শিশু মন কৌতূহলী। সব সময় জানার আগ্রহ থাকে। থাকে শেখার তীব্র ইচ্ছা। তাই তো কথা বলা বা শেখার সময় অসংখ্য প্রশ্ন ছুঁড়ে দেয়। শিশু মনের এটি স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে শিশুরা এখন একটি চক্রের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ডিজিটাল ডিভাইস তাদের মানসিক বৃদ্ধিতে কতটুকু প্রভাব ফেলছে, তা গবেষণায় দেখা যায়।
Advertisement
শিশুদের জন্যে এখন এক দুঃসময় বলাই যায়। তবে এমন সময়ে শিশুদের বই পাঠে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে কংক্রিটের দেয়ালের বাইরে যে কত কত উপভোগ্য উপকরণ আছে, তা কিছুটা হলেও জানতে পারবে, শিখতে পারবে। তেমনই জানার জন্য, শেখার জন্য ‘ভূতুড়ে পাখা’ বইটি গুরুত্ব বহন করে।
বইটিতে স্থান পেয়েছে দশটি সহজ ও প্রাঞ্জল ভাষায় লেখা গল্প। বইয়ের প্রথম গল্পটি ‘মাটিখেকো’। পথশিশু কুদ্দুসের জীবন সংগ্রাম উঠে এসেছে গল্পটিতে। একটি ছোট্ট শিশু যে অধিকার পাওয়ার কথা, তার একরত্তিও সে পায়নি। কারণ তার জন্ম পথে। জন্মপরিচয় নেই তার। এমন একটি শিশু কীভাবে বড় হতে পারে, শিশু ভাবনায় মানবিক হওয়ার প্রণোদনা হিসেবে কাজ করবে গল্পটি পাঠে।
মানুষ কখনো কখনো কতটা নিদারুণ সময়ের মধ্য দিয়ে জীবন কাটায়, তা উপলব্ধি করতে পারবে শিশু পাঠক। জীবন সংগ্রামে কুদ্দুসের অপর একটি অদ্ভুত বিষয় আছে, তা কেউ জানে না। অবশ্য পরে জানা গেল, কুদ্দুস ছোটবেলায় পেটের ক্ষুধায় মাটি খেয়েছিল। সে অভ্যাস কুদ্দুস ছাড়তে পারেনি। তাই লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে সে গোপনে মাটি খায়। একটি শিশু কখন বিবিধ খাবারের বদলে মাটি খায় বা খেতে পারে, সে কল্পদৃশ্য চমৎকারভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক।
Advertisement
বইয়ে ‘আয়রন বয়’ গল্পটির লোকমানকে সবাই লোহা বলে ডাকে। তার পুরো শরীর লোহার মতো শক্ত। হাত, পা ও মাথা সব কিছুই লৌহ ধাতবের মতো। মানবদেহের স্বাভাবিকের চেয়ে কঠিন। একদিন খেলার মাঠে তার মাথার সাথে অপর এক খেলোয়াড়ের মাথা লেগে ফেটে যায়। তারপর থেকে লোকমানকে প্যাথলজি পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরীক্ষা করে জানা যায়, লোকমান হাসান বিরল রোগ হিমোসাইডেরোসিসে আক্রান্ত। কিন্তু তা কেউ জানতো না। রূপকল্পের মতো অঢেল আনন্দ দেবে অসাধারণ গল্পটি।
বইয়ের শেষ গল্পটি ‘ছাগল-ভূত’। গল্পের অঞ্জন দাদু শহরে চাকরি করেন। একদিন রাতে ভূতের ভয়ে তিনি ভোঁ-দৌড় মারেন। তারপর আর তিনি ওই পথ মাড়াননি। গল্পটিতে কিছুটা রম্যের মতো রস হলেও আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের আবহ, আছে গ্রামবাংলার চরিত্র। গ্রামের অনেক বিষয়ের সাথেও শিশু-কিশোরদের পরিচয় করিয়ে দেবে গল্পটি।
লেখক পীযূষ কান্তি বড়ুয়া গল্পে ইতিহাস-ঐতিহ্য এভাবে উল্লেখ করেন, ‘গ্রামের একটি ঐতিহ্য আছে। এ গ্রামে ব্রিটিশ আমলের অগ্নিযুগের বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেনের বেশ কয়েজন অনুসারী কর্মী ছিল। সে কারণ অনেকেই এ গ্রামকে সমীহ করে। এঁদের মতো বিপ্লবীদের নাম সবাই বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে।’ স্কুলশিক্ষক হিমাংশু। একরাতে একটি ছাগশিশুর কান্না শুনে বিভ্রান্ত হলেন। তিনি ঘোরের মধ্যে পড়ে যান। যদিও ছেলের ডাকে ফিরে আসেন। অবশ্য পরদিন সকালে ছাগশিশুর কান্নার স্থলে একটি মৃত দাঁড়কাক দেখতে পান।
গল্পটির মাঝে কথিত ভয়ের যে গল্প গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, তার প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। মূলত গ্রামের মানুষ ভূতে বিশ্বাস করে। এখনকার সময়ে কল্পকাহিনি মনে হলেও একসময় তা বাস্তব বলেই গ্রামের মানুষ বিশ্বাস করতো। আজও যে করে না, তা কিন্তু নয়। ইট-পাথরের চার দেয়ালে বন্দি শিশুদের গ্রামীণ শৈশব স্মরণ করিয়ে দেওয়া আর সময়কে উপভোগ্য করে তুলতে বইটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
Advertisement
ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস বিশেষ করে মোবাইল, ল্যাপটপ, ট্যাব বা অন্য কিছুতে যেসব শিশু-কিশোররা ডুবে আছে, তাদের একটু হলেও ভিন্ন স্বাদ উপহার দেবে বইটি। এতে ‘জ্বরের প্রলাপ’, ‘এলিয়েন ও যন্ত্রপাখি’, ‘ছুটিতে যাদু শেখা’, ‘রূপোর টাকা’, ‘ভূতের পাখা’, ‘মৃতের উপহার’ ও ‘মামার বিজ্ঞানাগার’সহ দশটি গল্প স্থান পেয়েছে।
‘ভূতের পাখা’ বইটির প্রচ্ছদ ও ইলাস্ট্রেশন করেছেন সোহেল আশরাফ। প্রকাশক প্রসিদ্ধ পাবলিশার্স। বইটির মূল্য রাখা হয়েছে ২০০ টাকা।
এসইউ/এমএস