বাঘসহ সুন্দরবনে জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বনের ভেতরে পিকনিক (বনভোজন) বন্ধ করার ওপর জোর দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোস্তফা কামাল।
Advertisement
বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস উপলক্ষে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সদ্য যোগ দেয়া সচিব বলেন, ‘যদি এটা (সুন্দরবন) সংরক্ষিত বন হয়, আমরা সংরক্ষণ করি। যদি এটা প্রচেক্টেট হয় আমরা প্রটেকশন দেই। ভেতরে পিকনিকটা বন্ধ করতেই হবে।’
সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার। সচিব বলেন, ‘আজ বিশ্ব বাঘ দিবস। অন্যদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য হচ্ছে করো আর এটা জাতীয় পশু না, আমাদের জাতীয় পশু। রয়েল বেঙ্গল টাইগার এগিয়ে এসে রক্ষা করাটা আমাদের বাড়তি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এটা না থাকলে আমাদের জাতি সত্তার সাথে একটা সমস্যা তৈরি করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘বন আইনে বলা আছে রিজার্ভ এবং প্রটেক্টেট দুটি বনেই অনুমতি ছাড়া কারো প্রবেশের সুযোগ নেই। ঢাকার সদরঘাট থেকে যখন লঞ্চ ছাড়ে, তারা সুন্দরবনে যাবে ফূর্তি করার জন্য। এটা আমাকে খুব ব্যথা দেয়।’
Advertisement
‘আমি সেখানে ঢুকে দেখেছি। আমরা কেন জায়গাটা সংরক্ষণ করতে পারছি না। আমরা যদি এটাকে সংরক্ষিত বন বলি, এটা সংরক্ষণের দায়িত্ব আমাদের।’
বন সচিব বলেন, ‘২০১৫ সালে যখন খুলনার জেলা প্রশাসক ছিলাম, একদিনে ৯টি বাঘ মারা হয়েছে। সেই ৯টি বাঘের চামড়া এসপি অফিসে এনে হাজির করা হয়। সেখানে অনেক কিছু হলো, ক্রসফায়ারের মতো ঘটনা ঘটলো। আমরা সুন্দরবনকে একটা যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে ফেলেছি। বাঘ কীভাবে যুদ্ধক্ষেত্রে বসবাস করবে আর বাচ্চা দেবে, এটা আমরা মাথায় ধরে না!’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সেখানে পিকনিকের আয়োজন করি, ইজারা দিয়ে, বিভিন্ন বাহিনীকে সেখানে পাহারার দায়িত্ব দিয়ে...তারাও তো স্পিডবোট নিয়ে ভেতরে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরে বেড়ায়, সেখানে আওয়াজ হয়। বনের সেই স্থির ও সৌম্য চিত্রটা আর থাকে না।’
‘সবাইকে নিয়ে সুন্দরবনকে এত পাহারা দিচ্ছি, প্রকল্প করে টাওয়ার লাগাচ্ছি নেটওয়ার্কের জন্য। আমি সেখানে দেখেছি নৌবাহিনীর বিল্ডিং, অফিস, রেস্টহাউজ। কিছুদিন আগে পুলিশের ফাঁড়ি হলো। সরকার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠান করেছে বন রক্ষার জন্য ঠিক আছে। এর বাইরে আমাদের সেখানে যাওয়ার দরকার নেই।’
Advertisement
মোস্তফা কামাল বলেন, ‘আমাদের যদি সীমানা থাকে যে, এই সীমানার পর মানুষ আর বনের মধ্যে যাবে না। বাস সেখানে নিশ্চিন্তে থাকবে। করোনাকালে মানুষ যখন গেল না। চিড়িয়াখানায় বিভিন্ন প্রাণীর প্রজনন অনেক বেড়ে গেছে। চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সেগুলো বিক্রি শুরু হরেছে।’
সুন্দরবনে পুরুষ বাঘের সংখ্যা কমে যাচ্ছে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘মানুষ বা শিকারিরা যখন যায় তখন পুরুষ বাঘ তার ফ্যামিলি রক্ষার জন্য বের হয়ে আসে। বের হয়ে খুনের শিকার হয়। সুন্দরবনে পুরুষ বাঘ কমছে- এটা যারা বাঘ নিয়ে কাজ করেন তাদের গবেষণার ফল। পুরুষ বাঘ কমে যাওয়ায় প্রজনন কমে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের ক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি কোন জায়গাটার মানুষ যায় না। আপনারা ম্যাপ তৈরি করুন, সেখানে কেউ যাবে না, কাউকেই যেতে দেয়া হবে না। ইনশাআল্লাহ আমরা পারব।’
পরিবেশ সচিব বলেন, ‘আমাদের যেটুকু আইন আছে, আমরা যদি এটাকে কঠোরভাবে প্রয়োগ করি। আমরা যারা সেখানে দায়িত্বে আছি, আমরা যদি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেই...। আমরা সুন্দরবন এলাকায় পিকনিক বন্ধ করব। পিকনিকের জন্য জায়গা নির্ধারণ করে দেই, এই দ্বীপে পিকনিক হবে অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না।’
আলোচক ও বাঘ বিশেষজ্ঞদের উদ্দেশে সচিব বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের ক্যাপাসিটি নিয়ে ৩ ধরনের তথ্য দিয়েছেন। কেউ ২১৪, কেউ ২৩৬, কেউ ২৫০টি বলেছেন। এই ফিগারটি একটু ঠিক করে নেবেন। কারণ একই অনুষ্ঠানে ২/৩ রকমের তথ্য আসলে মানুষ বিভ্রান্ত হতে পারে। যে আমরা সঠিক তথ্য দিচ্ছি না।’
প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সভায় পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত সচিব ইকবাল আবদুল্লাহ হারুন এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, বন বিভাগের উপ-প্রধান বন সংরক্ষক মো. জাহিদুল কবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোস্তফা ফিরোজ, বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম এবং বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মহসিন হোসেন বক্তব্য দেন। মোস্তফা ফিরোজ ও আবু নাসের মহসিন অনুষ্ঠানে দুটি উপস্থাপনা দেন।
আরএমএম/এমআরএম/জেআইএম