পণ্য চালান শুল্কায়ন ও খালাস দেয়া হচ্ছে। হঠাৎ করে বিধিমালার বিনিময় মূল্য, অভিন্ন পণ্যের বিনিময় মূল্য এবং সমতুল্য পণ্যের বিনিময় মূল্য (ডাটা বেজ) না মেনে অনুচ্ছেদ ৯ এর ‘ছ’ অনুসরণ করে ইচ্ছামাফিক বা কাল্পনিক মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে যার ফলে বেনাপোল হতে ছাড়কৃত পণ্য অন্য কাস্টম হাউস/স্টেশন দিয়ে একই পণ্য ভিন্নমূল্যে ছাড় করণে বাজরে মূল্য সমতা না থাকার ফলে বাজার হারাচ্ছে। এ ব্যাপারে বেনাপোল কাস্টম হাউজের কমিশনার এএফএম আব্দুল্লাহ খান জানান, বেনাপোল কাস্টম কমিশনার নিজেই স্বীকার করলেন কড়াকড়ির কারণে এ পথে আমদানি দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া জনবল সংকট, বন্দরের অবকাঠামোগত সমস্যা ও অব্যবস্থাপনার কারণে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে আমাদের। চট্রগ্রাম ও ঢাকা আইসিডি এর মূল্য দেখে এখানে শুল্কায়ন করা হচ্ছে। তিনি জানান, কোনো অযৌক্তিক মূল্য ব্যবসায়ীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না। জরিমানা করা হচ্ছে বেশ কিছু আইটেমে।জরিমানার বিষয়টি ব্যাপারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে জবাব আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখান থেকে পণ্য ছেড়ে দেয়ার পর পথিমধ্যে অন্য সংস্থার লোকজন আটক করছে এ কারণে আমদানিকৃত পণ্য পরীক্ষণে আগের চেয়ে একটু কড়াকড়ি করা হচ্ছে স্বচ্ছতার জন্য। এসকেডি/আরআইপি
Advertisement