জিম্বাবুয়ে থেকে দেশে ফিরে ঢাকা ইন্টারন্টিনেন্টাল হোটেলে কঠিন কোয়ারেন্টাইনে ঘরবন্দী মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকাররা। একই অবস্থা সফরকারী দল অস্ট্রেলিয়ারও। তারাও বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় পা রাখার পর ৩ দিনের কোয়ারেন্টাইনে হোটেল রুমে আটকা।
Advertisement
আগামী ১ আগস্ট শেরে বাংলায় প্র্যাকটিস দুই দলের। আর ৩ আগস্ট হোম অব ক্রিকেটে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এ সিরিজের জন্য ৯ আগস্ট পর্যন্ত টিম হোটেলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে থাকতে হবে দুই দলকে। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার শর্ত মেনে এ সময়ের মধ্যে টিম হোটেলে কোন বোর্ডার থাকতে পারবে না।
কিন্তু ঐ টিম হোটেলে যে আজসহ ১১ দিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঘরে রয়েছেন বাংলাদেশের ৭ ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ার, সেই খবর কজন জানেন? বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার টি-টোয়েন্টি সিরিজের ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল, স্ট্যান্ডবাই ম্যাচ রেফারি শিপার আহমেদ ও পাঁচ আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল, শরফুদৌলা ইবনে শহীদ সৈকত, গাজী সোহেল, তানভীর আহমেদ ও মোর্শেদ আলী খান সুমন সেই ঈদের আগে (২০ জুলাই) থেকে ইন্টারন্টিনেন্টালে জৈব সুরক্ষা বলয়ে কঠিন সময় পার করছেন।
এমনকি ঈদটাও করতে পারেননি তারা। ঈদের আগের দিন এসে হোটেলে জৈব সুরক্ষা বলয়ে ঢুকতে হয়েছে। সেই ২০ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই- ১০ দিন একদম এক ঘরে থাকতে হয়েছে। থাকাই শুধু নয়, খাওয়া-দাওয়া সবই এক রুমে। পাশের রুমে থাকা কারও সঙ্গে দেখা করারও সুযোগ ছিল না।
Advertisement
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রুম থেকে বের হতে পারেননি কেউই। দশ দিন পর আজ বের হয়ে সুইমিং পুলে যাওয়ার অনুমিত মিলেছে। অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ সিরিজের ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল এবং আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল এই ১১ দিনের অভিজ্ঞতাকে খুব কঠিন ও অন্যরকম বলে অভিহিত করেছেন।
শুক্রবার জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন ম্যাচ রেফারি নিয়ামুর রশিদ রাহুল ও সিনিয়র আম্পায়ার মাসুদুর রহমান মুকুল। রাহুল বলেন, ‘এটা যে কতটা কঠিন অভিজ্ঞতা বলে বোঝানো যাবে না। আমরা কেউ ভাবিনি এতটা কঠিন হবে। ভেবেছিলাম অন্তত এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাওয়া যাবে। কিন্তু দশ দিন ঘর থেকেই বের হওয়ার উপায় ছিল না। আজ সুইমিংপুলে গিয়ে একটু সাঁতার কাটার সুযোগ মিলেছে।’
একই কথা আম্পায়ার মুকুলের কণ্ঠেও, ‘আমরা আগেও কোয়ারেন্টাইনে থেকে ম্যাচ পরিচালনা করেছি। কিন্তু দশ দিন একদম হোটেল রুম থেকে বের হতে পারব না, এত কঠিন কোয়ারেন্টাইন করিনি আগে। তাই এবারের এই কোয়ারেন্টাইনে থাকা ছিল অনেক বেশি কঠিন। প্রথম তিন দিন খুব বেশি খারাপ ও একা একা লেগেছে।
ম্যাচ রেফারি রাহুল আরও যোগ করেন, ‘জীবনের এক অন্যরকম ও ভিন্ন অভিজ্ঞতা। সিরিজ কভার করতে টানা দশ দিন পরিবারকে ফেলে হোটেলে এক রুমে বন্দী থাকার অভিজ্ঞতা আগে ছিল না। আমি কেন, আমরা যে ৭ জন আছি সবারই এক অবস্থা। বলতে পারেন এটাও এক নতুন অভিজ্ঞতা। যা কখনও কল্পনাও করিনি।’
Advertisement
তবে রাহুল আর মুকুল অকপটে স্বীকার করেছেন, দেশের ক্রিকেটের জন্য এবং ক্রিকেটের স্পিরিট ধরে রাখতেই তাদের এ চেষ্টা। রাহুল ও মুকুল একই সুরে বলেন, ‘যখন দেখি জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা দিনের পর দিন জৈব সুরক্ষা বলয়ে পরিবার ফেলে আছে এবং মাঠে খেলছে। তখন সান্ত্বনা খুঁজে পাই, আমাদের কষ্টটা তো মোটে দুই সপ্তাহের।’
হোটেল বন্দী সময়টা কীভাবে কাটল? জানতে চাইলে রাহুল বলেন, ‘আমরা ভিডিও চ্যাট আর নিজেদের (আম্পায়ারদের সঙ্গে) মধ্যে ভিডিও কনফারেন্স করেই মূলত সময় পার করেছি। বিভিন্ন আইন ও ধারা নিয়ে আলাপ করেছি। নিজেদের সম্ভাব্য করণীয়গুলো নিয়েও কথাবার্তা বলেছি।’
রাহুলের শেষ কথা, ‘এখন আমাদের একটাই লক্ষ্য, সিরিজটা ভালোভাবে পরিচালনা করা। নির্বিঘ্নে সিরিজটা শেষ করাই আসল চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জে সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ আমরা।’
তারপরও একটা আফসোসে পুড়ছেন রাহুল, মুকুল, গাজী সোহেল, সৈকত, শিপার ও মোর্শেদ সুমনরা। তা হলো, তারা ঈদের নামাজ পড়া এবং বাড়িতে কোরবানির ব্যবস্থাপনায় না থেকে হোটেলেই কাটিয়েছেন ঈদের দিনটা। তারা মনে করেন, ঈদের দিন বিকেলে হোটেলে রিপোর্ট করতে দিলেও চলত। হয়তো তাড়াহুড়ো করে হিসেব ঠিক কষা হয়নি।
এআরবি/এসএএস/এএসএম