পৌরসভা নির্বাচনে নিজেদের সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রয়োগে অনীহা দেখাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টিও হচ্ছে না। আর নির্বাচনী আইন ভঙ্গের হিড়িক পড়েছে। ইসি সূত্র জানায়, পৌরসভা নির্বাচনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন থেকে সরে এসেছে ইসি। কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এখন থেকে তারা আচরণবিধি লঙ্ঘনের জন্য মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব তারা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। আর নারীদের জন্য অবমাননা কর প্রতীক বাদ দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি উঠলেও সেদিকে ভ্রক্ষেপ নেই ইসির। সূত্র আরো জানায়, দু`জন প্রভাবশালী মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলে ইসি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ কমিশনের তুলনায় স্থানীয় পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের অপেক্ষাকৃত কম। কমিশন জেনে-বুঝে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অর্থ দাঁড়ায় যে তারা মন্ত্রী-সাংসদদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে চায় না। আইনে এ ধরনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৬ মাসের কারাদণ্ডের সুযোগ আছে। তবে এ অভিযোগে সোমবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের তিন সংসদ সদস্য বরগুনা-২ আসনের হাচানুর রহমান রিমন, ঢাকা-২০ আসনের এমএ মালেক ও নাটোর-২ আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুলকে শোকজ করেছে কমিশন। একইসঙ্গে মন্ত্রী ও এমপিদের আচরণবিধি মেনে চলতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং সংসদ সচিবালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, ইসির নির্দেশনা অনুযায়ী ১৪ ডিসেম্বরের আগে প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানো নিষিদ্ধ হলেও তা মানা হচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন জায়গার আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থীরা নিজ নিজ দলের প্রতীক নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি ইসি। দেশের ২৩৪ পৌরসভায় একযোগে নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘনিয়ে এলেও নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ (লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড) তৈরির বিশেষ কোনো উদ্যোগ নেই ইসির। এমনকি মনোনয়নপত্র জমাদানকারী বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কারাবন্দি ও আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীর জন্য কমিশন কোনো সুযোগ করে দেবে কিনা, এ ব্যাপারেও কিছু বলছে না। অথচ নির্বাচনের আর মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি থাকলেও কমিশন এখন পর্যন্ত সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করেনি। সূত্র জানায়, ইসির পর্যাপ্ত নিজস্ব জনবল থাকা সত্ত্বেও এবারের নির্বাচনে ২৩৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৭৫টিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও ইউএনওদের রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। যা নিয়ে ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন সমালোচনার মুখে পড়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জাগো নিউজকে বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে নির্বাচন পরিচালনার জন্য ইসি সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ইসি সাংবিধানিক দায়িত্ব সঠিকভাবেই পালন করে যাচ্ছে। আইন-ভঙ্গ করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া এখন পর্যাপ্ত সময় না থাকায় নারীদের জন্য গৃ্হস্থালির পণ্যের প্রতীকগুলো বদলানো সম্ভব হচ্ছে না। এইচএস/জেডএইচ/এমএস
Advertisement