নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ডিক্রির চর এলাকার বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী নদীতে যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবিতে ২৫ জন যাত্রী নিখোঁজের ঘটনায় ডুবে যাওয়া ট্রলারটি শনাক্ত করতে পারলেও নিখোঁজদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল বিকেল সাড়ে ৪টায় ট্রলারটি শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। তবে ট্রলার ডুবির ঘটনার ৬ ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের দল ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে বলে নিখোঁজদের স্বজনদের দাবি।এদিকে, ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে নদীর তীরে স্বজনরা অপেক্ষাসহ আহাজারি করছেন। আর স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। তবে ট্রলার ডুবিতে একই পরিবারের তিনজন নিখোঁজ হওয়ায় স্বজনদের কান্না দেখে আশপাশের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর তিনজনের সঙ্গে থাকা পরিবারের আরেক সদস্য সাঁতরে উদ্ধার হওয়া লুৎফা বেগম স্বামী সেলিম খান (৪৫) দুই সন্তান ইমন খান (১৫) ও মৌসুমীর (১৬) খোঁজ না পাওয়ায় কিছুক্ষণ পর পর জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। আর নিখোঁজ হওয়া যাদের নাম পাওয়া গেছে উল্লেখিতসহ আব্দুল কাদির (৫০), সেলিম ওস্তাদ (৫০)। তারা সবাই লেংটার মেলা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।ট্রলার ডুবির ঘটনায় ২৫ জন যাত্রী নিখোঁজের পাঁচজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও বাকিদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে অনেকে নাকি সাঁতরে তীরে উঠে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে গেছেন বলে এলাকাবাসী জানান। প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, শনিবার সকাল সাতটায় সদর উপজেলার বক্তাবলীর রাধানগর এলাকায় অবস্থিত লেংটার মেলা থেকে ফিরে আলীরটেকের ডিক্রিরচর খেয়াঘাট দিয়ে ৪০/৫০ জন যাত্রী নিয়ে নদী পারাপারে সময় ঢাকাগামী লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলারটি ডুবে যায়। এসময় ঘন কুয়াশা থাকায় ট্রলারে থাকা যাত্রীরা মাঝি শাহিনকে আস্তে আস্তে যেতে বলার পরও কোনো তোয়াক্কা না করে ইঞ্জিন চালিত ট্রলারটি স্পিড বাড়িয়ে যাওয়ায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সকাল সাতটায় দুর্ঘটনা ঘটলেও খেয়াঘাটের মাঝি ফায়ার সার্ভিসসহ প্রশাসনের কাউকে অবগত না করায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর ট্রলারটিতে ধারণ ক্ষমতার বেশি যাত্রী নিয়ে নদী পারাপারে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে কেউ কেউ এমন মন্তব্য করেন। নারায়ণগঞ্জ সদর উজেলার বক্তাবলী নৌ-ফাড়ি ইনচার্জ এসআই আব্দুল রাজ্জাক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জাগো নিউজকে জানান, সকাল সাতটায় ডিক্রিরচর খেয়াঘাট থেকে ৪০/৫০ জন যাত্রী নিয়ে বুড়িগঙ্গা নদী পার হওয়ার সময় ঢাকাগামী লঞ্চের ধাক্কায় নদীর মাঝ পথে ট্রলারটি ডুবে যায়। এসময় ২০/২৫ জন যাত্রী সাঁতরে তীরে ওঠে। আর বাকীদের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে কতজন নিখোঁজ রয়েছে তার সঠিক তথ্য কেউ দিতে পারছে না। কেউ বলছে ২০ জন আবার কেউ বলছে ২৫/২৬ জন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। যাত্রীদের মধ্য থেকে পাঁচজন নিখোঁজের নাম জানতে পেরেছি। অন্যদের কোনো নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। বিকেলে সাড়ে চারটায় ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ডুবে যাওয়া ট্রলারটি সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। নিখোঁজদের উদ্ধারে ডুবুরি দল কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশেরর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক জাগো নিউজকে জানান, ডিক্রিরচর খেয়াঘাট পারাপারের সময় ঢাকাগামী লঞ্চের ধাক্কায় যাত্রীবাহী ট্রলার ডুবে যায়। ট্রলারে থাকা ৪০/৪৫ জন যাত্রী নিয়ে ডুবে গিয়ে অর্ধেকেরও বেশি লোক সাঁতরে তীরে উঠেন। আর বাকেদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে একজনকে নারায়ণগঞ্জ ১শ` শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স উপ-সহকারী পরিচালক দিনমনী সরমা জাগো নিউজকে জানান, ট্রলার ডুবির ঘটনায় কতজন নিখোঁজ রয়েছে তা সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে নিখোঁজ হওয়া স্বজনদের মাধ্যমে পাঁচজনের নাম ঠিকানা পাওয়া গেছে। আর তাদের সাত সদস্যের ডুবুরি দল বুড়িগঙ্গা-ধলেশ্বরী নদীতে তল্লাশি চালিয়ে ট্রলারটি সনাক্ত করেছে। এখনো কোনো মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত উদ্ধার কাজ চালিয়ে অন্ধকার হয়ে যাওয়ায় আপাতত উদ্ধার কাজ সমাপ্ত করা হয়েছে। রোববার সকালে আবার উদ্ধার কাজ শুরু হবে।মো. শাহাদাত হোসেন/এমজেড/আরআইপি
Advertisement