জাতীয়

‘অফিস থেকে ফোন দিছে, চাকরি করলে আসতেই হবে’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ডে দু’টি বড় ট্রাভেল ব্যাগ ও একটি ভারী বস্তা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন শাহান আরা ও মানছুরা। তারা দু-জনই ঢাকার মিরপুরের একটি গার্মেন্টসের কর্মী।

Advertisement

শাহান আরা বলেন, ‘চাঁদপুরের কচুয়া থাইক্যা আইছি ভাই, অনেক কষ্ট কইরা। অফিস থেকে ফোন দিছে- ১ তারিখ থেকে খোলা, চাকরি করলে আইতে অইব। আমরা গরিব মানুষ, চাকরি না করলে কী খামু। যেহানে ভাড়া ১৭০ টাকা, সেহানে দিছি ৫০০ টাকা। এখন কেমনে মিরপুর যামু হেই চিন্তা করতাছি।’

কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে রোববার (১ আগস্ট) থেকে পোশাক কারখানাসহ (গার্মেন্টস) রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়ায় শনিবার (৩০ জুলাই) ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। ঈদে বাড়ি গিয়ে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে আটকা পড়া শ্রমিকরা সীমাহীন কষ্ট স্বীকার করে ঢাকায় ফিরছেন।

আটদিনের শিথিলতা শেষে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ চলবে আগামী ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত।

Advertisement

তবে পোশাক কারখানার মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার রফতানিমুখী শিল্প-কারখানা খুলে দেয়ার ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

শনিবার (৩১ জুলাই) সকালের দিকে ঢাকায় অন্যতম প্রবেশ পথ যাত্রাবাড়ীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, শাহান আরা ও মানছুরার মতো হাজার হাজার মানুষ ঢাকায় ফিরছে। তাদের বেশিরভাগই পোশাক কারখানার শ্রমিক।

মাকছেদুর রহমান এসেছেন দাউদকান্দি থেকে। তিনি বলেন, আমি কোনাবাড়ী যাব, সেখানে একটি গার্মেন্টসে কাজ করি। অফিসের ইনচার্জ ফোন করে বলছে, ‘১ তারিখ থেকে খোলা। না আইসা উপায় আছে? একটা মাইক্রোবাসে তিনগুণ ভাড়া দিয়ে এ পর্যন্ত আসছি। মাঝখান দিয়ে অনেকখানি হাঁটছিও।’

কুমিল্লার মুরাদনগর থেকে এসেছেন আলী আজম ও নোয়াজেস হোসেন। দু’জনেরই বয়স ৫০ বছরের বেশি। তারা দু’জনই তেলবাহী জাহাজে কাজ করেন। জাহাজের কর্মকর্তারা ফোন দিয়েছেন কাজে যোগ দিতে।

Advertisement

তারা ঢাকা হয়ে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর যাবেন। নোয়াজেশ হোসেন হাত রক্তাক্ত দেখিয়ে বলেন, ‘বাবা একটা মালের গাড়িতে উঠতে গিয়ে আঙ্গুল ছেঁচে গেছে। টাকাও গেছে, কষ্টেরও শেষ নাই।’

রায়েরবাগ এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন হামিদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ি নোয়াখালী। হঠাৎ খবর পাইলাম—১ তারিখেই কারখানা খোলা। তিন ধাপে এই পর্যন্ত আইছি। প্রথমে অটোরিকশায়, পরে হাঁটাছি। এরপর একটা মাইক্রোতে উঠছি। টাকা একটু গেলেও চাকরিটা তো থাকব। তাই দেরি করি নাই।’

উত্তরার আজমপুরে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন শিহাব। তিনি কুমিল্লা থেকে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমগো কথা শুইন্যা কী লাভ। কী কষ্ট কইরা আসছি, আপনেরে বুঝাইতে পারমু না। কীসের করোনা আর কীসের কী? সরকার ভালো চাইলে এমন সিদ্ধান্ত ক্যামনে নেয়? গাড়িটা চালু করে গার্মেন্টস কেন খুলল না। হাজার হাজার মানুষ ক্যামনে আইব, কেউ হেই চিন্তা করল না।’

আরএমএম/এএএইচ/জিকেএস