গত বছরের এপ্রিলে প্রথম সংক্রমণের পর চট্টগ্রামে চলতি বছরের জুলাইয়ে এসে হঠাৎ ভয়াবহ হয়ে ওঠেছে করোনাভাইরাস। হিসাব করে দেখা গেছে, চট্টগ্রামে এই এক মাসে প্রতি ঘণ্টায় ৩১ জন করে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন।
Advertisement
এছাড়া অন্যান্য মাসের চেয়ে জুলাইয়ে কয়েকগুণ বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে। মাসটিতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ জন ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
চট্টগ্রাম সিভিল কার্যালয়ের তথ্য থেকে জানা গেছে, জুলাইয়ের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৫৫২ জন। একই দিনে ভাইরাসটিতে মারা যান পাঁচজন। সেই থেকে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় মাসটির প্রায় দিনই নতুন নতুন রেকর্ড হতে থাকে।
মাস শেষে হিসাব করে দেখা গেছে, জুলাইয়ে চট্টগ্রামে মোট ২৩ হাজার ২৩৫ ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। আর মারা যান ২৬১ জন। অর্থাৎ মাসটিতে জেলায় প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৭৪৯ জন আক্রান্ত এবং ১১ জন করে মারা যান। এ হিসাবে জুলাই মাসে গড়ে প্রতি ঘণ্টায় ৩১ জন করে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন।
Advertisement
চট্টগ্রাম সিভিল কার্যালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, জেলায় প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত গত বছরের ৩ এপ্রিল। সে থেকে জুন পর্যন্ত ১৫ মাসে মোট করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৮ হাজার ৭২৪ জন ব্যক্তির। একই সময়ে জেলায় মোট মারা যান ৭০১ জন। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত জেলায় গড়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩ হাজার ৯১৫ জন আক্রান্ত এবং ৪৭ জন করে মারা গেছেন।
আবার বিপরীতে জুলাই মাসে আক্রান্ত হয় ২৩ হাজার ২৩৫ জন এবং মারা যান ২৬১ জন। অর্থাৎ জুলাই মাসে অন্যান্য মাসের গড়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি আক্রান্ত ও মারা গেছেন। অথচ এর আগের জুন মাসে পাঁচ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত এবং ৮৩ জন মারা যান।
জুলাই মাসে হঠাৎ সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ার কারণ জানতে চাইলে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রামে এখন করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে লোকজন আক্রান্ত হচ্ছেন। করোনার এ ভ্যারিয়েন্ট খুব বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী। ভয়ানক এ ভ্যারিয়েন্টে সব বয়সীরাই সমানভাবে আক্রান্ত ও মারা যাচ্ছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের অনেকের মধ্যে এখন সাহসী ভাব চলে আসছে। আগে এক বাড়িতে কেউ আক্রান্ত হলে আইসোলেশনে থাকত। কিন্তু এখন ঘরে-বাইরে কোথাও আইসোলেশন পালন করা হচ্ছে না। পাশাপাশি মাস্ক কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনেকের মধ্যে অনীহা আসছে। তাই লোকজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্তের সঙ্গে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। আমরা আশঙ্কা করছি, আক্রান্ত-শনাক্তে জুলাইকেও ছাড়িয়ে যাবে আগস্ট মাস।’
Advertisement
সিভিল সার্জন বলেন, ‘সংক্রমণ থেকে বাঁচতে আমাদের সামনে দুটি পথ খোলা আছে। সামনে ইউনিয়ন ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ওয়ার্ড পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে। আমাদের সবাইকে এ সুযোগ নিয়ে টিকা গ্রহণ করতে হবে। আরেকটি হচ্ছে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
এদিকে গতকাল (শুক্রবার) চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্ত হয়ে চারজন মারা যান। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন আরও ৭৪২ জন। এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) জেলায় রেকর্ড ১৪৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়।
মিজানুর রহমান/জেডএইচ/এএসএম