১৮ জুলাই(২০২১) শেখ হাসিনা সরকারের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কারণ ওই দিন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর শপথ গ্রহণ সম্পন্ন হয়। আর যিনি দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি নিষ্ঠাবান, দায়িত্ব সচেতন ও আদর্শের প্রতীক।উপরন্তু শেখ হাসিনা সরকারের পরীক্ষিত সৈনিক। প্রকৃতপক্ষে একুশে পদকপ্রাপ্ত প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট, কৃষি অর্থনীতিবিদ এবং পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সাবেক সদস্য ও সিনিয়র সচিব অধ্যাপক ড. শামসুল আলম নিজের যোগ্যতায় অনন্য দিশারি হয়ে উঠেছেন।পরিণত হয়েছেন যুবসমাজের আইকনে।যোগ্যতা ও পরিশ্রমে নিজেকে গড়ে তোলার অসাধারণ নজির তিনি।
Advertisement
মনে রাখতে হবে তিনি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, "জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশ্বাস ও আস্থার সম্মান রাখব। তিনি আমার ওপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন, সেটি সঠিকভাবে পালন করা আমর অন্যতম দায়িত্ব। তিনি আমার কাজের মূল্যায়ন করেছেন। আমাকে যোগ্য মনে করেছেন। এর চেয়ে বড় কী হতে পারে! এর আগে তিনি জিইডিতে (সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ) আমাকে কাজের সুযোগ দিয়েছিলেন। এক দিন, দু’দিন নয়, দীর্ঘ ১২ বছর কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। সেটি কাজে লাগিয়ে শুধু কাজ করে গেছি। এদিক-ওদিক তাকাইনি। অন্যায়ের সঙ্গে কখনও আপস করিনি। ভালো কাজ করলে যে তার ফল পাওয়া যায়, আমি মনে করি সেটি আমার জীবনে প্রমাণিত।"
২০২০ সালে শুরু হওয়া করোনার কড়ালগ্রাসে এখনো জীবন-জীবিকা বিপন্ন, তবুও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুপ না থেকে তাঁর যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছেন।নিয়েছেন বিভিন্ন পরিকল্পনা।পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সদ্য নিযুক্ত প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের ভাষ্যে সেই দিকটিই ব্যক্ত হয়েছে-"জীবন ও জীবিকা রক্ষা করা এই মুহূর্তের অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে নানা ধরনের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলোর বাস্তবায়নে গুরুত্ব দিতে হবে। সেই সঙ্গে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় কোভিড-১৯-এর প্রভাব মোকাবিলায় নানা কৌশল রয়েছে।
বিশেষ করে কোভিড-১৯-এর কারণে সৃষ্ট সাময়িক বেকারত্বসহ বিদেশ ফেরত কর্মীদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে এই পরিকল্পনায়। সেগুলো যেন বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্যোগ থাকবে আমার পক্ষ থেকে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে করোনা মহামারিসহ ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে একটি সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বা ইউনিভার্সেল হেলথ সিস্টেম প্রবর্তনের প্রস্তাব রয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাড়ানোসহ আরও অনেক কৌশল রয়েছে।’’ বলাবাহুল্য, বৈশ্বিক এই করোনা মহামারিতে আমাদের দেশের অর্থনীতির চাকা খানিকটা স্তিমিত হলেও বাংলাদেশ থেমে নেই।ড. শামসুল আলম বলেছেন, ‘‘আমরা এগোচ্ছি, আমরা এগোবো, করোনা নামক বেদনার মধ্যেও আমাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চমৎকার,…২০২৫ খ্রিস্টাব্দে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে। আর তখন বাংলাদেশ একটি নতুন স্তরে পৌঁছাবে।’’
Advertisement
২. পরিকল্পনাবিদ ড. শামসুল আলম :
ড. শামসুল আলম “রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১” দলিলের প্রণেতা। ২০০৯ সালে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। তখন তাঁর দায়িত্ব ছিলো রূপকল্প ২০২১ এর আলোকে “বাংলাদেশের প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা: রূপকল্প ২০২১ বাস্তবে রূপায়ণ” প্রণয়ন করা। এর অন্যতম উদ্দেশ্য ছিলো ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। অন্যান্য লক্ষ্যসমূহের মধ্যে ছিলো ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসার ঘটানো। প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে রূপান্তরের জন্য ১৪ টি অভীষ্ট ছিলো। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সেগুলোর অধিকাংশ অর্জিত হয়েছে বা লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে। স্বাধীনতা লাভের পর গঠিত পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান কাজ ছিলো বাংলাদেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া।
পুনর্গঠনের সময় থেকে ক্রমান্বয়ে রূপান্তরের যুগে প্রবেশ করেছে কমিশন। বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রেক্ষাপটও সেভাবে বদল হয়েছে। বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের সকল শর্ত পূরণ করেছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২৪ সালে তা কার্যকর হবে। এদেশ এমডিজি অর্জনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য লাভ করেছে। এই মুহূর্তে ‘এসডিজি’র সময়ে দরকার ত্বরিত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং অংশীদারিত্বমূলক সমৃদ্ধির জন্য টেকসই রূপান্তর।
“রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবে রূপায়ণ : বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১” হলো বিশ্ব ব্যাংকের মানদণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশকে ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য সরকারের স্থিরলক্ষ্য অভীষ্ট। অন্য অভীষ্টের মধ্যে রয়েছে ২০৩১ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য নিরসন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে শূন্য দারিদ্র্যে নামিয়ে আনা। এই পরিকল্পনার কৌশলগত অভীষ্ট ও মাইলফলকগুলো হলো- রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন এবং কাঠামোগত রূপান্তর, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে কৃষি খাতে মৌলিক পরিবর্তন, ভবিষ্যতের সেবাখাত গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতিকে প্রাথমিকভাবে শিল্প ও ডিজিটাল অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য সেতুবন্ধন রচনা, একটি উচ্চ আয়ের অর্থনীতির দিকে অগ্রযাত্রা কৌশলের অপরিহার্য অংশ হবে নগরের বিস্তার, যা ‘‘আমার গ্রাম, আমার শহর” প্রত্যয় দ্বারা অনুপ্রাণিত, একটি অনুকূল পরিবেশের অপরিহার্য উপাদান হবে দক্ষ জ্বালানি ও অবকাঠামো, যা দ্রুত, দক্ষ ও টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে; জলবায়ু পরিবর্তনসহ আনুষঙ্গিক পরিবেশগত সমস্যা মোকাবেলায় একটি স্থিতিশীল বাংলাদেশ বিনির্মাণ; একটি দক্ষতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে বাংলাদেশকে জ্ঞানভাণ্ডার দেশ হিসেবে গড়ে তোলা।
Advertisement
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের সভায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১ প্রণয়নের কাজ শুরুর বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুস্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। উক্ত পরিকল্পনা দলিলের জন্য দেশের প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ ও গবেষকদের নিয়ে বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠিত হয়। একটি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে এই দলিলটি প্রণয়ন করা হয়। দুটি কারণে দলিলটি বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। প্রথমত : যদি বাংলাদেশ ২০২১ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের শর্ত পূরণ করে তবে ২০২৪ সালে আনুষ্ঠানিক উত্তরণ সম্ভব হবে। দ্বিতীয়ত : ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট বাস্তবায়ন। এ প্রসঙ্গে আরো বলা দরকার যে, অষ্টম পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা (২০২০-২০২৫) তৈরিতে সহয়তা করার জন্য এদেশের স্বপ্ন পূরণের এই দলিল (২০২১-২০৪১) নির্ধারিত সময়ের এক বছর পূর্বে প্রণয়ন করা হয়েছে যার নেতৃত্বে ছিলেন ড. শামসুল আলম। কারণ প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আওতায় বাস্তবায়িতব্য পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনার মধ্যে এটাই হবে প্রথম।
দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা মেয়াদে অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ পঞ্চম বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার উদ্দেশ্য অর্জনের প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হবে। এই ভিশন দলিলটির ১২ টি অধ্যায় রয়েছে- যার মধ্য উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো : সুশাসন, মানব উন্নয়ন, শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ। এর মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আছে যাতে প্রতি অর্থবছরে অর্থনীতির সূচকগুলোর লক্ষ্যমাত্রা বিস্তারিতভাবে দেওয়া আছে। এই দলিলের আলোকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।একসময় যে দেশটি তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে আখ্যায়িত ছিলো এখন বলা হচ্ছে ২০৩৫ সালের মধ্যে সেই দেশটিই হতে যাচ্ছে বিশ্বের ২৫ তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার প্রণেতা ড. শামসুল আলম বলেছেন- ‘‘আমাদের দেশে নবীনদের সংখ্যা বেশি। তাদের কথা চিন্তা করে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায়।’’ এছাড়াও বেসরকারি খাতকে এগিয়ে নেওয়া, রপ্তানি নির্ভর অর্থনীতি তৈরি, সর্বোচ্চ পরিমাণ রপ্তানি, বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি, বহুমুখী রপ্তানি বাজার সৃষ্টিসহ অনেককিছুই এতে প্রাধান্য পেয়েছে।
৩. লেখক ড. শামসুল আলম :
অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থের রচয়িতা।এর মধ্যে ‘‘পরিবর্তনের বাঁকে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতি’’, ‘‘কৃষি ও কৃষকের বঙ্গবন্ধু’’ , ‘‘রাজনৈতিক অর্থনীতি সম্মুখপানে বাংলাদেশ’’, ‘‘উন্নয়ন অভিযাত্রায় বাংলাদেশ : স্বপ্ন ও বাস্তবতা’’ উল্লেখযোগ্য।এসব গ্রন্থ পাঠে দেখা যায় বিশ্লেষণাত্মক ও তথ্যবহুল প্রবন্ধ রচনায় তিনি বাংলাদেশের অগ্রগতির সামগ্রিক চিত্র অঙ্কনে সিদ্ধহস্ত।দেশ-বিদেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি-প্রযুক্তি তাঁর অনুধ্যানে আত্মপ্রকাশ করেছে সাবলীল গদ্যে।বিশেষত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব থেকে শুরু করে দারিদ্র্য বিমোচন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, মুদ্রাস্ফীতি, গণতন্ত্র, সুশাসন এবং টেকসই উন্নয়নের নানান বিষয়ে অনুপুঙ্খ আলোচনা রয়েছে গ্রন্থসমূহে। এক্ষেত্রে তাঁর অধ্যয়ন ও কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে বলে আমরা মনে করি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব)হিসেবে বিশাল কর্মযজ্ঞ ও পঠন-পাঠনের ছাপ রয়েছে তাঁর লেখনিতে। ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে ড. শামসুল আলম জানিয়েছিলেন, ‘অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় মাধ্যমেই করোনা অভিঘাত মোকাবিলার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। ২০৪১ সালে উন্নত দেশ হওয়ার ভিত্তি পরিকল্পনা হচ্ছে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা।’
ড. শামসুল আলম বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির গতিপ্রকৃতি মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ‘দারিদ্র্য’কে তাঁর কেন্দ্রীয় ভাবনায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট করেছেন বেশ কিছু লেখায়।দারিদ্র্যের কারণ এবং দারিদ্র্য কমানোর উপাইয়ের কথাও তিনি বলেছেন।স্বাধীনতার পর চরম দারিদ্র্য নিয়ে শুরু করা একটি দেশ ধীরে ধীরে দারিদ্র্যমুক্ত দেশে পরিণত হচ্ছে এটাই দেখিয়েছেন তিনি।৯০-এর দশকে যে দারিদ্র্য ১ শতাংশ হারে কমতে থাকে তা ২০০০ সালের পর ২ শতাংশ হারে কমতে থাকে। সমাজের অসন্তোষ, অসন্তুষ্টির সবচেয়ে বড় কারণই দারিদ্র্য। দারিদ্র্য মূলত সমাজ ব্যবস্থার সৃষ্টি। কাজেই দারিদ্র্য নিরসনে সমাজ বা রাষ্ট্রকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষা, আয়-ব্যয়ের বৈষম্য, বাজার সম্প্রসারণ না হওয়াই দারিদ্র্যের মূল কারণ। তাঁর মতে, দরিদ্রদের যদি বাজারে প্রবেশ করানো যায় তাহলে দারিদ্র্য নির্মূলের ম্যাজিক হিসেবে কাজ করবে। দারিদ্র্যের হার সবচেয়ে কম চট্টগ্রামে এবং বেশি বরিশাল বিভাগে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিদেশি রেমিটেন্স, কৃষি বিপ্লব, শিক্ষা, বাজার সম্প্রসারণ, পরিবহণ ব্যবস্থা সবই দারিদ্র্য নির্মূলের নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ক্ষুদ্রঋণ, নারী শিক্ষা, প্রশিক্ষণও এতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। বাজার যত সম্প্রসারিত হবে দারিদ্র্য তত পালাবে। তবে সর্বোপরি দারিদ্র্য দূর করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো শিক্ষা।
দারিদ্র্য নিরসনে পরিকল্পিত সমাজ ব্যবস্থাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন; আর এজন্য একটি পরিকল্পনার কথা বলেছেন ড. শামসুল আলম। সেটি হলো- ‘জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল’। এই কৌশলের মাধ্যমে জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা বিনির্মাণের কথা বলা হয়েছে। যার ফলে আমরা বৈষম্য মোকাবেলা, প্রতিরোধ এবং বৃহত্তর মানব উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃজনে সক্ষম হবো। এতে পাঁচ বছর মেয়াদের পরিকল্পনার কথা বলেছিলেন তিনি এবং তাতে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে মনে করেন। সেগুলো করা হলে হতদরিদ্র, হতাশাগ্রস্ত মানুষের জীবন উন্নয়ন হবে। কর্মজীবী, প্রবীণ মানুষ, শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষ সামাজিক নিরাপত্তা পাবে। নারীদের মাতৃত্বকালীন নিরাপত্তা ও নগর কেন্দ্রিক এবং সমাজবিচ্ছিন্ন মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যকর হবে। আর এগুলো সরকারিভাবে করা হলে বেশি কার্যকর হওয়ার কথাই বলেছেন ড. শামসুল আলম।
তাঁর মতে, দরিদ্র দেশের প্রথম লক্ষ হলো দরিদ্রতাকে দূর করা। আর এজন্য প্রয়োজন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন। শেখ হাসিনা সরকার দারিদ্র্যকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে অনেক সফলতা পেয়েছে এবং দারিদ্র্যকে দূর করতে পেরেছে। লেখক ড. শামসুল আলম দেখিয়েছেন, ১৯৯১ সালে যেখানে দারিদ্র্যের হার ছিল ৫৬.৭ শতাংশ সেখানে ২০১৭ সালে তা হ্রাস পেয়ে ২২.৩ শতাংশ হয়েছে। এই দারিদ্র্য দূর করার জন্য সরকার ‘রূপকল্প-২০২১’-কে সামনে রেখে কাজ করেছিল। এবং এটিকে এভাবে ভাগ করা হয় ২০১১-১৫, ২০১৬-২০ এবং ২০২১-২৫। শেখ হাসিনা সরকার ২০১৩ সালের জুনে বাংলাদেশ জাতিসংঘে খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কাছ থেকে ‘ডিপ্লোমা অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করে। এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে শেখ হাসিনা ‘সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড’পেয়েছেন।কারণ দারিদ্র্যসীমা ২২ শতাংশের নিচে আনতে সক্ষম হন তিনি। চ্যালেঞ্জ নিয়ে এদেশের বর্তমান সরকার কাজ করায় বাজেটের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৫-২০০৬ সালে যা ছিল ৬১ হাজার ৫৭ কোটি টাকা, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৬ লাখ তিন হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক পাঁচ শতাংশ। পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে তিন লাখ ৭৮ হাজার ৩৫৭ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকা।অন্যদিকে অবকাঠামো উন্নয়নের ফলে মানুষের মজুরি বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৯-১০ কেজি চাল কিনতে পারেন। কিন্তু মানুষ আগে মাঝে মাঝে না খেয়েও দিন কাটাতো। এসডিজি অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে অতিদরিদ্র্যের হার ৩ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে সরকার। এগুলোতে সফলতা পেলে বাংলাদেশ একটি সফল দেশে পরিণত হবে বলে মনে করেন ড. শামসুল আলম।
ড. শামসুল আলমের রচনায় উন্নয়ন অভিযাত্রার সামগ্রিক রূপ দৃশ্যমান। স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মই হয়েছিল একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ গড়ার প্রত্যাশা নিয়ে। আর এই স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। সেই সোনার বাংলাদেশ গড়তে হলে কী কী করতে হবে এবং কতটা সম্ভাবনা আছে সেই কথাই তুলে ধরেছেন লেখক। এবং কতটুকু সফলতা পেয়েছে বাংলাদেশ ও আরো কতটুকু পাওয়া সম্ভব এবং তার জন্য কী কী উপায় আছে সেই বিষয়গুলো দেখাতে চেয়েছেন তিনি। তাঁর মতে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির জন্য দরকার সমন্বিত পরিকল্পনা। নগরের সঙ্গে গ্রামের তফাত দূর করা গেলে, কৃষিক্ষেত্রে উন্নত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা গেলে শুধু কৃষি নয় শিল্পও ধারাবাহিকভাবে উন্নত হবে। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। যেমন রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ এবং এসডিজি ২০৩০ বাস্তবায়ন। এগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে বাংলাদেশ স্বপ্নের সেই উচ্চস্থানে পৌঁছাতে পারবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে, মৎস্য সম্পদ উৎপাদনে, চাল উৎপাদনে বিশ্বের প্রথম সারির অবস্থানে আছে।লেখনির মাধ্যমে ড. শামসুল আলম আরো দেখাতে চেয়েছেন যে, ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে যে ‘ডেল্টা প্ল্যান’ গ্রহণ করেছে তা যদি সফল হয় তাহলে এদেশ উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্নের সিঁড়িতে পৌঁছাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
২০১৮ সালে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘উন্নত দেশের পথে হাঁটতে হলে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হবে। সেক্ষেত্রে এককথায় বলা যায়, ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ‘ডেল্টা প্ল্যান’ বাস্তবায়ন অপরিহার্য। তাছাড়া প্রকল্পটির মূল প্রতিপাদ্য হলো জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাওয়ানো। কারণ এরই মধ্যে ভূমিতে ক্ষয় হচ্ছে ব্যাপক। নদী ভাঙনের ফলে প্রতিবছর ৫০ থেকে ৬০ হাজার পরিবার গৃহহীন ও বন্যায় অনেক ফসলহানি হচ্ছে। এর বাইরেও বিশেষ করে শহর অঞ্চলে সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, কঠিন বর্জ্য ও আবর্জনা ব্যবস্থাপনা, কৃষি জমিতে ব্যাপক রাসায়নিক সারের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের মতো চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি উৎপাদক শক্তি না কমিয়ে কিভাবে এসব বিষয় যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনা যেতে পারে- বাংলাদেশের ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় এসব বিষয়ের প্রতিফলন ঘটানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি আমদানি নির্ভর না হয়ে উৎপাদনমুখী হওয়ার কথা বলেছেন এবং উৎপাদিত পণ্যের সম্প্রসারিত বাজার সৃষ্টির কথাও লিখেছেন।সর্বোপরি তিনি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টির উপরে জোর দিয়েছেন। কারণ এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শিক্ষা ও শিক্ষিত জনশক্তি ব্যতীত সম্ভব নয়। শিক্ষার প্রতিটি স্তরে এবং কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসনের কথাও তুলে ধরেছেন প্রবন্ধের পর প্রবন্ধে কিংবা সাক্ষাৎকারে।
যেহেতু ড. শামসুল আলম একজন শিক্ষাবিদ এজন্য কয়েকটি গ্রন্থে তাঁর শিক্ষাভাবনা সম্পর্কিত বেশ কিছু তাৎপর্যবহ মন্তব্য রয়েছে। ডেল্টা প্লান কিংবা ২০৪১ সালে উন্নত দেশ গড়তে দরকার দক্ষ মানবসম্পদ। আর এই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষার মানোন্নয়নের কথা বলেছেন তিনি। তাঁর মতে, সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন প্রয়োজন মানসম্মত ও কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেয়া। প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের সংখ্যা মাত্র মোট শিক্ষিতের ৩ শতাংশ অথচ দক্ষিণ কোরিয়ায় এ হার ৮৬ শতাংশ। শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন দেশে। দেশে প্রচুর গ্র্যাজুয়েট বের হচ্ছে। অথচ সকলের দাবি মানসম্মত শিক্ষা। জার্মানির এক হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপকের সংখ্যা ২১। বাংলাদেশে সেখানে এ সংখ্যা শূন্য। এজন্য তাঁর মতে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যয় বহনের চেয়ে একটি পোর্ট বা বন্দর প্রতিষ্ঠা করা অনেক বেশি প্রয়োজন।
মূলত অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের লেখা আমাদের নতুন প্রজন্মকে পথ দেখাবে, অভিনব সব বিষয়ে চিন্তা করতে শেখাবে। এদেশের অগ্রগতি বুঝতে হলে অধ্যাপক ড. শামসুল আলমের গ্রন্থসমূহ পাঠ করা জরুরি। তাঁর বিশ্লেষণ এদেশের সাফল্যের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য অনুভবের জন্য এবং আমাদের অর্থনীতির তাত্ত্বিক ভিত্তি নির্মাণ করতে খুবই প্রয়োজন।
৪. উপসংহার :
ড. শামসুল আলম কত বড় মাপের একজন পরিকল্পনাবিদ, অর্থনীতিবিদ তা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগে দায়িত্বরত অবস্থায় সেই পরিচয় তিনি দিয়েছেন তাঁর অভূতপূর্ব কর্মপরিকল্পনার মাধ্যমে। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পিছনে এই মানুষটির নিরলস পরিশ্রম সত্যিই দারুণভাবে বাংলাদেশের মানুষকে অনুপ্রাণিত ও আশান্বিত করে তুলেছে। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তিনি দেশকে আরও অনন্য মাত্রায় নিয়ে যাবেন এমন প্রত্যাশা আমাদের সকলের। দেশের সার্বিক উন্নয়নে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল সেটা ড. শামসুল আলমই দেখিয়েছেন।তাঁর একটি মন্তব্য- ‘‘জিইডি একসময় মানুষ ওইভাবে চিনত না। আমি চেষ্টা করেছি এই বিভাগের সঙ্গে দেশের নাম করা অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ, গবেষকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরির। দেশের উন্নয়নে বাস্তবভিত্তিক ও কার্যকর পরিকল্পনা তৈরির চেষ্টা করেছি। সরকারের নির্বাচনি ইশতেহার অনুযায়ী দ্বিতীয় দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্র (২০০৯-১১) সংশোধন ও পুনর্বিন্যাস করেছি।
পরবর্তী সময়ে সেটি ‘দিন বদলের পদক্ষেপ’ ২০১১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয়েছে। রূপকল্প ২০২১-এর আলোকে বাংলাদেশের প্রথম দীর্ঘমেয়াদি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ‘রূপকল্প ২০১০-২০২১’ ছাড়াও দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) আমার তত্ত্বাবধানেই তৈরি হয়েছে। এছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা তৈরি করেছি, যে দু’টি এরই মধ্যে বাস্তবায়িত হয়েছে। এখন চলমান অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাও আমার হাতেই তৈরি। বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র (২০১১-২০২১) ও সামাজিক নিরাপত্তা কৌশলপত্রও (২০১৫-২০২৫) তৈরি করেছি। এছাড়া শতবর্ষী বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ তথা ‘‘ডেল্টা প্ল্যান’’ও প্রণয়ন করেছি। এতগুলো পরিকল্পনা করার সৌভাগ্য ক’জনের হয়? আমি সেই সৌভাগ্যবান। আর সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) ব্যাপক সমৃদ্ধি লাভ করেছে। সরাসরি তত্বাবধানে জিইডি হতে প্রকাশ হয়েছে ১১৩টি বই, যেগুলো একেকটি জ্ঞানের ভাণ্ডার। এছাড়া নিবিড় পরিচর্যায় বেরিয়েছে আরও ২৬টি বই এবং আমার নিজের সম্পাদনায় বেরিয়েছে ৩৫টি বই।"
আর এই কাজের মূল্যায়ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করেছেন অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব প্রদানের মধ্য দিয়ে।আমরা তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য প্রত্যাশা করছি।দেশের মানুষের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে স্বীয় কাজের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিতে পারেন তা বরেণ্য কৃষি অর্থনীতিবিদ, পরিকল্পনাবিদ ও লেখক অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে না দেখলে, না জানলে অজ্ঞাতই থেকে যেত।
লেখক : ইউজিসি পোস্ট ডক ফেলো এবং বিশিষ্ট লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ এবং অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।drmiltonbiswas1971@gmail.com
এইচআর/জিকেএস