২০১৮ সালে জয়যাত্রা আইপি টেলিভিশনের কার্যক্রম শুরু করেন আওয়ামী লীগের মহিলা-বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্যপদ থেকে অব্যাহতি পাওয়া আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীর। জেলা-উপজেলা ছাড়াও অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন দেশে জয়যাত্রা টিভির প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। প্রতিনিধি হিসেবে যারা নিয়োগ পেতেন তারা বেতনভুক্ত না হয়ে উল্টো অফিসে তাদের টাকা দিতে হতো।
Advertisement
শনিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে র্যাব সদরদফতরে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, জয়যাত্রা আইপি টেলিভিশন প্রতিষ্ঠার পর সেখানে ৭০ থেকে ৮০ জন যোগদান করেন। দীর্ঘদিন কাজ করার পরে ২০-২৫ জনকে ছাড়া বাকি সবাইকে বেতন না দিয়েই ছাঁটাই করেন হেলেনা। প্রতিনিধিদের কাছ থেকে কার্ডের বিনিময়ে নিয়মিত চাঁদা সংগ্রহ করতেন। মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ছাড়াও অন্যান্য দেশেও জয়যাত্রার প্রতিনিধি ছিল, তাদের সবার কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা নিতেন তিনি। দেশে-বিদেশে জয়যাত্রা টেলিভিশনের যত প্রতিনিধি রয়েছে, তা দেশের অন্য কোনো স্যাটেলাইট টেলিভিশনের নেই বলে দাবিও করেন হেলেনা।
কিছুদিন আগে জয়যাত্রা টেলিভিশনের একজন জেলা প্রতিনিধি চাঁদাবাজির সময় পুলিশের হাতে আটক হয়। আমরা মনে করছি, হেলেনার মতো তার প্রতিনিধিরাও চাঁদাবাজি করতেন।
Advertisement
কী কারণে টাকা নিয়েছেন এবং কী কাজে ব্যবহার করা হয়েছে- এ বিষয়ে হেলেনা জাহাঙ্গীর কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা। এসবের দায় অফিস স্টাফদের ওপর চাপিয়েছেন তিনি। তার বাসায় এবং অফিস থেকে যে পরিমাণ ভাউচার পাওয়া গেছে তা এখনো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছিল শক্তিশালী সাইবার টিম
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, আলোচিত হেলেনা জাহাঙ্গীরের ছিল ২০ লাখ ফলোয়ারের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ। তার পেজ ও জয়যাত্রা আইপি টেলিভিশনের পেজ মনিটরিংয়ের জন্য ছিল শক্তিশালী সাইবার টিম। হেলেনার পেজে অযাচিত ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য এলেই সাইবার টিম তাদের ঘায়েল করতো।
তিনি বলেন, জয়যাত্রা টিভির অফিসে অভিযানের সময় র্যাব জানতে পারে হেলেনা জাহাঙ্গীর একটি শক্তিশালী সাইবার টিম পরিচালনা করতেন। এই টিমে ১৫-২০ জনের নাম পাওয়া গেছে। এই সাইবার টিম একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে হেলেনা জাহাঙ্গীরের নামে প্রচার-প্রচারণা চালাতেন। তারা নিজেরাই লাইক, শেয়ার ও হেলেনার পক্ষে পজিটিভ কমেন্ট করতেন। এমনকি হেলেনার বিরুদ্ধে যদি কেউ নেতিবাচক মন্তব্য করতেন তৎক্ষণাৎ সাইবার টিম তাদের অপমান করে ঘায়েল করতেন।
Advertisement
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর বলেছেন, নারায়ণগঞ্জে তার পাঁচটি গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এছাড়া রাজধানীর গুলশান, উত্তরা ও মিরপুরে ১৬টি ফ্ল্যাট রয়েছে। পাশাপাশি আটটি বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। এছাড়া ডজনখানেক ক্লাবের সদস্য তিনি।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা গেছে, কখনো ছয়টি গাড়ি, কখনো আটটি গাড়ির কথা উল্লেখ করেন তিনি। এসব বিষয়ে যারা তদন্ত করবেন তারা খতিয়ে দেখবেন। তার আয়ের উৎস সম্পর্কে সিআইডি কিংবা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন র্যাবের এই কর্মকর্তা।
জিজ্ঞাসাবাদে হেলেনা জাহাঙ্গীর র্যাবকে আরও জানান, সম্প্রতি তিনি রাজনীতিতে যোগ দেন। সামাজিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজেকে সমাজসেবক হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টায় ছিলেন। বেশ কয়েকবার তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। তিনি শুধু নিজের অবস্থান উচ্চপর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এ ধরনের অপপ্রয়াস-অপতৎপরতা চালিয়েছিলেন। তিনি র্যাবের কাছে দাবি করেন, দেশের এমপি-মন্ত্রীদের না চিনলেও হেলেনা জাহাঙ্গীরকে দেশের মানুষ সবাই চেনে।
টিটি/এআরএ/এমএস