মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত মোবাইল ডাটা কেটে না নিয়ে পরবর্তীতে কেনা ডাটা প্যাকেজের সঙ্গে ফেরত দিতে অপারেটরগুলোকে নির্দেশ দিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেছেন, ‘এটা তারা আগে ফেরত দিত। আমি নিজেও এই ডাটা ফেরত পেয়েছি। এখন কেন দেয় না এটা বরং আমার তাদের কাছে প্রশ্ন।’
Advertisement
সোমবার (২ আগস্ট) দেশের মোবাইল অপারেটরদের কার্যক্রম তদারকি করতে যন্ত্রপাতি কেনা সংক্রান্ত এক চুক্তি শেষে টেলিফোনে জাগো নিউজকে একথা বলেন তিনি। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যালয়ে এই চুক্তি স্বাক্ষর হয়। এজন্য কানাডাভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান টিকেসি টেলিকমের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিটিআরসি।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘একই সাথে আমি এটাও উত্থাপন করেছি; আজেবাজে মেয়াদ দিয়ে প্যাকেজগুলো করা হয়, সেগুলো যাতে করা না হয়। তার সাথে এটাও যোগ করেছি, তাদের কল ড্রপের যাতে টাকা ফেরত দেয়। এসব যুক্তিসঙ্গতভাবে ভোক্তার অধিকার। সুতরাং ভোক্তাকে সেই অধিকার দিতে হবে। কারণ, একতরফা প্রফিট করার জন্য কাউকে লাইসেন্স দেয়া যায় না।’
এর আগে গত ৩১ জুলাই করোনা মহামারির মধ্যে ঘরে বসে থাকা আয়-রোজগারহীন গ্রাহকের অতিরিক্ত ব্যয় কমাতে মুঠোফোনভিত্তিক ইন্টারনেট ডাটা ও টকটাইমের মারপ্যাঁচ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ এ দাবি জানান।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘টাকা দিয়ে ডাটা বা টকটাইম কেনার পরে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অব্যবহৃত ডাটা ও টকটাইম পরবর্তী রিচার্জের সময় পাওয়া যাচ্ছে না কেন? হিসাবটা খুবই সহজ। উত্তর খুবই সহজ, অব্যবহৃত এমবি দিয়ে বিভিন্ন প্যাকেজ তৈরি করে পুনরায় বিক্রি করা হয়েছে গ্রাহকদের কাছে।’
আজকের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. আফজাল হোসেন বক্তব্য দেন। বিটিআরসির চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার এতে সভাপতিত্ব করেন। সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তব্য দেন।
বিটিআরসির পক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের পরিচালক মো. গোলাম রাজ্জাক ও টিকেসি টেলিকমের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামির তালহামি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটিকে চুক্তি স্বাক্ষরের ১৮০ দিনের মধ্যে টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম স্থাপনের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিটিআরসির ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন্স বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. এহসানুল কবীর এবং টিকেসি টেলিকমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সামির তালহামি বক্তব্য দেন।
Advertisement
উল্লেখ্য, ৭৭ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয়ে টেলিকম মনিটরিং সিস্টেম ক্রয়ের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রদত্ত উপস্থাপনা থেকে জানা যায়, সিস্টেমটি বাস্তবায়িত হলে মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ এবং রিপোর্টিং প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয় হবে। একইসঙ্গে প্রয়োজনীয় সব তথ্য বাস্তব সময়ে পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। এতে ভয়েস ও ডাটা ট্রাফিক, নেটওয়ার্ক ব্যবহার এবং মান সম্পর্কিত তথ্য সর্বোপরি বিটিআরসির প্রাপ্য রাজস্ব সম্পর্কে নিয়মিত ও নির্ভরযোগ্য তথ্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
ফলে বিটিআরসির নীতিনির্ধারণী ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হবে এবং সরকারের কাছে প্রতিবেদন পেশ ব্যবস্থা আরও দক্ষ এবং দ্রুত হবে। শহর এলাকার পাশাপাশি গ্রামাঞ্চল, দ্বীপ, হাওর-বাঁওড়, উপকূলীয় অঞ্চল ও দুর্গম এলাকার টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের প্রকৃত অবস্থা তাৎক্ষণিক যাচাই করা সম্ভব হবে।
অপারেটরদের নেটওয়ার্কের লাইভ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নেটওয়ার্কের সেবার মান আরও সুচারুভাবে যাচাই করা যাবে এবং গ্রাহক সেবার প্রকৃত অবস্থা জানা যাবে।
অপারেটররা বাস্তবে যেসব ট্যারিফ বাস্তবায়ন করছে এবং এসব ট্যারিফ প্যাকেজ বিটিআরসি কর্তৃক অনুমোদিত কি-না অথবা গ্রাহকরা অন্যায্যভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কি-না তা যাচাই করা সম্ভব হবে এবং এ বিষয়ক অভিযোগসমূহের নিষ্পত্তি কার্যকরভাবে করা সম্ভব হবে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। সরকারের বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগ্রহণ এবং নানাবিধ অবকাঠামোগত ব্যবস্থা ও সেবার সঠিক মানোন্নয়নে সিস্টেমটি কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
এইচএস/এমআরআর/জেআইএম