জাতীয়

বিধিনিষেধ ‘শিথিলতায়’ বিপদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা

কঠোর লকডাউনের সপ্তম দিনে রাজধানীত বেড়েছে যানবাহন ও মানুষের চলাচল। স্বাভাবিক দিনের মতোই নিত্যপণ্যের বাজারে ভিড়। অনেকের মুখেই মাস্ক নেই, স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে রয়েছে সচেতনতার অভাব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি উপেক্ষা করেই নানা অজুহাতে বাইরে বের হচ্ছেন অনেকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) মিরপুর-১০, ১১ ও ১২ নম্বরের বিভিন্ন এলাকায় এ অবস্থা চোখে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা যাত্রীদের কাছে জানতে চাচ্ছেন কেন বের হয়েছেন, কোথায় যাবেন। সুনির্দিষ্ট কারণ ও প্রমাণ দিতে পারলেই পরিবহনগুলো ছাড়া হচ্ছে চেকপোস্ট থেকে।

পল্লবী জোনের ট্রাফিক এসি ইলিয়াস হোসেন জাগো নিউজকে জানান, সড়কে যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে। ব্যাংকগুলো খোলা থাকায় মানুষ বের হচ্ছেন। এছাড়া অনেকে টিকা ও অসুস্থ থাকায় হাসপাতালে যাচ্ছেন। আমরা নিয়মিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি। সরকারি আইন অমান্য করলেই মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। লকডাউনের এমন শিথিলতায় বড় বিপদ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, করোনা সংক্রমণের তীব্রতর জায়গায় রয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিদিনই রোগী বাড়ছে। ইতোমধ্যে হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ রয়েছে। আইসিইউতে সিট খালি নেই। লকডাউন যদি সঠিকভাবে কার্যকর করে সংক্রমণের লাগাম টানা না যায় তাহলে সামনের দিনগুলো অনেক ভয়াবহ হবে।

Advertisement

হাসপাতালের বেড আর কতটা বাড়ানো যাবে। রোগীর সংখ্যা বাড়তে না দেওয়াটাই করোনা নিয়ন্ত্রণের প্রধান কৌশল। সেজন্য লকডাউন বাস্তবায়ন করা অত্যন্ত জরুরি। লকডাউন বাস্তবায়ন করতে না পারলে আমাদের সামনে প্রচুর মৃত্যু অপেক্ষা করছে।

লকডাউন বাস্তবায়নে শেয়ারবাজার ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শেয়ারবাজার ১০ দিন বন্ধ রাখলে দেশ অচল হয়ে যায় না। শেয়ারবাজার বন্ধ থাকলে ব্যাংকসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকে, তখন সেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের অফিসে যেতে হয় না। অনেকেই সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য করে প্রতিষ্ঠান খুলেছেন তাদের কারণে লকডাউন সফল হচ্ছে না।

বিধিনিষেধ প্রতিপালনে করোনা সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সুপারিশ অগ্রাহ্য হচ্ছে এমন ইঙ্গিত দিয়ে তিনি বলেন, এই রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞানভিত্তিক পদক্ষেপ নিতে হবে সেটা যদি না নেয়া হয় তাহলে করোনা প্রতিরোধে আমরা কেউই রক্ষা পাব না। পরামর্শক কমিটির নির্দেশনা মেনে চলাই সরকারের জন্য সমীচীন হবে।

ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের করোনা ইউনিটের কনসালটেন্ট ডা. মীর ইশরাকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ঈদের আগে রোগীর সংখ্যা কম ছিল। এখন তা আবার বাড়ছে। সামনে আরও রোগী বাড়তে পারে আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি, আমাদের দ্বিগুণ শ্রম দিতে হচ্ছে।

Advertisement

করোনায় চিকিৎসকদের অনেকেই স্বজন হারাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, কিছুদিন আগে আমার খালা মারা গেলেন। আমাদের স্টাফদের অনেকের আত্মীয়স্বজনই অসুস্থ।

তিনি আরও বলেন, এখন যে লকডাউন চলছে তাতে সবাই মাস্ক না পরলে কোনো লাভ হবে না। কিন্তু এখনও অনেকেই মাস্ক পরতে চায় না। মাস্ক ও তিন ফুট দূরত্ব মেইনটেইন করলেই সংক্রমণ অনেকাংশে কমে যাবে।

এই চিকিৎসক বলেন, প্রতিদিনই তিন-চারজন রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হচ্ছে। তাদের হাই ফ্লো অক্সিজেন, ক্যানুলা লাগছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, রোগী আরও বাড়তে পারে। আমাদের চিকিৎসকরাও মানসিকভাবে প্রস্তুত আছেন। হার্ট ফাউন্ডেশনের নিজস্ব অক্সিজেন প্ল্যান্ট আছে। অক্সিজেনের কোনো সমস্যা হবে না।

এসএম/এমএসএম/এমআরএম/এএসএম