আইন-আদালত

বাসায় নাচ-গানের আসর বসাতেন মডেল পিয়াসা ও মৌ

মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করতেন। এরপর তাদের বাসায় নাচ ও গানের আসর বসিয়ে লোকজন ডেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রি করতেন। তাদের রিমান্ড আবেদনে এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

সোমবার (২ আগস্ট) মডেল পিয়াসা ও মৌকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর গুলশান থানায় মাদক মামলায় পিয়াসাকে ১০ দিন ও মোহাম্মদপুর থানায় মাদক আইনে করা মামলায় মৌকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করা হয়। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলাম পিয়াসার তিনদিন ও ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম মৌয়ের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

আসামি পিয়াসার রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আলমগীর সিদ্দিক বলেন, ‘কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী অবৈধ মাদক ক্রয়-বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোন গুলশানে অবস্থান করছে৷ এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে আসামি ফারিয়া মাহবুব পিয়াসাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তার বাসা থেকে চারটি হুক্কা, ৭৮০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ফ্রুইস স্লাইস, আট লিটার মদ জব্দ করা হয়।’

ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে জানা যায়- ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে উক্ত বাসায় নাচ ও গানের আসর বসিয়ে লোকজন ডেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করেন পিয়াসা। এই আসামি মাদকদ্রব্য সেবন বা বিক্রয়ের কোনো বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেননি।’

Advertisement

রিমান্ড আবেদনে পরিদর্শক আলমগীর সিদ্দিক আরও বলেন, ‘আসামির সঙ্গে ঢাকা শহরের আরও মাদক বিক্রেতা ও সেবনকারীর সম্পর্ক আছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। আসামির কাছ থেকে প্রাপ্ত মাদকের উৎস, যোগানদাতা, মাদক সরবরাহকারীদের তথ্য সংগ্রহ ও তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করার লক্ষ্যে আসামি পিয়াসার ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা প্রয়োজন।’

অপর দিকে আসামি মৌয়ের রিমান্ড আবেদনে তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা শহরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করে আসামি মৌ তার নিজের বাসায় নাচ ও গানের আসর বসান এবং লোকজন ডেকে অর্থের বিনিময়ে তাদের কাছে মদ, ইয়াবা, সিসাসহ অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য বিক্রয় করেন। আসামির সঙ্গে আরও ২/৩ জন জড়িত রয়েছেন। আসামি মৌ একজন নারী মাদক ব্যবসায়ী। তিনি তার ফ্ল্যাটে সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী এবং ক্রেতাদের নাইট পার্টির কথা বলে ডেকে এনে মাদক বিক্রয় করে যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ধাবিত করছেন। আসামির কাছ থেকে উদ্ধারকৃত ইয়াবা ট্যাবলেট ও বিদেশি মদ সংগ্রহের উৎস, ক্রয়-বিক্রয়ের প্রক্রিয়া ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন এবং তার সহযোগীদের সঠিক নাম, ঠিকানা সংগ্রহপূর্বক গ্রেফতার অভিযান পরিচালনার জন্য তাকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।’

এর আগে গত রোববার (১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে প্রথমে রাজধানীর বারিধারায় মডেল পিয়াসার বাসায় অভিযান শুরু করে পুলিশ। পরে রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।

এদিকে, পিয়াসার দেয়া তথ্যে আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌয়ের রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের বাসায় অভিযান চালায় গোয়েন্দা পুলিশ। তার বাসা থেকেও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে রাত ১টার দিকে মৌকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকেও ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, মডেল পিয়াসা ও মৌ সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্য। তারা পার্টির নামে উচ্চবিত্তদের বাসায় ডেকে মদ ও ইয়াবা খাইয়ে আপত্তিকর ছবি তুলে রাখতেন। পরে সেই ছবি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।

এদিকে, দুই মডেলকে আটকের পর মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে মডেল মৌয়ের বাসার নিচে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা (উত্তর) শাখার যুগ্ম-কমিশনার হারুন-অর-রশীদ।

তিনি বলেন, ‘তারা দুইজন একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে আমরা অনেক ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগ পেয়েছি। সেসব ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে আজ তাদের বাসায় অভিযান চালানো হয়। দুইজনের বাসায় বিদেশি মদ, ইয়াবা, সিসা পাওয়া যায়। মৌয়ের বাড়িতে মদের বারও ছিল।’

ডিবির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আটক দুই মডেল হচ্ছেন রাতের রানী। তারা দিনের বেলায় ঘুমাতেন এবং রাতে এসব কর্মকাণ্ড করতেন। উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পার্টির নামে বাসায় ডেকে আনতেন তারা। বাসায় আসলে তারা তাদের সঙ্গে আপত্তিকর ছবি তুলতেন এবং ভিডিও করে রাখতেন। পরবর্তীতে সেসব ভিডিও এবং ছবি ভিকটিমদের পরিবারকে পাঠানোর হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন এবং মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিতেন।’

জেএ/এমআরআর/জেআইএম